ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার ৬ কারণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার ৬ কারণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথব্রাশের লোমে মাড়ি থেকে বের হওয়া রক্ত লাগলে অথবা দাঁত পরিষ্কার করার সময় মাড়ির গর্ত বা দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল থেকে রক্ত বের হয়ে বেসিন রঞ্জিত হলে অবহেলা করা মোটেই উচিত নয়।

কানাডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানিটোবার ডেন্টিস্ট ডা. পিটার ডোইগের মতে, ‘মাঝে মাঝে শক্ত খাবারের সঙ্গে মাড়ির সংঘর্ষ লেগে রক্তপাত হতে পারে, কিন্তু রক্ত যদি নিয়মিত ব্রাশে বা ডেন্টাল ফ্লসে দেখা যায় তাহলে মারাত্মক কোনো অবস্থাকে দায়ী করা যায়।

রিডার্স ডাইজেস্টের প্রতিবেদন অনুসারে জেনে নিন, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাতের ৬টি কারণ ও কিভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করা যায়।

জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ

দাঁতের প্লাক(হলুদ বর্ণের আবরণ) এবং ক্যাভিটি (দাঁতের ক্ষয়) দাঁতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এর ফলে মাড়িতে প্রদাহ হয় যাকে বলে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ। জিনজিভাইটিস হলে ব্যথা অনুভূত হয় না এবং বলতে গেলে উপসর্গমুক্ত। টুথব্রাশ বা ডেন্টাল ফ্লসে রক্তের উপস্থিতি না দেখা পর্যন্ত এ রোগের প্রাদুর্ভাব বোঝা যায় না। ডা. ডোইগ বলেন, জিনজিভাইটিস একটি উপেক্ষিত রোগ, কারণ এটি বেদনাদায়ক নয়। এটি ‘চোখের আড়াল তো মনের আড়াল’ প্রকৃতির রোগ। জিনজিভাইটিসের চিকিৎসা করা না হলে এটি পেরিওডোন্টাল ডিজিজে (দাঁতের প্রদাহ) রূপ নেয় যাকে মুখগহবরের সংকটপূর্ণ অবস্থা বলা যায়, যা মাড়ির টিস্যু ধ্বংস ও মাড়ি থেকে দাঁত আলগা হওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। সুখবর এই যে, জিনজিভাইটিস সারিয়ে তোলা যায়। জিনজিভাইটিস ১০০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। নির্ভুল মুখগহবর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, নিয়মিত ব্রাশিং ও ফ্লসিং করে, দাঁত থেকে প্লাক দূর করে এবং নিয়মিত ডেন্টিস্টের সেবা নিয়ে মাড়ির রক্তাক্ততা ও জিনজিভাইটিস দূর করা যায়।

ধূমপান

ধূমপায়ীরা মাড়িতে রক্তপাতের বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকে। ডা. ডোইগ বলেন, বিভিন্ন কারণে ধূমপান পেরিওডোন্টাল রোগ বাড়িয়ে তোলে। ধূমপানে ক্ষতিকর বিষ দাঁতের সঙ্গে লেগে থাকে যা মুখগহবর স্বাস্থ্যবিধি মেনেও দূর করা কঠিন। এসব অস্বাস্থ্যকর উপাদান মাড়ির অবস্থাকে খারাপ করে তোলে এবং রক্তপাত ঘটায়। ধূমপায়ীদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন হয় যার ফলে ইনফেকশন হয় এবং সঠিক আরোগ্য লাভ ও রক্তে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা হয়। এসব বিষয় মাড়ির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপান ত্যাগ করুন। মাড়ি আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।

খাদ্যাভ্যাস

ডা. ডোইগের মতে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সুষম খাবার শুধু সুস্থ শরীরের চাবিকাঠি নয়, সুস্থ মুখেরও বটে। তথাকথিত মিরাকল খাবারের কথা ভুলে যান যা মাড়িকে সুস্থ ও মুখগহবরের রোগকে প্রতিরোধ করে। এমন খাবারের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র মিরাকল হচ্ছে টুথব্রাশ। তিনি আরো বলেন, মুখগহবরের স্বাস্থ্যবিধি ও সার্বিক স্বাস্থ্যের সমন্বয় হচ্ছে সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। তাই সুষম খাবার গ্রহণে যেন ভুল না হয়।

