ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনারকালেও দক্ষিণ কোরিয়াতে নির্বাচন

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ১৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনারকালেও দক্ষিণ কোরিয়াতে নির্বাচন

করোনার এমন ভয়াবহকালেও এক অবিশ্বাস্য নজির দেখিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। গোটা বিশ্ব যেখানে করোনা রোগী আর মৃতের সংখ্যা গণনায় ব্যস্ত সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ‘সাহসী’ দেশ তাদের সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনায় ব্যস্ত।

শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ইথিওপিয়াসহ করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে কমপক্ষে ৮টি দেশ তাদের নির্বাচন স্থগিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় পূ্র্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার (১৫ এপ্রিল) জাতীয় নির্বাচন চলছে। করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়াতে আগাম ভোটের ব্যবস্থা করেছে দেশটি।

১০ এপ্রিল থেকে আগাম ভোট শুরু হয়েছিল। বুধবার সকাল ৬টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। রাতে ভোট গণনার পর বৃহস্পতিবার ১৬ এপ্রিল সকালের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। জাতীয় পরিষদে তিন শতাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। পঁয়ত্রিশটি দল প্রার্থী নিবন্ধভুক্ত করেছে, তবে প্রতিযোগিতাটি হবে ক্ষমতাসীন মিনজু (গণতান্ত্রিক) পার্টি এবং প্রধান বিরোধী, রক্ষণশীল ইউনাইটেড ফিউচার পার্টির মধ্যে।
 


ভোটারদের অবশ্যই মাস্ক এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। একটি দল তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করবে। ভোটাররা তাদের হাত জীবাণুমুক্ত করবে এবং প্লাস্টিকের গ্লোভস পরবে। তবেই তাদের ভোটদানের স্লিপ এবং তাদের ব্যালটের জন্য বুথে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। প্রায় ১৪শ  ভোটকেন্দ্রকে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।

তাপমাত্রায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে ভোটারের প্রবেশাধিকার মিলবে না। তবে তাদের জন্য বিশেষ বুথে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও সিউল ও দায়েগু শহরে আলাদা কেন্দ্রে করোনায় আক্রান্ত তিন হাজারের বেশি রোগী এবং ৯০০ স্বাস্থ্যকর্মীর ভোট দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে ।
ইতোমধ্যেই রেকর্ড ৫০ লাখের বেশি আগাম ভোট পড়েছে। ছোট ছোট জটলায় ভোটের প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। মাস্ক পরেই দিয়েছেন ভাষণ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি, বেতন-ভাতা এবং উত্তর কোরিয়ার নিউক্লিয়ার কর্মসূচি নির্বাচনে প্রভাব রাখার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের নেওয়া পদক্ষেপ বাকি সবকিছুকে আড়াল করে দিয়েছে।

দেশটির রাজধানী সিউলের ইয়ুন্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ইয়াং সেয়ুং হাম বলছেন, জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটের সময় সাধারণত ক্ষমতাসীন দল রক্ষণশীল আচরণ করে। কিন্তু করোনা মহামারির গতি কমিয়ে আনতে পারায় সরকারি দলের পক্ষে চলে গেছে স্রোত।
 


দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ জনের কম। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে এটি ৯০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ব্যাপক হারে পরীক্ষা, নজরদারি, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক সঙ্গনিরোধ নিশ্চিত করে এ সফলতা পেয়েছে কোরিয়া।

কোরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা কেন্দ্র (কেসিডিসি) তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৯১ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২২৫ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৭ হাজার ৬১৬ জন।

নির্বাচনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কায় আছেন দেশটির লাখো নাগরিক। তবে কেন্দ্রে লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হলেও ভোট চালিয়ে যাওয়ারও পক্ষে মত দিয়েছেন দেশটির অনেক নাগরিক।



ঢাকা/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়