ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রসঙ্গ করোনাভাইরাস এবং জাপান

পি. আর. প্ল্যাসিড || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৯, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রসঙ্গ করোনাভাইরাস এবং জাপান

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন করোনাভাইরাস আক্রান্তদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, জাপানের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয়, কোথাও কিছু হয়নি।  এ বছরের শুরুতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়ে  জাপানের কানাগাওয়া প্রিফেকচারে।  দিনটি ছিল ১৫ জানুয়ারি ২০২০।

এরপর পারো ৫ জন ধরা পড়ে যারা চায়না সফর করে দেশে এসে স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছিলেন।  কিন্তু ৬ নম্বর রোগী থেকে জাপানে এই ভাইরাস বিস্তার ঘটার মতো ঘটনা ঘটে। প্রথম দিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার এতটা বিস্তার ঘটেনি বলে সরকারিভাবেও তেমন কোন ভূমিকা নেওয়া হয়নি। এরপর পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা ও সার্বিক ভয়াবহতার কথা মিডিয়াতে প্রচার হবার পরেও জাপানের কোথাও লকডাউনের কথা বলা হয়নি।

যতটা জানি, জাপান সরকারের কোনও একক ক্ষমতা নেই যে চাইলেই কোনও এলাকায় লকডাউন করতে পারে। তাই ধীরে চলার মতো  পদক্ষেপ নিয়ে করোনাভাইরাস বিষয়টি অবজারবেশন করছিল জাপান সরকার। সরকারের এমন পদক্ষেপের কারণ মনে করা হয়, এ বছর টোকিওতে অলিম্পিক হবার কথা ছিল।  এই করোনাভাইরাসের কারণে অলিম্পিক ব্যাঘাত ঘটবে মনে করে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন।  সারা পৃথিবীতে এই করোনাভাইরাস মহামারী রূপ নেবার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় আগামী বছর পর্যন্ত অলিম্পিক স্থগিত রাখা হবে। এই ঘোষণার আগে জাপানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তেমন ছিল না। যেই না অলিম্পিকের তারিখ পিছানোর কথা ঘোষণা দেওয়া হলো এরপর হঠাৎ করেই যেন এর সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করলো। এতে করে সাধারণ জনগণ ধরেই নেয় এটি ইচ্ছে করে চাপিয়ে রাখা হয়েছিল।

জাপানের জনগণ এমনিতেই বেশ সচেতন। নিজেরাই নিজেদের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা যেন না থাকে সে কারণে সচেতন হতে থাকে।  এর মধ্যেই সরকার বিভিন্ন প্রিফেকচারেরর স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে।  পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের দোকান এবং কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়। ফলে অনেক লোকই ঘরে বসা।  নিরুপায় হয়ে বলি আর সচেতনতার কারণেই বলি, জাপানে যে যাই করুন না কেন, এদের মাস শেষে বিল কিন্তু থেমে থাকবে না।  তাই দুশ্চিন্তায় অস্থির জাপানি এবং জাপানে বসবাসকারী অনেক বিদেশি।  এদের বিষয় আমলে এনে সরকার প্রধান বেশ কয়েকবার করোনাভাইরাস নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। অনেকেই এই প্রেস কনফারেন্সের আগে আশা করেছিলেন হয়তো লকডাউনের কথা ঘোষণা দিবেন। কিন্তু ভুল করেও তা করেননি। উপরন্তু বলেছেন জাপানের কোথাও লকডাউনের মতো পরিস্থিতি হয়নি।

মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জাপানের সর্বত্র সাকুরা ফুল ফোটে।  এই ফুল দেখার জন্যই প্রতি বছর দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে—যা এবার করোনাভাইরাসের কারণে লক্ষণীয় ছিল না। তবে এটাও ঠিক স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই আবার এই আতঙ্ক  উপেক্ষা করে চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী এই সাকুরা ফুল দেখার পার্টি বা হানামি করে। এতে লোক সমাগম কিন্তু কম হয়নি। এতে ভাইরাস বিস্তারের যে সম্ভাবনা তা যেন তাদের মাথায়ই নেই। অন্যদিকে টোকিওতে লোকজনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ততটা বোঝা যায় না যে তারা খুব চিন্তিত। এখানে সরকারের উদাসিনতা নাকি সাধারণ জনগণের খামখেয়ালীপনা।  তা না হলে এই মরণব্যাধী ভাইরাসের কথা জেনেও কেন তা মেনে চলছে না—তা বুঝতে পারছি  না।

সরকার, মিডিয়া এবং সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা করলে কোনও বিষয়ই পরিষ্কার বলা যায় না যে জাপানের বর্তমান অবস্থা বা পরিস্থিতি যেকোনও দিকে মোড় নিচ্ছে।  তবে প্রতিদিনই সংক্রমণর সংখ্যা বাড়ছে। কেবল টোকিওতেই এর মধ্যেই যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, এর পরিণতি কী হবে বোঝা যাচ্ছে না।  আজকে এই লেখা যখন লিখছি তখন টোকিওতেই কেবল আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৩ জন। আজকে পর্যন্ত মোট ১০০০ জনের ওপর। পুরো জাপানে যার সংখ্যা ৩৭৪৩ জন। (জাহাজে ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা ৭১২ জন, যা আগের মোট সংখ্যার মধ্যে যুক্ত নেই)।

কিছুদিন আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ঘোষণা দিলেন প্রতি পরিবারের জন্য দুটি করে মাস্ক দেওয়া হবে।  এর ফলে তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের মুখরোচক কথা এবং কার্টুন চিত্র আঁকা। এর পরপরই আবার ঘোষণা এলো যাদের উপার্জন কম তাদের প্রতি পরিবারকে ৩০০,০০০ ইয়েন প্রণোদনা দেওয়া হবে। এটাতে মানুষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়।  অনেকেই এটা নিয়েও সমালোচনা করে। এখন দেখা যাক সরকার তার নাগরিকদের জন্য অর্থ সাহায্য দিয়েই নিরাপদ রাখার কথা ভাববে নাকি লকডাউন দিয়ে তাদের নিরাপদ রাখবেন। সবটাই আগামীর আলোচনা সাপেক্ষ্যে।

তবে আর যাই হোক আমরা বিদেশিরা তুলনামূলক চিন্তিত নানা কারণে। সামনে বেকার সংখ্যা বাড়বে। ভেঙে যাবে অর্থনীতির কাঠামোও। এ থেকে নিরসন যত দ্রুত করা সম্ভব ততই জাপানের জনগণ এই সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আসতে সুযোগ দিবে, না হলে হয়তো বিদায় ঘণ্টা বাজবে।

লেখক: সাংবাদিক ও লেখক, জাপান


/সাইফ/

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়