জুটি বেঁধে পর্তুগালকে ইউরোর মুকুট জিতিয়েছিলেন তারা। যা ছিল দেশটির একমাত্র মেজর শিরোপা। তাদের সম্পর্কটা কোচ খেলোয়াড় কিংবা গুরু শিষ্যর থেকেও আরো গভীর। বয়সের বিশাল ব্যবধান থাকলেও বন্ধু শব্দটাই দুজনের সম্পর্ককে বর্ণনা করে দেয়। অথচ তাদের পথই আজ দুদিকে!
পর্তুগাল ফুটবলের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার হাত ধরেই ২০১৬ সালে ইউরো জিতেছিল পর্তুগাল। কোচ ছিলেন ফার্নান্দো সান্তোস। সান্তোসই এখন পর্তুগালের দায়িত্বে। অথচ রোনালদোর জায়গা হয় না পর্তুগাল একাদশে। মঙ্গলবার রাতে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছে পর্তুগাল। এই ম্যাচে রোনালদোকে শুরুর একাদশে নামাননি সান্তোস। রয়েছেন রিজার্ভ বেঞ্চে।
গণমাধ্যমে এসেছে, গ্রুপের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যায় পর্তুগাল। সেই ম্যাচে রোনালদোকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সান্তোস। সেই সময় ৩৭ বছরের রোনালদো যে অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন, তা ভালো ভাবে নেননি কোচ। সেই ম্যাচে মাঠ থেকে বেরোনোর সময় মুখে আঙুল দেখান সিআরসেভেন। কোচের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় এবার তাকে একাদশ থেকে জায়গা হারাতে হলো।
তবে কোচকে কিছু ইঙ্গিত করেননি বলে জানিয়েছেন রোনালদো, ‘আমি যখন মাঠ থেকে বেরোচ্ছিলাম, তখন দক্ষিণ কোরিয়ার এক ফুটবলার আমাকে মাঠ থেকে তাড়াতাড়ি বেরোতে বলে। আমি ওকে চুপ করতে বলি। ওর কোনও অধিকার নেই এটা বলার। কোচের সঙ্গে কোনও ব্যাপার নেই এটার।’
৩৭ বছর বয়সী রোনালদোর পারফরম্যান্সের ধারও নিম্নমুখী। মাঠে তাকে খুব একটা সক্রিয় মনে হচ্ছে না। নাগালের বল ছাড়া তেমন মুভমেন্ট নেই। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের মতো আসরে তার উপস্থিতি আড়ালে। ২০০৬ সালের পর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে না পারা পর্তুগাল এবার বড় কিছু পেতে চায়। এজন্য সান্তোস সেরা খেলোয়াড়দের পাঠিয়েছেন শুরুতে।
দল ফলও পেয়েছে হাতেনাতে। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে পর্তুগাল। গোল করেছেন অভিষিক্ত গঞ্জালো রামোস ও রোনালদোর পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করা পেপে। সুইজারল্যান্ডের এই ম্যাচে ফিরে আসতে দ্বিতীয়ার্ধে অলৌকিক কিছু করতে হবে। নয়তো পর্তুগাল যাবে সেরা আটে।
সেরা আটে গেলেও প্রশ্ন থেকে যায়, রোনালদো কি জাতীয় দলের ক্যারিয়ারের শেষ দেখে ফেললেন? সান্তোস তাকে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামলেও রোনালদো কি নিজের কারিশমা দেখিয়ে কোচের আস্থা পুনরায় অর্জন করতে পারবেন? প্রশ্নটা মিলিয়ন ডলারের। যার উত্তর কেবল রোনালদোই দিতে পারবেন।
মেজর প্রতিযোগিতায় ৩১ ম্যাচ পর প্রথম একাদশে জায়গা হারিয়েছেন রোনালদো। শেষবার রোনালদো ছিলেন না ২০০৮ ইউরোতে এই সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষেই। ১৪ বছর পর আবার তাকে এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলো। এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। জাতীয় দলের দরজাও কি বন্ধ হতে চলছে?