ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কিংবদন্তির পায়ের ধুলো আমার পাথেয় || রিয়াজুল রিজু

রিয়াজুল রিজু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২৩ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কিংবদন্তির পায়ের ধুলো আমার পাথেয় || রিয়াজুল রিজু

‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ নির্মাণের পর গত দুই বছর যে নিদারুণ অর্থ কষ্ট এবং অপমানের ভেতর দিয়ে কেটেছে সে গল্প বলতে গেলে একটা উপন্যাস লিখতে হবে। অসংখ্য ইন্টারভিউ’র কল্যাণে প্রায় সবাই জানেন যে, আমার স্ত্রী-সন্তানকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম আমি। তারা আজও সেখানেই আছে। তবে মাঝে একটা বড় ব্যাপার ঘটে গেল। যে সিনেমাটি ঘিরে আমার জীবনের এত বড় ধস! সেই সিনেমাটির কারণেই আমি দেশের সবগুলো মিডিয়ার স্পট লাইটে।

২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সর্বোচ্চ সম্মান শুধু নয়, ব্যাক্তিগতভাবেও শ্রেষ্ঠ পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে সর্বোচ্চ ৩টি পুরস্কার অর্জন করি আমি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলেন, এই বাচ্চা ছেলেটা তো একাই সব পুরস্কার নিয়ে নিল! আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির দিন সেটা। একদম ডুবতে যাওয়ার পথে যেন হঠাৎ খড়কুটো নয়, আস্ত একটা নৌকাই যেন পেলাম সেদিন।

সেদিন অনুষ্ঠান শেষে কেমন যেন বিভ্রমে ছিলাম। মানে কি করা উচিত কিংবা কি বলব? একটা ঘোর যেন কাটছিল না। অনেক সাংবাদিক বন্ধু থেকে শুরু করে শুভাকাঙ্ক্ষী আমার চারপাশে। কিন্তু কেন যেন কূল-কিনারা পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখি বাংলা সিনেমার ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক বসে আছেন। আমি জানি না কি হয়েছে! তবে মনে হলো সেখানেই বুঝি মুক্তি সব কিছুর! আমি স্বাভাবিক ছিলাম, নাকি অস্বাভাবিক তা জানি না, কিন্তু ছুটে গিয়ে তাঁর পায়ের ধুলো নিয়ে মাথায় ছোঁয়ালাম। মনে হলো হঠাৎ দম বন্ধ হয়ে আসা পরিস্থিতিতে বুক ভরা নিঃশ্বাস নিতে পারলাম। কেন এমন মনে হলো বা কী কারণে আমি ছুটে গেলাম ধুলো নিতে জানি না! কোনো ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে। যখন ছুটে এসে নায়করাজের সন্তান নায়ক সম্রাট আমাকে জড়িয়ে ধরল আমার মনে হলো কিছুক্ষণ আগে আমি কোনো কল্প জগতে ছিলাম। আমাকে কেউ বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।

কিছু মুখ থাকে, যেখান থেকে চোখ ফেরানো যায় না। কখনো তা প্রেমিকার, কখনো তা অতিকল্পনার কোনো চরিত্রের কিংবা মানুষের। নায়করাজ রাজ্জাক আমার কাছে তেমনই একজন ছিলেন। তিনি শাসন করেছেন কিন্তু মনোপলি করে রাজত্ব করেননি। তিনি প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চেয়েছেন, কাউকে আটকে নয়, নিজেকেই নিজের প্রতিযোগী করেছেন। হয়েছেন জয়ী এবং আবার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন নিজেকে পরাজিত করে নতুনভাবে তুলে ধরেছেন। এভাবে বারবার তিনি নিজের আসন নিজে দখল করেছেন। আমার মতো একজন নবীন তার পায়ের ধুলোর চেয়েও ক্ষুদ্র। সেই ক্ষুদ্র ধুলো যখন মাথার মুকুট হয়ে আশীর্বাদে ঋদ্ধ করে, তখন আনন্দে আবেগে চোখে জল আসে।

নায়করাজ আমার মাথায় যে আশীর্বাদের ধুলো সেদিন ছড়িয়ে দিয়েছেন, জানি না তার কতটা যত্ন আমি নিতে পারব। তবে কিংবদন্তির পায়ের ধুলো আমার পাথেয় হয়ে থাকবে।

 

লেখক : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৭/তারা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়