অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ে ৫ বছরে ব্যয় হবে ৯৮৩ কোটি টাকা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের লক্ষ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে টানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কন্সট্রাকাশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিসিসিসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরে মোট ৯৮৩ কোটি ৮২ লাখ ৬২ হাজার ১৬৬ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য সিসিসিসি-কে যে অর্থ দিতে হবে তার ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশি মুদ্রায় এবং ৩৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা হবে। উক্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য স্ক্যানারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে বিধায় অনুমোদিত মূল্য অপরিবর্তিত রেখে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৫  শতাংশ অর্থাৎ ৬৫৬ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ৪০৮ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার ৯৪০ ইউএস ডলার পরিশোধ করতে হবে।

এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বুধবার (১৬ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।

এর আগে গত ১৮ মে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের জন্য নির্মাতা সংস্থা সিসিসিসি-কে নিয়োগের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। টানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি’র প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এবং তাদের পূর্বঅভিজ্ঞতার আলোকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন প্রথম টানেল। ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম শহরের পশ্চিম অংশের সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব অংশের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসন এবং ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এই টানেল জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

টানেলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার আগে রক্ষণাবেক্ষন ও টোল আদায় কাজের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার/অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টানেল রক্ষণাবেক্ষণের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হচ্ছে: টানেল মেইনটেন্যান্স, ব্রিজ/ভায়াডাক্ট মেইনটেন্যান্স, উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ রোড মেইনটেন্যান্স, ইনস্টল অ্যান্ড মেইনটেনিং টানেল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম, পেট্রল অ্যান্ড রেসকিউ, অটোমেটিক ওয়ে স্কেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টোল কালেকশন, ইন্টিলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) সার্ভিল্যান্স সিস্টেম, টানেল ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড ড্রেইনেজ সিস্টেম, টানেল ফায়ার রেসকিউ সিস্টেম, টানেল এয়ার ভেন্টিলেশন অ্যান্ড লাইটিং সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে নিয়োজিত সিসিসিসি টানেলের রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে একটি প্রস্তাব দাখিল করে। সিসিসিসি চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানে মোট জনবল ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৯ জন। প্রতিষ্ঠানটি পরিবহন খাতে কাজ করে থাকে। ইতোমধ্যে চীনসহ অন্যান্য দেশে সড়ক ও রেল সেতু, হাইস্পিড রেলওয়ে, টানেল এবং বন্দর ইত্যাদি নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সিসিসিসি চীন ও চীনের বাইরে এক্সপ্রেসওয়ে, সেতু ও টানেল রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কাজে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—টানেলসহ ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ নমপেন-সিহানুকভিলে এক্সপ্রেসওয়ে, ২৫৫ কিলেমিটার দীর্ঘ ডাওঝেন-ওয়েংঅ্যান এক্সপ্রেসওয়ে, ১০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুলিং-ফেংডু-সিঝু এক্সপ্রেসওয়ে, ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নান ঝিং ইয়াংঝি রিভার টানেল অন্যতম।

টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে পারফরম্যান্সবেজড মেইনটেইন্যান্স পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির অর্থাৎ টানেলের বিভিন্ন অংশে সেন্সর ব্যবহারের মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হবে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টানেলের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করে রক্ষণাবেক্ষণের সিদ্ধান্ত  গ্রহণ এবং সে অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা টানেল বা এর আওতাধীন অন্য যেকোন অবস্থানে বিদ্যমান যানবাহন সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন অ্যাপ্লিকেশন চালু করবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেভমেন্টের ক্ষতির পরিমাণ ও অবস্থান জানার জন্য রিয়াল টাইম রোড পেভমেন্ট ড্যামেজ ডিক্টেশন সিস্টেম চালু এবং স্বয়ংক্রিয় ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ইলেক্টনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেম চালু করা হবে। টানেলের রক্ষণাবেক্ষণে সিসিসিসি দেশীয় জনবল সমন্বয়ে গঠিত টিমকে টানেল রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে। ওই টিম ভবিষ্যতে টানেল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে।