ক্যাম্পাস

অর্ধেক পড়িয়ে বা না পড়িয়ে কোনো ডিগ্রি দেওয়া হবে না: কুবি উপাচার্য

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অষ্টম উপাচার্য হিসেবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। পরবর্তী চার বছরের জন্য এ দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রাজারপাড়া গ্রামের এ কৃতি সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর জাপানের বিখ্যাত তায়োহাশি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইনফরমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ঢাবির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন রাইজিংবিডির সঙ্গে।

রাইজিংবিডি: কুবিতে যোগদানের এক সপ্তাহ হতে চলেছে। উপাচার্য হিসেবে দিনগুলো কেমন কাটছে?

উপাচার্য: আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই কেটেছে। নতুন জায়গা, নতুন অভিজ্ঞতা এখন পর্যন্ত ভালোই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সহযোগিতা পাচ্ছি।

রাইজিংবিডি: কুবিকে নিয়ে আগামী চার বছরের ভিশন কী?

উপাচার্য: কুবি থেকে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখবেন। অ্যাকাডেমিক অ্যাক্সিলেন্স বৃদ্ধি করা আমার লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জ্ঞান তৈরি করে এবং জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়। দেশের উন্নয়নমুখী গবেষণায় শিক্ষকদের উৎসাহিত করবো। অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা সমানতালে এগিয়ে যাবে।

রাইজিংবিডি: বিভাগগুলোতে রয়েছে শিক্ষক সংকট। রোল নম্বরবিহীন খাতা ও মার্ক টেম্পারিং নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ কী?

উপাচার্য: কোনো কোনো বিভাগে তিনজন শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে। সেখানে লেখাপড়া হচ্ছে না। যে সব বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে, তা দূর করবো। মার্ক টেম্পারিং হওয়ার জন্য নাম, রোল নম্বর দায়ী না। একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর রোল জানার কথা না। যে শিক্ষক শিক্ষার্থীর এক্সাম রোল খুঁজে বের করে, সেই শিক্ষককে কোড করে দিলেও রোল খুঁজে খুঁজে বের করবে। আদর্শ শিক্ষক হলে রোল নম্বর জানলেও কিছু হবে না। তাই আগে আদর্শ শিক্ষক হতে হবে।

রাইজিংবিডি: সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার। এ নিয়ে প্রশাসন কী ভাবছে?

উপাচার্য: শিক্ষার্থীরা নির্যাতিত, নিপীড়িত হলে ছাত্র সংসদের কাছে যাবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের একটি প্ল্যাটফর্ম হলো ছাত্র সংসদ। আমাদের এখানে ছাত্র সংসদ নেই, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন দেখতে হবে। ছাত্ররা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য দলবদ্ধ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতন হতে হবে। রাজনৈতিক সচেতন না হলে জাতির সর্বনাশ হবে। ভালো হলে ভালো বলতে হবে, মন্দ হলে খারাপ বলতে হবে। ছাত্র সংসদ করতে হলে নির্দিষ্ট একটি দলে ভাগ হয়ে করতে হবে। ছাত্রদের উচিত না, কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি করা। ছাত্র সংগঠন হবে ছাত্রদের স্বার্থে, কোনো দলের স্বার্থে না।

রাইজিংবিডি: বর্তমানে পাঁচ মাসের সেশনজটে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় দেড় বছরের স্নাতকোত্তর চায় না শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য: অ্যাকাডেমিক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কোনো কমপ্রোমাইজ করা হবে না। অর্ধেক পড়িয়ে, না পড়িয়ে এখানে কোনো ডিগ্রি দেওয়া হবে না। এ দেড় বছর এমনি দেওয়া হয়নি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত মান বজায় রেখে ডিগ্রি দেওয়া হবে, যাতে জব সেক্টরে সমস্যায় না পড়তে হয়। শুধু ডিগ্রি নিতে চাইলে আমার কিছু বলার নেই। আর প্রকৃত ডিগ্রি চাইলে এক সপ্তাহও কমানো যাবে না।

রাইজিংবিডি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শেখ হাসিনা হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করেছে। নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রশাসন থেকে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। নামগুলো পরিবর্তন হবে নাকি অপরিবর্তিত থাকবে?

উপাচার্য: এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। সব শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা আমি একা পারব না। এ বিষয়টা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করবো। তারপর সিন্ডিকেটে তুলবো।

রাইজিংবিডি: বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ছয়টি নীল বাস এবং ভাড়ায় চালিত আটটি লালবাস থাকা সত্ত্বেও পরিবহন সেবা নিয়ে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা। নীল বাসে দুজন চালক সংকট রয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য জানতে চাচ্ছি।

উপাচার্য: দুজন মানুষের জন্য দুইটি বাস অফ থাকবে, এটি আশ্চর্যের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি পরিবহন পুলের সঙ্গে কথা বলবো।

রাইজিংবিডি: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থাকা বা না থাকা নিয়ে আপনার অভিমত কী?

উপাচার্য: আমি গুচ্ছের পক্ষে না। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। ক্লাস শুরু হওয়ার পরও আসন খালি থাকে। তবে ৩-৪ টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গুচ্ছ হতে পারে। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় মাইগ্রেশন নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতি একটি চাপিয়ে দেওয়া পদ্ধতি। এই পদ্ধতি শিক্ষকদের না। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

রাইজিংবিডি: রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

উপাচার্য: আপনাকেও ধন্যবাদ।