ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভিসুভিয়াসের পাদদেশে প্রাচীন শহর পম্পেই

ইসমাইল হোসেন স্বপন, ইতালি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১২ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভিসুভিয়াসের পাদদেশে প্রাচীন শহর পম্পেই

হাজার বছরের পুরনো শহর পম্পেই। ইতালির নেপলসের (নাপোলি) আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস পর্বতের পাদদেশেই পম্পেই নামে ছোট্ট এ শহর অবস্থিত।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গিয়েছিলাম ইতালির নেপলসে। নেপলস থেকে ট্রেন দিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পম্পেই পৌঁছানো যায়।

পম্পেই স্টেশনে নামার সাথে সাথেই থেকেই প্রাচীন পম্পেই-এর দিকে যাবার দিক নির্দেশনা চোখে পড়ল। মিনিট দুয়েক হাঁটলেই তার একাধিক প্রধান ফটকগুলির একটা দেখা যায়।

সেখান দিয়ে শত শত পর্যটকদের সাথে শহরপ্রাচীরের ভিতরে ঢুকতেই যেন দুইটি হাজার বছর পিছিয়ে গেলাম এক নিমিষে। সারি সারি স্তম্ভ, পলেস্তারা খসে পড়া দেয়াল, লম্বা পাথরের রাস্তা চলে গেছে শহরের আরেক মাথা পর্যন্ত।

প্রথমেই ফোরাম নামে ফাঁকা জায়গাটি ঘুরে দেখলাম। এখানেই নগরের সব বড় বড় অনুষ্ঠান হতো। ফোরামের চারদিকে বিভিন্ন ধরনের ভবন। অনেকগুলো স্মৃতিস্তম্ভও আছে ফোরাম স্কয়ারে।

শহরের দেবরাজ জুপিটারের মন্দিরের পরে অ্যাপোলোর মন্দির। অনেকটা একই ধাঁচের সবখানেই সারিসারি স্তম্ভ, ধসে পড়া ছাদ, ফাঁকা সবুজ জমি।

এর মধ্যে হাউস অফ দ্য ফন নামের বিখ্যাত বাড়িটির মাঝে ঢুকতেই উদ্যানের সাথে লাগানো ছোট একটি ঝর্ণার সামনে ফনের ভাস্কর্য দেখা গেল। যদিও এককালে কোন ধনী ব্যক্তির বিশাল বাড়িটির মূল আকর্ষণ একটি অসাধারণ  মোজাইকের কাজ যেখানে সম্রাট আলেকজান্ডারের সাথে ইরানের সম্রাট দারিউসের যুদ্ধ দেখানো হয়েছে।

তেমনই হাউজ অফ দ্য ট্র্যাজিক পয়েট বাড়ির প্রবেশ পথে মোজাইকে খোদাই করা ভীষণ দর্শন কুকুর চোখে পড়ল। ভেতরে ছিল গ্রিক পুরাণের নানা চিত্র। কিন্তু নামটা কেন হাউজ অফ দ্য ট্র্যাজিক পয়েট তার অবশ্য সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

চমৎকার রাস্তাগুলো বৃষ্টির জল নেমে যাবার জন্য সামান্য ঢালু করে তৈরি, সাথে ফুটপাতগুলোও। তবে পম্পেই নগরীতে টো টো করে ঘুরে মনে হল সবচেয়ে বেশি দেখলাম রান্নার ঘর। বেশ চমৎকার মোজাইকের কাজ করা। রান্নার পাত্র রাখার জন্য গোল গোল ছিদ্র। এমন অনেকবারই চোখে পড়ল। আসলে সরগরম এলাকাতে এমনই হবার কথা।

কিছু দোকানের সামনে তাদের ভাষায় লেখা আছে যে সেখানে কী মিলত, কোথায় বা চিহ্ন দিয়ে বোঝানো আছে যে সেটা কুমোরের দোকান, নাকি কামারের, নাকি শুঁড়িখানা।

দুঃখজনকভাবে পম্পেই নগরীর সবচেয়ে চমৎকারভাবে সংরক্ষিত চিত্রকর্মগুলো নেপলস পুরাতত্ত্ব জাদুঘরে আছে। এখানে অধিবাসী মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মৃতদেহগুলোর অধিকাংশই একই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।

পম্পেই ইট-পাথরের মৃত নগরী হলেও সেখানে কিছু সবুজের ছোঁয়া আছে। বিশেষ করে প্রাচীন আবহ ফিরিয়ে আনা হয়েছে উদ্যানগুলোতে। এছাড়া বড় গৃহগুলোর ভিতরের এক চিলতে বাগান তো আছেই।

পম্পেই নগরীর জনসংখ্যা দশ হাজার হলেও ধারণা করা হয়, ভিসুভিয়াসের অগ্নুপাতের সময় এখানে হাজার বিশেক লোক জমায়েত হয়েছিল। কারণ রোমানদের কাছে পম্পেই অবকাশকেন্দ্র হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। গড়ে উঠেছিল রোমান অ্যারেনা। গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ভাষণ সবই চলত এখানে।


ইতালি/স্বপন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়