রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে দুটি ট্রেন। এরমধ্যে রেললাইন ভাঙা দেখে স্থানীয়রা লাল নিশান টাঙিয়ে একটি ট্রেনকে থামিয়ে দিয়েছেন। এই ভাঙা লাইনের যখন সংষ্কার চলছিল, তখন লাল নিশান না মেনে দ্রুত গতিতে ভাঙা অংশ দিয়েই ছুটে গেছে আরেকটি ট্রেন। চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনটি এভাবে কেন ছুটে গেল তা জানতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: রেললাইন ভাঙা, অল্পের জন্য রক্ষা পেল বরেন্দ্র এক্সপ্রেস
রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে বাঘার আড়ানী ও চারঘাটের নন্দনগাছি স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইন ভাঙা অবস্থায় দেখেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা লাল নিশান দেখিয়ে আড়ানী স্টেশনের কাছে ওই পথ দিয়ে আসা রাজশাহী-চিলাহাটি রুটের আন্তঃনগর ‘বরেন্দ্র এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। এর পেছনে ঢাকা থেকে রাজশাহীর দিকে আসা আন্তঃনগর ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিকেও থামিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কার কাজ চলার মধ্যে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অত্যন্ত ধীরগতিতে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে ভাঙা স্থান পার করে দেওয়া হয়। এরপর ওই স্থানে ভাঙা ফিসপ্লেট খুলে নিয়ে সংস্কার কাজ করছিলেন রেলকর্মীরা। এরমধ্যেই গোপালগঞ্জ থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে আসে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস। এই ট্রেনটির গতি কমাতে কিছুটা দূরে লাল নিশানও টাঙানো হয়। কিন্তু, তা অমান্য করে এই ট্রেনটি ঝড়ের গতিতেই ভাঙা অংশ পার হয়।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংস্কার কাজ চলা অবস্থায় ভাঙা অংশে ভেজা চটের বস্তা দিয়ে ধীরগতিতে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসকে পার করানোর প্রস্তুতি নেন রেলকর্মীরা। কিন্তু, লাল নিশান অমান্য করে ট্রেনটিকে স্বাভাবিক গতিতেই ছুটে আসতে দেখে রেলকর্মীরা লাইন থেকে দ্রুত দূরে সরে যেতে থাকেন। ঝড়ের গতিতে ট্রেনটি ওই ভাঙা অংশ পার হয়ে যায়। এ সময় রেললাইনের ভাঙা অংশটিকে দুলতে দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থান দিয়ে এতো দ্রুত ট্রেন নিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন স্থানীয় লোকজন। আর হতভম্ব হয়ে পড়েন রেলের কর্মীরা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেললাইনের একটি পাত কোনোভাবে ভেঙে গিয়েছিল। ঘটনার পর খবর পেয়ে তাদের প্রকৌশলীরা নিজস্ব টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে রেললাইন মেরামত করেন। এতে দূরে থাকা ট্রেনগুলোর গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে ওই পথ দিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়। পরে কাজ চলা অবস্থায় অন্যান্য ট্রেনগুলোকে ধীরগতিতে পার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার কাজ চলা অবস্থায় লাইনের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস চলে যাওয়ার বিষয়টি আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল। পরে শুনেছি। শুনেই বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।