ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রাজধানীতে ভেলায় পারাপার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে ভেলায় পারাপার

ছবি: লেখক

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : দেশব্যাপী যখন চলছে উন্নয়নের মহড়া, রাজধানীতে নির্মিত হচ্ছে একের পর এক ফ্লাইওভার, তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল তখন রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের পাশেই কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ড্রামের ভেলায় খাল পাড়ি দিচ্ছে। এ যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার।

১৮ জানুয়ারি গুলশান লিংক রোড নৌকা ঘাটের পাশে ড্রামের তৈরি ১০-১২টি ভেলা যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান দেখা যায়। কড়াইল বস্তির হাজার হাজার নারী, পুরুষ, শিশু এই ভেলায় প্রতিদিন খাল পাড় হয়। প্রতি ভেলায় যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ১০-১২ জন। যাত্রী প্রতি ভাড়া পাঁচ টাকা। যাত্রী পারাপার চলে ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

কড়াইল বস্তির বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম (৩৬)। তিনি গুলশানে একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চাকরি করেন। জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন গুলশান, বনানী লেক পার হতে হয় তাকে। তিনি জানান, সময় বাঁচাতে তিনি ড্রামের ভেলায় লেক পার হন। কড়াইল বস্তির বউবাজার ঘাট থেকে গুলশান-১ নৌকায় পাঁচ মিনিটের দূরত্ব। কড়াইল বস্তি থেকে বের হওয়ার অন্য পথ থাকলেও ৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে। কড়াইল বউবাজার থেকে বেলতলা ও টিঅ্যান্ডটি কলোনি পার হয়ে গুলশান যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও বেশি। রিকশা ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।


একই কথা বললেন কড়াইল বস্তির মনিরা বেগম (৪০)। তিনি গুলশানে একাধিক বাসায় বুয়ার কাজ করেন। প্রতিদিন তাকে ড্রামের ভেলায় দুই বার লেক পার হতে হয়। কয়েক মাস আগেও বস্তিবাসী লেক পার হতো খেয়া নৌকায় মাত্র দুই টাকা ভাড়া দিয়ে। হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর নিরাপত্তার স্বার্থে গুলশান-বনানী লেকে নৌ-পারাপার বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

কীভাবে উদ্ভব হলো এই ভেলার? খোঁজ নিতেই জানা গেল চমকপ্রদ তথ্য। দুই মাস আগে কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার বাবু (১১) ককসিট দিয়ে তৈরি ভেলায় চড়ে ঘুড়ি উড়াত। একদিন বস্তির এক বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়লে সবার অনুরোধে বাবু তাকে ভেলায় লেক পার করে দেয়। এরপর অনেকেই বাবুর ভেলার আদলে ড্রাম ও ককসিট ব্যবহার করে কয়েকটি ভেলা তৈরি করে। শুরু হয় ভেলায় মানুষ পারাপার।

দুই মাসে ভেলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০টি। বর্তমানে যাত্রী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রতি ভেলায় দুইজন করে প্রায় ৬০ জন মানুষ। ৬০ জনের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। পলাশ (১০) ও সাইফুল (১১) দুই বন্ধু মিলে একটি ড্রামের ভেলায় যাত্রী পারাপার করে। তারা জানায়, ৩টি ড্রাম, কিছু ককসিট ও প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করে ভেলা তৈরি করেছে। এতে তাদের খরচ পড়েছে প্রায় ১ হাজার টাকা। পলাশ জানায়, সে স্থানীয় পাঠশালা নামক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল সময়ে স্কুলে যায়, বাকি সময় ভেলায় যাত্রী পারাপার করে। এতে তার দৈনিক ২০০ টাকা আয় হয়।


অন্যদিকে নৌ-পারাপার বন্ধ থাকায় অনেক মাঝি বেকার হয়ে পড়েছে। তেমনি একজন মনির মাঝি (৩৫)। তিনি জানান, ১৫ বছর ধরে তিনি এই লেকে নৌকা চালান। প্রতিদিন তিনি ২০-২৫ খেপের মাধ্যমে যাত্রী পারাপার করতেন। যাত্রী প্রতি ২ টাকা করে দৈনিক ৩০০ টাকা আয় হতো তার। নৌকা চলাচল বন্ধ হওয়ায় তিনি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। মনির মাঝি এখন নতুন কোনো কাজ করার কথা ভাবছেন।

গুলশান চেকপোস্ট নৌ-ঘাটে ছয় বছর ধরে অস্থায়ী চা দোকান করেন তানিয়া বেগম (২৭)। যেসব যাত্রী নৌ-ঘাট দিয়ে লেক পার হন, মূলত তারাই ক্রেতা। তিনি জানান, নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় তার বিক্রি অনেক কমে গেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়