ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যশোরে পাট চাষে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যশোরে পাট চাষে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সাকিরুল কবীর রিটন, যশোর : ‘মানসম্মত বীজের অভাব ও সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ক্ষেতের পাট না বেড়ে ডালপালা গজাচ্ছে। অন্যান্য বছর পাটের বীজ বপনের পর এই সময়ের মধ্যে পাট গাছ চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হয়। অথচ পাট গাছ না বেড়ে ডালপালা ছেড়ে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ফুল এসেছে। এবছর পাটের ফলন খুব খারাপ।’ এভাবেই বলছিলেন যশোর সদর উপজেলার ইছালী এলাকার পাটচাষি আমজাদ হোসেন।

পাটচাষে এ বছর এমন পরিস্থিতি শুধু আমজাদ হোসেনের নয়, একই অবস্থা যশোর জেলার অনেক পাটচাষির। তারা এবার যশোর অঞ্চলে পাটের ফলনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টানা কয়েকটি বছর ধান আবাদে লোকসানের পর কৃষক পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন। যে কারণে, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে যশোর জেলায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যশোর জেলায় ১৮ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।

চলতি ২০১৯ সালে যশোরে ২০ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। কিন্তু পাট চাষের মাঝামাঝি সময়ে এসে ক্ষেতের পাট না বেড়ে ডালপালা বিস্তার ও ফুল ফুটে যাওয়ায় কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। যশোর জেলার অধিকাংশ এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাট বপনের পর বর্তমানে পাটগাছ ৪ থেকে ৫ ফুট লম্বা হওয়ার কথা, সেখানে পাটগাছ তিন থেকে চার ফুট লম্বা হয়েই ডালপালা ছেড়ে দিচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও গাছে ফুল ফুটে গেছে। এ অবস্থায় এসব পাটগাছ আর বাড়বে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ইছালীর আমজাদ হোসেনের মতো একই কথা বলেন লেবুতলার চাষি আজিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত বছর পাটের দাম কিছুটা ভালো ছিলো। তাছাড়া ধান আবাদে লাভ না থাকায় আমরা পাট চাষে আগ্রহী হয়েছি। তবে, এখন ক্ষেতের পাটের যে অবস্থা দেখছি তাতে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবো বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘মানসম্মত পাট না হলে কোনো ব্যবসায়ী পাট কিনতে চান না। কিন্তু বর্তমানে ক্ষেতে যে পাট দেখা যাচ্ছে তা বাড়ছে না। কী কারণে এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এ পাট বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো না সেটা নিশ্চিত। ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে পাটের ফলনে বিপর্যয় ঘটলে তাতে এ অঞ্চলে কৃষি অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়তে পারে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আবহাওয়া জনিত কারণে বা পাটবীজের সমস্যার কারণে এ পরিস্থিতি হতে পারে।

এ বিষয়ে যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, ‘পাটের এ সমস্যার বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন এবং কৃষককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। বীজের সমস্যার পাশাপাশি আবহাওয়া জনিত কারণে এমনটা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পাট চাষের ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। সামনে ভারি বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতি কিছুটা কমে যাবে বলে তিনি আশা করেন।


রাইজিংবিডি/যশোর/৮ জুলাই ২০১৯/সাকিরুল কবীর রিটন/হাকিম মাহি/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়