সাতসতেরো

যেভাবে মিলেছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ নির্মাণের অনুমতি 

রাষ্ট্রের অনুমতি থাকার পরেও ১০ বছর থেমে ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ `গ্র্যান্ড মস্ক অব রোম’ নির্মাণের কাজ। এরপর কাজ শুরু হয়েছিল সৌদি আরবের অর্থায়নে। কিন্তু একটি যুদ্ধের ফলে তাও এক সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম আধুনিক মসজিদরূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এটি। জেনে নিন ইতিহাস।

১৯২৯ সালে আফগান যুবরাজ মোহাম্মদ হাসান ও তার স্ত্রী প্রিন্সেস রাজিয়া নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত হন ইতালিতে। তারাই ইতালির রোমে একটি মসজিদ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজীজ সে দেশের সরকারের কাছে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করেন। ইতালি সরকার ওই প্রস্তাবকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেন। ওই বছরেই ইতালির রোমান সিটি অব কাউন্সিল মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য ২০ বর্গমিটার জমি বরাদ্দ দেয়। এর প্রেক্ষিতে ইতালির কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী ও রোমের স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকে আপত্তি জানাতে শুরু করেন। পরে তা রীতিমতো আন্দোলনে রূপ নেয়। বাধার মুখে মসজিদ নির্মাণের কাজ পিছিয়ে যায়। প্রায় দশ বছর ওই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি ছিল না।  তৎকালীন খ্রীষ্টান প্রধান ধর্মগুরু পোপ দ্বিতীয় পলের সমর্থনে গ্র্যান্ড মসজিদের নির্মাণ কাজের অনুমতি দেওয়া হয়। 

১৯৮৪ সালে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তবে সমস্যা তৈরি হয় মসজিদের মিনারের উচ্চতা নিয়ে। খ্রীস্টানদের দাবি-মিনারের উচ্চতা অবশ্যই রোমের বিপরীতে অবস্থিত গীর্জার মিনারের থেকে কম হতে হবে। এই মতবিরোধের সমাধানে মসজিদের মিনারের উচ্চতা এক মিটার কম রাখা হয়। গ্র্যান্ড মস্ক অব রোম পুরোপুরিভাবে তৈরি হতে প্রায় এক দশক সময় লেগেছে। ইউরোপের সর্ববৃহৎ এই মসজিদের নকশা করেছিলেন ইতালির প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ পাওলো পোর্টোগেসি ভিত্তোরিও গিগলিওটি ও  ইরাকের স্থাপত্যবিদ সামি মুসাভি। এ ছাড়াও সারা বিশ্বের প্রায় ৪০ জন খ্যাতনামা স্থাপত্যবিদ এই মসজিদের নকশা প্রনয়নে যুক্ত ছিলেন।

তিনতলা বিশিষ্ট এই মসজিদটিতে ইউরোপীয় স্থাপত্যশিল্প এবং ইসলামিক স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। মসজিদের ভেতরের প্লারগুলো নির্মাণ করা হয়েছে উত্তর আফ্রিকার পাম গাছের আদলে। প্রথম তলায় রয়েছে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১২,০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের বাইরেও পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। যেখানে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। 

দ্বিতীয় তলায় রয়েছে গবেষণা কক্ষ ও ইসলামিক গবেষণা ইন্সটিটিউট। তৃতীয় তলায় রয়েছে বিশাল বড় সেমিনার কক্ষ। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির গোসল ও জানাজা করা হয়। এ ছাড়া মুসলিমদের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়ে থাকে। ইসলামিক বিষয় নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এই মসজিদ নির্মাণে সে সময় ব্যয় হয়েছিল আনুমানিক ৫০ মিলিয়ন ইউরো। নির্মাণ খরচের সত্তুর শতাংশই বহন করেছিল সৌদি সরকার। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর সৌদির অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর মসজিদটির নির্মাণ খরচ বহন করে মরোক্কো। মরোক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় আল হাসান ৩০ মিলিয়ন ইউরো দান করেছিল। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ২২টি মুসলিম দেশ এই মসজিদ নির্মাণে অর্থায়ন করেছিল। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ২১ জুন এই মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।