হরমোনগত পরিবর্তন

মেয়েদের মাসিকের সময় ও গর্ভাবস্থায় হরমোনগত পরিবর্তনের ফলে মাড়িতে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ডা. ডোইগ বলেন, মেয়েরা মাসিক চক্রের কারণে নিয়মিত হরমোনগত জিনজিভাইটিস অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। তিনি আরো বলেন, গর্ভাবস্থায় হরমোনগত পরিবর্তনের ফলে জিনজিভাইটিস বা পেরিওডেন্টিটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপনি যদি মনে করেন আপনার হরমোন আপনার মাড়ি থেকে রক্ত ঝরাচ্ছে তাহলে ডেন্টিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং মুখগহবরের স্বাস্থ্যসূচি মেনে চলুন।

মুখগহবরের ভুল স্বাস্থ্যবিধির অভ্যাস

জোরে দাঁত ব্রাশ করা, দাঁতের সবখানে ব্রাশ না করা, ফ্লস করতে ভুলে যাওয়া এবং মুখগহবরের স্বাস্থ্যবিধি নিয়মিত ও সতর্কতার সঙ্গে মেনে না চলা- এসব কারণ মাড়ির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ডা. ডোইগ বলেন, মাড়ি হচ্ছে পুরোপুরি নরম টিস্যু। যদি তাতে ব্রাশের শক্ত লোম দিয়ে আঘাত করেন তাহলে তা ফুলে যেতে পারে এবং রক্ত ঝরতে পারে। নরম লোমের টুথব্রাশ দিয়ে মৃদুভাবে মাড়ি ও দাঁত পরিষ্কার করা যায়। যদি আপনি দাঁত ব্রাশ করতে ভুলে যান তাহলে টুথব্রাশ যেমনই হোক ক্ষতি এড়াতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন, জিনজিভাইটিস হওয়ার এক নম্বর কারণ হচ্ছে দাঁতে প্লাকের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। আমার পরামর্শ যে, লোকেরা যেন দিনে অন্তত দুবার (সকালে ও ঘুমানোর আগে) দাঁত ব্রাশ ও প্রতিদিন ফ্লস করে। এ অভ্যাস দাঁতের প্লাক ও মুখের ভিতরে বা দাঁতে লেগে থাকা খাবার বা খাদ্যকণা দূর করে। ডা. ডোইগ ব্যাখ্যা করেন, প্লাকে থাকা ব্যাকটেরিয়া দাঁতে লেগে থাকা খাদ্য বা খাদ্যকণা ব্যবহার করে অ্যাসিড উৎপন্ন করে যা মাড়ি এবং দাঁত উভয়ের ক্ষতি করতে পারে।

কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া

আপনার ডেন্টিস্ট যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করেন নতুন কোনো ওষুধ সেবন করছেন কিনা- তাহলে হয়তো আপনি বিস্মিত হন। কিছু প্রেসক্রিপশনভুক্ত ওষুধ মাড়িতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। ডা. ডোইগ বলেন, অ্যান্টিকনভালস্যান্টস (খিঁচুনি বা মৃগীরোগ প্রতিরোধী) ওষুধ, যেমন- ডিল্যান্টিন, মাড়িকে অস্বাভাবিক ফুলিয়ে তুলতে পারে। কিছু রক্তচাপের ওষুধ এবং ইমিউনোসাপ্রেস্যান্টস (অটোইমিউন প্রতিরোধী) মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে ও রক্তপাত ঘটায়। ডা. ডোইগের মতে, সম্ভবত ৪০০ এর বেশি ওষুধ আছে, যেমন- অ্যান্টিহিস্টামিনস (এলার্জি নিয়ন্ত্রক), সিডাটিভস (নিদ্রাকারক বা প্রশান্তিদায়ক), অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস (বিষণ্নতা উপশমকারক) এবং অ্যান্টিসাইকোটিক, যা মুখের লালাপ্রবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মুখের ভিতর আটকে থাকা খাদ্য বা খাদ্যকণাকে ধুয়ে ফেলতে এবং ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক উৎপন্ন ক্ষতিকর অ্যাসিড প্রতিরোধে লালার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার লালাপ্রবাহ যদি বিঘ্নিত হয় তাহলে মুখগহবরের নির্ভুল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন যাতে লালার উপকারী ফল থেকে মুখকে বঞ্চিত হতে না হয়।

পড়ুন :



 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ আগস্ট ২০১৭/ইকবাল/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়