সারা বাংলা

প্রতিমা তৈরি ও সাজাতে ব্যস্ত গোপালগঞ্জের শিল্পীরা

গোপালগঞ্জে প্রতিমা তৈরি ও সাজাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। ইতোমধ্যে খড় ও মাটি দিয়ে তারা শেষ করেছেন প্রতিমা তৈরি। এখন রংতুলির আঁচড়ে প্রতিমা ফুটিয়ে তুলছেন তারা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন আয়োজকরা। পূজা উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে, আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভুজার আগমন হবে দোলায় চড়ে। তিনি কৈলাশে ফিরবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে।

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন মন্দিরের ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ দেরিতে শুরু হয়ায় প্রতিমা তৈরিতে প্রতিমা শিল্পীদের বেগ পেতে হচ্ছে। দিন যত এগিয়ে আসছে মন্দিরগুলোতে বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে দুর্গার পাশাপাশি দেবী লক্ষ্মী, গনেশ, কার্তিক ও  জ্ঞানদায়িনী সরস্বতীর প্রতিমায় রংতুলির কাজ করছেন শিল্পীরা। পাশাপাশি নানা ধর্মীয় দৃশ্যপট তুলে ধরছেন মন্দির ও মণ্ডপগুলোতে। 

জানা গেছে, এবার শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে মুজুরি নিচ্ছেন সর্বনিন্ম ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পযর্ন্ত। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলায় ১ হাজার ২৯৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫১টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৩টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩২২টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৬টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৯২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিমা শিল্পী রাজীব পাল বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এ কারণে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে। গতবছর ১০টা মণ্ডপে কাজ করেছি। এবার ছয়টিতে করছি। মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। আদি পেশা টিকিয়ে রাখতেই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রতিমা শিল্পী কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের নাওয়া-খওয়া ও ঘুমের সময় নেই। পূজার আগেই আমাদের কাজ শেষ করতেই হবে।’

প্রতিমা শিল্পী দিনেশ সেন বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর পূজার ব্যাপকতা কমে গেছে। কাজের যে আগ্রহ আয়োজকদেরও নষ্ট হয়েছে, আমাদেরও নষ্ট হয়েছে। এই কাজে রুজি রোজগার হয় তাই কাজ করতে হচ্ছে। বাজেটও কমে গেছে। কাজ করে বেঁচে থাকাই কষ্টের। প্রথমে কাজ না পেলেও শেষের দিকে এসে কাজের খুব চাপ পড়েছে।’

গোপালগঞ্জ জেলায় সব ধর্মের মানুষের সহযোগিতায় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হবে বলে জানেয়ছেন আয়োজকরা। বাজার যুব সংঘের সভাপতি দীলিপ কুমার সাহা দীপু বলেন, ‘প্রতিবছর মতো এবারও দুর্গা পূজা উপলক্ষে বড় কিছু করার ইচ্ছা ছিল। বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া ও ৫ আগস্টের পর মানুষের মনে শান্তি না থাকায় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে পূজা করা হবে।’

কেন্দ্রীয় সার্বজনীন কালী বাড়ির সভাপতি রমেন বিশ্বাস বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ অনেকটা শেষের দিকে। কখন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা নিয়ে সবাই চিন্তার মধ্যে আছেন। আশাকরি সামনে ভালো কিছুই হবে। পূজা আমাদের হবে। তাই আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নিরাপত্তা দেবে। সেই সঙ্গে মন্দির ও মণ্ডপে আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মন্দির ও মণ্ডপে আলেকসজ্জা, প্যান্ডেল, গেট নির্মাণ চলছে। পূজা, অর্চনা, চন্ডিপাঠ, ধর্মীয় আচার-আচরণ, প্রসাদ বিতরণসহ নানা আযোজনের মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপন করব।’

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় চৌধুরী পপা বলেন, দুর্গোৎসব আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এটি ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপানা এবং ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আমরা উদযাপন করব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পূজা অর্চনা করব। স্থানীয়ভাবে আমরা পূজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতে যে অন্তবর্তী সরকার রয়েছে তারা আমাদের এই উৎসবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে বলে আশা করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব পাহারার ব্যবস্থা নেবে। নিরাপত্তার জন্য মণ্ডপে-মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। দেশে শান্তি ফিরে আসুক এই প্রার্থনা আমাদের।’

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পূজা মণ্ডপের তালিকা ঢাকায় পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসবকে আমরা উৎসব মুখর করতে চাই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সব ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’