ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বোরো কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ৭ জেলার কৃষক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বোরো কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ৭ জেলার কৃষক

মহামারি করোনায়ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন হাওর অধ্যুষিত সাত জেলার কয়েক হাজার কৃষক পরিবার।  

ধান কাটার শ্রমিক ও পর্যাপ্ত মেশিনের অভাবে বোরো ধান কেটে গোলায় উঠাতে পারবে কিনা—এ নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তায় ভুগছেন তারা। কারণ নির্দিষ্ট সময়ে ধান কাটতে না পারলে পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

একদিকে উচ্চ সুদে ঋণ পরিশোধের তাগিদ, অন্যদিকে ধানের কম দাম। সব মিলিয়ে দুঃশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কৃষকদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশের খাদ্য সরবরাহের বড় অংশটি নিশ্চিত হয় বোরোর ধানের মাধ্যমে।  সরকারি গুদামে মজুতের মূল অংশটিও নির্ভর করে এ ফসল থেকে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে মূলত বোরো কাটা শুরু হলেও এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে কিছুটা দেরি শুরু হয়েছে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং সিলেটের একাংশের অন্তত আড়াইশ হাওরে বোরো আবাদ হয়। দেশের মোট বোরে ফসলের প্রায় ১৯ শতাংশ আসে এসব হাওর থেকে। এবারে বোরোতে ২ কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

গত দুই বছর অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে কৃষকরা বোরো ধান ঠিকমতো ঘরে উঠাতে পারেনি।  এবার কড়া সুধে ঋণ নিয়ে আবার সেই জমিতে আবাদ করে।  এবার ফসল ঘরে উঠাতে না পারলে জমি বিক্রি করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। বোরো ফসল উঠিয়েই ধান বিক্রি করে ধান কাটার শ্রমিক, মাড়াই এবং ঋণ পরিশোধ করতে হয়।  এ সময় প্রতি বছর ধানের দাম একদম কম থাকে।  এবার করোনার কারণে ধানের দাম আরও কমে যাওয়া শঙ্কায় কৃষকেরা।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ধান কাটার কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার দেওয়া হয়েছে। ধান কাটার পুরো সময়টুকুতে হাওরে উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, নিকলী এবং তাড়াইল ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তারা সমন্বয় করে কাজ করবেন।  ধান কাটার জন্য জামালপুর, কুড়িগ্রামসহ আরও কয়েকটি জেলা থেকে শ্রমিকরা আসেন।  যানবাহন বন্ধ থাকায় এবার একটু সমস্যা হচ্ছে।  তবে অনেক হাওরে বিকল্প পদ্ধতিতে শ্রমিকরা এসেছেন বলে শুনেছি।

এদিকে হাওর অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে হাওর অঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১০৫৬টি রিপার সচল রয়েছে। এছাড়াও পুরোনো মেরামতযোগ্য ২২০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৮৭টি রিপার অতিদ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারের মহাপরিচালক ড. আবদুল মঈদ বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ধান কাটার মেশিন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।  তবে ধান কাটার শ্রমিক সংকট জটিল আকার দেখা দিলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে অন্যান্য ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকদের ধান ঘরে তোলার স্বার্থেই সরকার হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতিমধ্যে হাওরে বাঁধগুলোর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আশা করছি সুন্দরভাবেই কৃষক ঘরে ফসল তুলতে পারবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চার ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, সারা দেশে উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি আসে হাওরাঞ্চল থেকে। কিন্তু কোনো রকম বন্যা হলেই ফসলগুলো তলিয়ে যায়। এতে পথে বসতে হয় কৃষকদের। এবার করোনাভাইরাসের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।  তাই কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

হাওর নিয়ে কাজ করেন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামে একটি সংগঠন। সংগঠনটির গবেষণা সেল প্রধান আব্দুল আলীম বলেন, বৈরি পরিস্থিতির মধ্যে থাকেন হাওরের লোকজন।  ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসব অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।  তার মধ্যে এবার করোনাভাইরাস বোরো ফসলের তোলতে মারাত্মক সমস্যা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধান কাটতে না পারলে পানিতে তলে যাবে। হাওরে পানি প্রবেশ করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এই সময়ের মধ্যেই ধান কেটে ফেলা সম্ভব।  তাই সহজ শর্তে কৃষককে ধান কাটার মেশিন কিনতে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।

                                   

এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়