বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আগের ৯ মাসের প্রায় সমান বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিলো ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হার আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এর আগের ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিলো মূল বাজেটের ৮১ শতাংশ। সে হিসেবে গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেশি বাজেট বাস্তবায়িত হয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে।
অর্থ বিভাগের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিলো ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
এর আগে অর্থ বিভাগ প্রণীত প্রান্তিক বাজেট বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই ২০২১-মার্চ ২০২২) বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিলো মূল বাজেটের ৪৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। সে হিসাবে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২১) ৬৭ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা (মূল বাজেটের ১১শতাংশ); দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২১) ৮২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা (মূল বাজেটের ১৪ শতাংশ) এবং তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২২) ৯৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা (মূল বাজেটের ১৮.৫১ শতাংশ) ব্যয় হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে ধীরগতিতে চলে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যসব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যয় বেশি হয়।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তারা বলেছেন, সময়মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনো অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায়-সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।
অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’ (এডিপি) বাস্তবায়নের হার হচ্ছে মূল বাজেটের ৮৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং সংশোধিত বরাদ্দের প্রায় ৯২ শতাংশ। এ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছিলো ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ২ লাখ ৯ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২০২১) তুলনায় ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
অর্থ বিভাগের হিসাবে দেখা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এটি বাজেটে ঘোষিত মূল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।