টাঙ্গাইলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আখের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে। প্রত্যাশা মতো দাম পাওয়ায় ভীষণ খুশি আখ চাষীরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। ৭ থেকে ৮ মাসেই আখের ফলন পাওয়া যায়। এক মৌসুম আখ উৎপাদনে ২ মৌসুম ধানের সময় লাগলেও সার্বিকভাবে আখ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন আখ চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয়দের। আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে মোটরশুঁটি, ছোলা, মসুর, মুগ, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া ও আলু চাষ করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় ৪২২ হেক্টর জমিতে আখ উৎপাদন হয়েছিলো ২০ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৩৮৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টরে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
আখ চাষীরা জানান, আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয়, তেল জাতীয় ফসলগুলো আলাদা জমি ছাড়াই বিনা সেচে বৃষ্টি নির্ভর অবস্থায় চাষ করা যায়। ফলে এককভাবে আখ চাষের চেয়ে অনেক লাভজনক। সাথী ফসল হিসেবে ডাল জাতীয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাথী ফসল থেকে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। পেঁয়াজ ও রসুনের পাতায় তীব্র ঝাঁঝ থাকায় সাথী ফসল হিসেবে আখ চাষ করলে আখে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে জমিতে আগাছা কম হয়, ফলে মূল ফসলের ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়।
সদর উপজেলার ধরেরবাড়ী, পিচুরিয়া, কৃষ্ণপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আখ চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি আখ খুচরা ১০ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করা হচ্ছে। পিচুরিয়া গ্রামের আখচাষী লুৎফর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে ৪২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে আমার আখ প্রায় এক মাস আগে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করলে লাখ টাকার বেশি হতো। আমাদের গ্রামের সকলেরই আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে আমরা খুশি।
ধরেরবাড়ী গ্রামের রকিবুল ইসলাম বলেন, ৬৫ শতাংশ জায়গা আখ চাষ করতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার আখ বিক্রি করেছি। এছাড়া, আখে ফাঁকে ফাঁকে আলু, মিষ্টি লাউ ও পেঁয়াজের চাষ করেছি।
কৃষ্ণপুর গ্রামের অপর চাষী হারেজ মিয়া বলেন, আগে এই মৌসুমে আমন ধান চাষ করতাম। তাতে তেমন লাভ হতো না। তিন বছর ধরে আমন ছেড়ে আখ চাষ করছি। এতে অনেক লাভ হচ্ছে। ২৮ শতাংশ জমিতে এখন খরচ বাদ দিয়ে এক মৌসুমেই ৩০ হাজার টাকার বেশি লাভ হয়েছে। তবে গত বছর বন্যায় আমাদের গ্রামের অনেক আখ বন্যার পানিতে তলিয়ে পঁচে নষ্ট হয়েছে।
ধরেরবাড়ী হাটে আখ কিনতে আসা এরশাদ মিয়া বলেন, আখ একটি রসালো ও মিষ্টি জাতের খাবার। আখ খেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় তিনটি আখ ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার বলেন, ঈশ্বরদী-৪১ ও ঈশ্বরদী-৪২ সহ নতুন কিছু আখের জাত টাঙ্গাইলে চাষ করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে।