মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কের রাজনগর উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী টেংরা বাজার। বাজারের ভিতর দিয়ে সরল রাস্তায় এক কিলোমিটার পার হলেই দেখা মিলে সবুজে মোড়ানো মাথিউড়া চা বাগান। সরু পথ দিয়ে যেতে দু’পাশেই নজরকাড়া পাতাকুঁড়ির ইশারায় মন ভরে যায়। আরো একটু এগিয়ে গেলে দেখা যাবে নিবির ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি রাবার গাছ। শীত আসলে এখানে পর্যটকরা আসেন সবুজ টিলার নিচে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি লেক দেখতে। কচুরিপানা, শাপলাসহ আছে নানা জাতের জলজ উদ্ভিদ। এখানে খাদ্য ও নিরাপত্তা থাকায় ভালবাসার টানে বার বার ফিরে আসে পরিযায়ী পাখিরা। তবে, এবার শীত দেরীতে নামায় পরিযায়ী পাখির উপস্থিতি অনেকটা কম।
মৌলভীবাজারর রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানের লোকজন পরিযায়ী পাখিদের আপন করে নিয়েছেন। তাই আবারও ফিরে আসছে পরিযায়ীরা। ওরা শীতে আসে, গরমে চলে যায় বলে এদের আদর করে বলা হয় অতিথি পাখি।
এই লেকে ২-৩ বছর ধরে পরিযায়ী সরালি, বালি হাঁস, দেশীয় পানকৌরী ও সাদা বক আসে। বাগানের বাসিন্দারা পাখিগুলোর সাথে আত্মীয়র মতোই আচরণ করেন। তারা কখনো পরিযায়ীদের ক্ষতি হোক, এমন কাজ করেন না। সব সময় দেখভাল করেন। শিকারিদের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ খেয়ালী ভূমিকা রাখেন।
সকাল দুপুর বিকেলে পাখির ওড়াউড়ি আর জলকেলিতে মুগ্ধ হন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। অনেকেই ছবি তোলেন আবার কেউ পাখির ওড়াউড়ির দৃশ্য ভিডিও ধারণ করেন।
বাগানে বেড়াতে আসা কামরান আহমদ বলেন, “সবুজ বাগানের ভিতর লেকের পারে বসে পাখির দৃশ্য আর কিচিরমিচির শব্দ খুবই ভালো লাগে।”
রাজনগর উপজেলার পরিবেশকর্মী মুরাদ আহমদ বলেন, “একটু উষ্ণতার জন্য পরিযায়ীরা সুদূর সাইবেরিয়া ও মধ্য এশিয়া এবং হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। এদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, কালিম, চখাচখি, শামুকখোলসহ আরো নাম না জানা অনেক পাখি। পাখিদের নিরাপত্তা দিলে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ আরো সুন্দর হয়ে উঠবে।”
সিলেট থেকে বেড়াতে আসা মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, “শীত আসলে সিলেটের হাওর-বাওর জলাশয় ও ডোবায় পরিযায়ীদের আগমন ঘটে। হাসঁ জাতীয় সরালি পাখির আগমন বেশি ঘটে। এদের কিচিরমিচির ডাকে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। পাখিদের নিরাপত্তা দিলে এরা বার বার আসে। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে।”
বাগানের বাসিন্দা দিপু বলেন, “সকালে পাখির কিচিরমিচির ডাকে আমরা ঘুম থেকে জাগি। পাখি খুবই স্পর্শকাতর, তারা বুঝতে পারে কে তাদের ক্ষতি করে। পাখিদের সাথে খারাপ আচরণ করলে নীরবে চলে যায়। বেশি বিরক্ত করলে দুরে চলে যায়। ৪-৫ দিন পর আবার চলে আসে। অতিরিক্ত বিরক্ত হলে আর আসে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা পাখিদের নিরাপত্তার জন্য শ্রমিকদের সচেতন করি। প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিযায়ীদের উপস্থিতি বৈচিত্র্যময়। সীমাবদ্ধতার জন্য পর্যটকদের ব্যাপক হারে আনাগোনার সুযোগ দেওয়া যায় না।”
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ার বলেন, “পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। চলতি বছর শীতের তারতম্য থাকায় একটু দেরিতে পাখি আসবে। শীতের তীব্রতা বাড়লে আরও বেশি পাখি আসবে। এখনো আমরা পাখি পর্যবেক্ষণের কাজ শুরু করিনি। এলাকাবাসীকে আরো সচেতন করার জন্য আমরা সেখানে যাবো।”