ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

সহপাঠীদের ‘দাদি’ তিনি

তানভীর হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪১, ১৭ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহপাঠীদের ‘দাদি’ তিনি

রুসিয়া বেগমের বয়স ৬৭ বছর। পড়েন চতুর্থ শ্রেণিতে। যথেষ্ট বয়স হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান তিনি। হতে চান উচ্চ শিক্ষিত।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার শিশুকলী বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অন‌্য শিক্ষার্থীর মতোই নিয়মিত ক্লাস করছেন রুসিয়া বেগম। পড়ালেখা নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও আছে তার। ক্লাস-পরীক্ষায় কখনো এগিয়ে যাচ্ছেন, কখনো একটু পিছিয়ে পড়ছেন। গত বছর তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় রুসিয়াকে টপকে প্রথম হয়েছে ১০ বছর বয়সের জান্নাতুল ফেরদৌস। রুসিয়া হয়েছেন দ্বিতীয়। এর আগের বছর রুসিয়া হয়েছিলেন প্রথম।

রুসিয়া বেগম আশাবাদী, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় তিনি ভালো ফল করবেন। সে লক্ষ‌্যে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ছোটবেলায় গ্রামে স্কুল না থাকায় পড়ালেখা করতে পারেননি রুসিয়া বেগম। কিছু পড়তে-লিখতে না পারার আক্ষেপ ছিল তার। তাই বৃদ্ধ বয়সে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রুসিয়া বেগম ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আবুল হোসেন মালিতার স্ত্রী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে গোলাম মোস্তফার দুই মেয়ে ফারহানা মোস্তফা দশম শ্রেণিতে এবং ফারজানা মোস্তফা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

সরেজমিনে শিশুকলী বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস করছেন রুসিয়া বেগম। সামনের সারির বেঞ্চে বসেছেন তিনি। তার পাশে জান্নাতুল ফেরদৌস ও রিমি রহমান। ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন। ক্লাসে ঢুকতেই অন্য সব শিক্ষার্থীর মতো রুসিয়াও দাঁড়িয়ে সালাম জানান। এরপর সবার সঙ্গে বসে পড়েন।

শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন জানান, রুসিয়া বেগমের বয়স বেশি হলেও তিনি অন্য শিশুদের মতোই আচরণ করেন। শিক্ষকদেরকে স্যার বলে সম্বোধন করেন।

রুসিয়া বেগম জানান, কুষ্টিয়ার বৃত্তিপাড়া এলাকার ভগবাননগর গ্রামের তাহাজ উদ্দিনের মেয়ে তিনি। ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। সে সময়ে মেয়েরা বেশি দূরে গিয়ে পড়ালেখা করত না। তাদের গ্রামে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। এ কারণে তিনি স্কুলে যেতে পারেননি।

তিনি আরো জানান, স্বামী চাকরি করেন। তাদের সংসারে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি আছে। স্বামীও কিছুটা পড়ালেখা জানেন। কিন্তু তিনি কিছু পড়তে-লিখতে পারেন না। এ কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, পড়ালেখা শিখবেন। নিরক্ষর অবস্থায় মরতে চান না।

রুসিয়া বেগম জানান, ২০১৫ সালে তিনি শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হন। এক বছর পর প্রথম শ্রেণি। এভাবে নিয়মিত ক্লাস করে বছর শেষে পরীক্ষা দিয়ে পরে ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সব ক্লাসে তার রোল নম্বর ছিল ১। এবছর হয়েছে ২।

তিনি জানান, নিয়মিত ক্লাস করেন, বাড়িতেও ঠিকমতো পড়ালেখা করেন। এভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। এবার তিনি প্রথম হতে পারেননি। তবে আগামীতে আরো ভালো ফল করবেন বলে আশাবাদী।

শিশুকলী বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, রুসিয়া তার বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী। এই বয়সের একজন ছাত্রী পেয়ে তারা খুশি।

রুসিয়া বেগমের সহপাঠী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, সহপাঠী হলেও বয়সের কারণে তারা রুসিয়া বেগকে দাদি বলে ডাকেন। এবার তিনি দাদিকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছেন।

আরেক ছাত্রী রিমি রহমান জানায়, দাদি তাদের অনেক ভালোবাসেন। তারাও দাদিকে ভালোবাসেন।



ঝিনাইদহ/তানভীর হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়