ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসের বিস্ময়কর তথ্য

মাহমুদুল হাসান আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৯ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হোয়াইট হাউসের বিস্ময়কর তথ্য

মাহমুদুল হাসান আসিফ : বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রেসিডেন্টের বাসভবন হিসেবে ‘হোয়াইট হাউস’ সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই অন্যরকম আগ্রহের বিষয়। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায় হোয়াইট হাউস বিভিন্ন সময়ে ‘প্রেসিডেন্ট প্যালেস’, ‘এক্সিকিউটিভ ম্যানসন’, ‘প্রেসিডেন্ট হাউস’ এবং অন্যান্য বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল।

আজ থেকে প্রায় ২২০ বছরেরও বেশ আগে হোয়াইট হাউস নির্মাণ করা হয়েছিল এবং তার আগে পর্যন্ত ‘১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ’ ছিল বিশ্বের অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থাপনা। হোয়াইট হাউস সম্পর্কিত বিভিন্ন বিস্ময়কর তথ্য নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* হোয়াইট হাউসে থাকা হয়নি জর্জ ওয়াশিংটনের
১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার জাতির পিতা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন হোয়াইট হাউস নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করেন এবং হোয়াইট হাউস তৈরির চূড়ান্ত নকশার অনুমোদন দেন। ১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং হোয়াইট হাউসের নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের মেয়াদ ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে শেষ হয় এবং তিনি ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস’ নামে খ্যাত হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের থাকার সৌভাগ্য হয়নি কখনো। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস তার স্ত্রী অ্যাবিগ্যালিকে নিয়ে অসম্পূর্ণ হোয়াইট হাউসে চলে আসেন এবং তাঁরাই আমেরিকান জাতির প্রথম দম্পতি যারা হোয়াইট হাউসে বসবাস করেছেন।

* আপনার ধারণার চেয়ে বড় হোয়াইট হাউস
বর্তমানের বিশাল সব ভবনের তুলনায় হোয়াটস হাউস ছোট হলেও, আমেরিকান গৃহযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল আমেরিকার সবচেয়ে বড় ভবন। ছয় স্তরে সাজানো হোয়াইট হাউসে রয়েছে ১৩২টি রুম, ৩৫টি বাথরুম। আরো রয়েছে ৪১২টি দরজা, ১৪৭টি জানালা, ২৮টি ফায়ারপ্লেস, ৮টি বৃহদাকার সিঁড়ি এবং ৩টি লিফট। ভবনটির দৈর্ঘ্য ১৬৮ ফুট এবং প্রস্থ ৮৫ ফুট (প্রবেশ দ্বারের বারান্দা ছাড়াই)। ভবনটি দক্ষিণ দিকে লম্বায় ৭০ ফুট এবং উত্তরদিকে ৬০ ফুট ৪ ইঞ্চি। হোয়াইট হাউস এবং এর সংশ্লিষ্ট অংশ মোট ১৮ একর জমির উপর অবস্থিত।

* ব্রিটিশ সৈন্যদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল হোয়াইট হাউস
১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা-ব্রিটেন যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং আমেরিকান সৈন্যরা ব্রিটেনের ইয়র্ক প্রদেশের ওন্টারিওর বিভিন্ন দালান-কোঠায় অগ্নিসংযোগ করে। এর প্রতিশোধস্বরূপ ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্যরা হোয়াইট হাউস আক্রমণ করে এবং তাতে অগ্নিসংযোগ করে। ফলে হোয়াইট হাউসের ভেতরের অংশ এবং ছাদ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেমস মেডিসন হোয়াইট হাউসের প্রধান নকশাকারক জেমস হোবানকে জরুরিভিত্তিতে ভবন পুননির্মাণের নির্দেশ দেন। তবে মেডিসন এবং তার স্ত্রী হোয়াইট হাউসে আর ফিরতে পারেননি। পুননির্মাণের যখন শেষ হয় তখন নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেমস মনরো ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে হোয়াইস হাউসে আসেন।

* ১৯০১ সালের আগে ভবনটির আনুষ্ঠানিক কোনো নাম ছিল না
১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিখ্যাত এই ভবনটি আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের সরকারি বাসভবন হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপ্রতি থিওডোর রুজভেল্ট সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর মূলত ভবনটি সরকারিভাবে ‘হোয়াইট হাউস’ নামকরণ করা হয়। এর আগে ভবনটি ‘প্রেসিডেন্ট হাউস’ বা ‘দ্য প্রেসিডেন্ট ম্যানসন’ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিছু তত্ত্ববিদদের মতে, ১৮১৪ সালে ভবনটিতে আগুন লাগার পর সেটি সাদা রঙ করা হয় এবং সেখান থেকেই ‘হোয়াইট হাউস’ নামের উৎপত্তি। তবে এই কাহিনি ভিত্তিহীন বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।

* হোয়াইট হাউসের সামনে টানা ২ বছর আন্দোলন চলেছিল
প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৯১৭ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে একদল নারী হোয়াইট হাউসের সামনে আন্দোলন শুরু করেন। নারীদের ওই দলটি ‘দ্য সাইলেন্ট সেন্টিনেল’ নামে পরিচিত ছিল। দলটি জাতীয় নারীবাদী দলের সমর্থক ছিল এবং নারীদের ভোটাধিকার না দেওয়া পর্যন্ত তারা হোয়াইট হাউসের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যান। তাঁরা টানা আড়াই বছর, সপ্তাহে ছয় দিন হোয়াইট হাউসের সামনে ক্যাম্প স্থাপন করে আন্দোলন বহাল রাখেন। আন্দোলন চলাকালীন তাঁরা বিভিন্ন প্রকার হয়রানি, এমনকি মারধোরের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যান। অবশেষে ১৯১৯ সালের ৪ জুন আমেরিকান সংবিধানের ১৯তম সংশোধনীতে নারীদের ভোটাধিকারের কথা উল্লেখ করা হলে সেই আন্দোলন সমাপ্ত হয়।

* ভুতুড়ে বলে গুজব রয়েছে হোয়াইট হাউসের
ঐতিহাসিক এই ভবনটির মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি, কর্মকর্তা এবং অতিথিরা ভূতের দেখা পেয়েছেন বলে প্রচলিত রয়েছে। পূর্বদিকের কক্ষে মৃত ফার্স্ট লেডি অ্যাবিগ্যালি অ্যাডামসকে যেতে দেখা গেছে, যেখানে তিনি তাঁর কাপড়চোপড় রাখতেন। তাছাড়া ফার্স্ট লেডি ম্যারি টোড লিংকন তাঁর বন্ধুদের কাছে গল্প করতেন যে, তিনি মৃত অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে প্রচন্ড শব্দে দাপাদাপি এবং চিৎকার করতে শুনেছেন। অবশ্য এসব কাহিনির মধ্যে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের আত্মা হোয়াইট হাউসের ভেতর ঘুরে বেড়ানোর কথা বেশি শোনা যায়। প্রেসিডেন্ট কুলিজ, জনসন এবং রুজভেল্টের সময়কালের ফার্স্ট লেডিরা একাধিকবার লিংকনের আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। এমনকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন হোয়াইট হাউসে ছিলেন, তিনি তখন আব্রাহাম লিংকনের আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুলাই ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়