ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমার দেখা টোকিও (পর্ব-২)

পি.আর. প্ল্যাসিড, জাপান থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার দেখা টোকিও (পর্ব-২)

২. টোকিও স্টেশনের সেকাল একাল: জাপান আসার পর কাজ নিয়েছিলাম টোকিওর শিবুইয়া ওয়ার্ডে বাংলাদেশিদের পরিচালিত এক রেস্টুরেন্টে। সপ্তাহান্তে একদিন রেস্টুরেন্টের কয়েকজন স্টাফ মিলে টোকিও স্টেশন হয়ে টোকিওর বাইরে গিয়েছিলাম বেড়াতে। এটি ১৯৯২ সনের কথা।

জে. আর. রেললাইনে (জাপান রেললাইন) এসে টোকিও স্টেশনের যখন ট্রেন থেকে নামি তখন ভাবতেই পারিনি এটা টোকিও স্টেশন হতে পারে। উপর থেকে দেখে এর বিশালত্ব বা ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারিনি।

সেখান থেকে আমাদের গন্তব্যে যাবার জন্য প্ল্যাটফরম বদলাতে হলো আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে।  নির্ধারিত ট্রেন লাইনের প্ল্যাটফরম পর্যন্ত যেতে আমাদের এতটাই হাটতে হলো যে, নিজেকে বিশ্বাসই করাতে পারছিলাম না, আমি কোনও রেলস্টেশনে আছি এবং ট্রেন লাইন বদলাতে যে এতটাই মাটির নিচে যাচ্ছি।

প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে এখন প্রায় নিয়মিত আমার যাওয়া হয় এই টোকিও স্টেশনে।  আমার কাছে মনে হয় ব্যস্ততম টোকিও শহরে মন ভরে শরীরে বাতাস লাগাতে এবং মন ভালো করার জন্য বিনোদনের অনেকগুলো স্থানের মধ্যে এটি একটি।  ভ্রমণ বিলাসীদের জন্যও দেখার মতো বা উপভোগ্য স্থান এই টোকিও স্টেশনের ভিতর ও বাহির।

জে. আর. রেললাইনের ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে ১৯১৪ সনের ২০ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা শুরু হয় টোকিওর ব্যস্ততম ও চোখ জুড়ানো সৌন্দয্যের এই স্টেশনের।  পরবর্তীতে ১৯৫৬ সনের মার্চ মাসের ২০ তারিখ থেকে মেট্রো রেল চালু হয় টোকিও স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে।

বর্তমানে এখানে মোট ২৮টি প্ল্যাটফরম থেকে প্রতিদিন সাড়া জাপানের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুতগামী বুলেট ট্রেনসহ প্রায় ৪০০০ ট্রেন আসা যাওয়া করে।  বলা যায় এটি টোকিওর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম রেল স্টেশন। এই স্টেশন চালু হবার পর প্রথম দিকের হিসেব অনুযায়ী বছরে এর মোট যাত্রী সংখ্যা ছিল ৫৫৩,১০৫ জন।  যা বেড়ে এখন হয়েছে দৈনিক প্রায় ৪৫০,০০০ জন।  স্টেশনের যেকোনও এক প্রান্তে দাঁড়ালে দেখা যায় যাত্রীদের স্রোত, যাত্রীরা শুধু যাচ্ছে আর আসছে।

১৮২,০০০ স্কোয়ার মিটার জায়গার ওপর তিন তলার বিশাল এই স্টেশন ভবনের ভিতর একবার ঢুকে অন্য যেকোনও দিক দিয়ে বের হয়ে আসতে যে কারোই বেশ বেগ পেতে হয়।  নতুনদের জন্য তো কথাই নেই। এই স্টেশনের ভিতর মানুষের দৈনন্দির ব্যবহারের জন্য চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়।

১৮৮৯ সনে টোকিও মেট্রোপলিটন কমিটি প্রথম এই স্টেশন করার পরিকল্পনা করে।  স্টেশনটির ডিজাইনার ছিলেন তাৎসনু কিংগো। উনি ব্যাংক অব জাপান, মারুনচি ভবনসহ আরো বেশকিছু বড় কাজ করে খ্যাতিমান হয়েছেন।

স্টেশনটি মারুনোচি ও ইয়ায়েস্যু দুই ভাগে ভাগ করে যাত্রীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে।  মারুনোচির দিকে বিশাল লাল ইটের বিল্ডিং যা দেখদে ব্রিটিশদের নির্মিত স্থাপত্যগুলোর মতো মনে হয়। এই স্টেশনকে ঘিরে আশেপাশে অনেক কিছুই গড়ে ওঠেছে।  যেমন, অফিস বিল্ডিং, ডিপার্টমেন্ট, হোটেলসহ বিনোদনের ব্যবস্থা।  টোকিও স্টেশনের নিকটেই রয়েছে জাপান স্রমাটের প্যালেস, যে কারণে এর গুরুত্ব আরো বেশি।

এছাড়া কাছেই রয়েছে দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড এবং টোকিওর বিভিন্ন স্থানে যাবার সুবিধার্থে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও।  ১৯৬৪ সাল থেকে শিনকান সেন বা বুলেট ট্রেন চলাচল শুরু হয়।  ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমা নিক্ষেপ করে শত্রুপক্ষ এর পুরোটা প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল, ১৯৪৭ সনে এটি পুনরায় নির্মাণ বা মেরামত করা হয়।

প্রতিদিন এখানে এমনিতেও অনেক পর্যটক আসেন স্টেশন এবং এর আশেপাশে ঘুরে দেখার জন্য। সামনে টোকিওতে অলিম্পিক হবার কথা। এ উপলক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানদের নামাজ পড়ার সুবিধার্থে স্টেশনের একটি ছোট অংশে সম্প্রতি বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।  আকারে ছোট হলেও বিষয়টির গুরুত্ব অনেক বেশি। যা জাপানে বিভিন্ন ধর্মকে সমান দৃষ্টিতে দেখার এবং ধর্ম পালনে এমন সুযোগ করে দিয়ে সমানভাবে অধিকার আদায় করতে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে স্টেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জাপানি ও ইংরেজিতে লোকেশন গাইড বা ম্যাপ প্রকাশ করে। তাছাড়া রয়েছে লোকাল এবং আন্তর্জাতিক টেলিফোন বুথ, বিদোশ টাকা এক্সচেঞ্জ করার ও ফ্রি ওয়াইফাই জোন ব্যবস্থা।

জাপানে কেউ বেড়াতে এলে একবার অন্তত এই টোকিও স্টেশন দেখার অনুরোধ থাকবে।

পি.আর. প্ল্যাসিড:  জাপান প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

***

সাইফ/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়