নতুন বছরে নতুন হিসাবের খাতা খোলেন ব্যবসায়ীরা। ১২ মাস বেচাকেনা পর বাকির টাকা তুলতে বছর শেষে এই আয়োজন করেন তারা। এইবার এই হালখাতা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্কে। হালখাতার মাধ্যমে ধার দেওয়া টাকা তুলেছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এম.এ. এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল আউয়াল। আর এ হালখাতায় সাড়া দিয়েছিলেন টাকা ধার নেওয়া ওই শিক্ষকের পরিচিতজনসহ বন্ধুরাও।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরের পর ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কুড়িগ্রাম-সোনাহাট সড়কের অন্ধারীরঝাড় বাজারে আয়োজন করা হয় হালখাতার। বাজারের এক পাশে ছামিয়ানা টাঙ্গিয়ে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকারকে। সেখানে শিক্ষকের হাতে টাকা তুলে দিয়ে ধার পরিশোধ করতে দেখা যায় তার বন্ধু ও স্বজনদের। হালখাতার আয়োজক খাতায় তালিকা করে টাকা গুণে নিয়ে ধার পরিশোধ করা ব্যক্তির হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দেন। এমন আয়োজনের মাধ্যমে আব্দুল আউয়াল সরকারের কাছে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দিতে পেরে খুশি পরিচিতজন ও বন্ধুরা।
আরও পড়ুন: ধার দেওয়া টাকা তুলতে হালখাতার আয়োজন
হালখাতার অনুষ্ঠানে টাকা পরিশোধ করতে আসা জোবায়দুল ইসলাম বলেন, আব্দুল আউয়াল আমার শিক্ষক ও বড় ভাই। বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দিয়েছি। কয়েকমাস আগে ৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। এরমধ্যে গত ২৮ তারিখ হালখাতার চিঠি পেয়ে অবাক হই। পরে জানতে পারি ধারের টাকা তুলতে এই হালখাতার আয়োজন করেছেন তিনি। এজন্য হালখাতা করতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে কেননা ধারের টাকা ফেরত না দেওয়াটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আসলে বিভিন্ন বিপদের সময় একজন অপরজনের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া হয়।
গত ৩ বছর ধরে ৩৯ জনকে তাদের অনুরোধে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার দেন শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার। দুই সপ্তাহ আগে ধারের টাকা আদায়ে হালখাতার জন্য চিঠি দেন তাদের। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন হালখাতার মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনির হাট ইউনিয়নের হাইকুমারীপাতি গ্রামের মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে।
শিক্ষক আব্দুল আউয়াল সরকার বলেন, কেউ বিপদে পড়ে আমার কাছে টাকা ধার চাইলে না করতে পারি না। এভাবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাওনা হয়ে যাই অনেকের কাছে। কিন্তু কারো কাছে লজ্জায় টাকা চাইতে ভালো লাগছিল না। পরে একটি দোকানে হালখাতা অনুষ্ঠানে খেতে গিয়ে এই চিন্তা মাথায় আসে। হালখাতার মাধ্যমে প্রায় দেড় লাখ টাকা ফেরত পেয়েছি।