ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিপদের মুখে ত্রিপুরার বাঙালি সমাজ

আগরতলা থেকে অভিজিৎ ঘোষ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিপদের মুখে ত্রিপুরার বাঙালি সমাজ

মহাসঙ্কটের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের প্রান্তিক রাজ্য ত্রিপুরা। এই রাজ্যে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ রাজ্যে বাঙালি হিন্দু ৬০ শতাংশ, বাঙালি মুসলিম ৮ শতাংশ এবং আদিবাসী ৩২ শতাংশ। তাছাড়া ভৌগলিক দিক থেকে রাজ্যের তিনদিকে ঘেরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

ভারতবর্ষের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ৬৮ শতাংশ বাঙালির ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির যাঁতাকলে অসহায় ত্রিপুরার বাঙালিরা।

গত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিলের ছাড়পত্র দিয়েছে। আগামী সোমবার বিল উঠবে লোকসভায় এবং পরদিন উঠবে রাজ্যসভায়।

লোকসভায় সহজে বিল পাশ হলেও রাজ্যসভায় বিল পাশ করতে মোদি সরকার কিছুটা বেগ পেতে পারে।

নাগরিকত্ব বিল অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল থেকে আসা অমুসলিমরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। যার ভিত্তি বছর ধরা হয়েছে ২০১৪-র ডিসেম্বর মাস। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে আসা অমুসলিমরা ভারতের নাগরিক হতে পারবেন। ফলে প্রচুর বাঙালি মুসলিম হারাবে তাদের নাগরিক অধিকার।

দিল্লির খবর অনুযায়ী, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর গোটা দেশে চালু হবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ বা এনআরসি। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল থেকে বাদ থাকবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। কারণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্য সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশে কার্যকর হবে না নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এর ফলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতে থাকা হিন্দু বাঙালিদেরও থাকবে না কোনো রক্ষাকবচ।

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ঘোষণা দিয়েছেন,  ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর ধরে করা হবে এনআরসি। তালিকার প্রথম দুটি নাম ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ। দুই রাজ্যেই হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিদের টার্গেট করছে ভারতের হিন্দি বলয়। এনআরসি চালু হলে ত্রিপুরায় থাকা হিন্দু ও মুসলিম বাঙালিদের গৃহহীন, রাষ্ট্রহীন হওয়া নিশ্চিত। ডিটেনশন ক্যাম্প হবে তাদের আশ্রয় স্থল। কেননা ১৯৫১-সালে ত্রিপুরায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আদিবাসীরা। পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা বাঙালিরা এই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

ভারতবর্ষের সংবিধান অনুযায়ী, অবিভক্ত ভারতের মা-বাবাদের সন্তান ভারতীয় হবে। তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদিও কেন্দ্রের মোদি সরকার তা মানতে রাজি নয়। তারা সংবিধানকে মান্যতা না দিয়েই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও এনআরসি'র ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছে।

ত্রিপুরাতে একদিকে আদিবাসীরা বিরোধিতা করছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের। অপর দিকে বাঙালিরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে। বাঙালি সমাজ চাইছে গোটা লাগু হোক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। যদি ষষ্ঠ তফসিল অনুযায়ী এডিসি এলাকাকে বাদ রাখা হয় তাহলেও চরম ক্ষতি হবে বাঙালিদের। কারণ রাজ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকা ত্রিপুরা আদিবাসী স্বশাসিত জেলা পরিষদের আওতাধীন।

 

ত্রিপুরা/ অভিজিৎ ঘোষ/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়