প্রতিকূল আবহাওয়া ও জাগ দেওয়ার জায়গা না পাওয়ায় কুড়িগ্রামে প্রতিবছরই কমছে পাটের আবাদ। বর্তমানে চাষিরা বাংলাদেশের সোনালী আঁশ খ্যাত এই ফসলটির আবাদ বাদ দিয়ে ধান চাষের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। কৃষকরা বলছেন, কোনো কোনো মৌসুমে আবাদ ভালো হলেও জাগ দেওয়ার জায়গা না পাওয়া পাট চাষ ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১৭ হাজার ৯৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ফসলটি চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৭০ হেক্টর কম জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগেও কুড়িগ্রাম জেলায় প্রতি মৌসুমে পাটের আবাদ ছিল ২০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘আগে প্রায় এক একর জমিতে পাট আবাদ করতাম। এখন মাত্র ৪০ শতক জমিতে আবাদ করি। তাও এক বছর পরপর। প্রতি বছর পাট লাগালে আবাদ ভালো হয় না। এবার লাগানো পাট এখনও জমিতে রয়েছে। বন্যার কারণে পাটের গাছ কম বড় হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোনো বার পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়। এমন মৌসুমও রয়েছে যাখন আবাদ একেবারেই হয় না। পাট জাগ দেওয়ার জায়গাও পাওয়া যায় না।’
রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের কৃষক রব্বানী বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে পাট আবাদ করছি না। অনেক ঝামেলার কাজ। জমিতে পাট আবাদ করলে তা গরু-ছাগলখেয়ে ক্ষতি করে। তাছাড়া, পাট জাগ দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায় না। বাড়ির পাশে খাল ও নদী না থাকায় পাটের আবাদ ছেড়ে দিয়েছি। এখন জমিতে ধান চাষ করছি।’
কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ১০ হাজার টাকার বেশি। জমি থেকে পাট পাওয়া যায় ৭ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত। আবাদ ভালো হলে ১০ মণ পর্যন্ত হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পাট পরিদর্শক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চলতি মৌসুমে লাগানো পাট এখন পর্যন্ত ২০ ভাগ কর্তন করা হয়েছে। বাজার প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৭০০-১৮০০ টাকায়। পাটের আবাদ বাড়ানোর পাশাপাশি পাট চাষিরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য কাজ করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কুড়িগ্রামের জলবায়ু পাট চাষের উপযোগী। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাটের আবাদ কমে যাচ্ছে। আগে পাটের আবাদ বেশি হলেও বর্তমানে অতি খড়া ও অতি বর্ষাও পাটের আবাদ কমে যাওয়ার একটি কারণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাট পচানোরও সমস্যা রয়েছে। তারপরও আমরা বীজসহ সরকারি নানা প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘পাটের উৎপাদন বাড়াতে সয়েল টেস্ট করা হয়েছিল। জেলার ৯ উপজেলার চারটি পাট চাষের উপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাট পচানোর জন্য নির্ধারিত জায়গা নিয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে। কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে জেলায় পাটের উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’