দিনাজপুরের বিরামপুরে অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই করার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি একটি ক্লিনিকের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা জেলা সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিক্যাল অফিসার ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা সিভিল সার্জন।
প্রসূতির বাবা মতিয়ার রহমান বলেন, গত ৬ মার্চ আমার মেয়ে মাইমুন্না আক্তার মীমের প্রসব ব্যাথা শুরু হয়। ওই দিনই তাকে বিরামপুর রায়হান ক্লিনিকে ভর্তি করি। পরে চিকিৎসক ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী আমার মেয়ের সিজার করেন। তিনদিন পর মেয়েকে রিলিজ দেওয়া হয় ক্লিনিক থেকে। এরপর মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যায়। ৭দিন পর সেলাই কাটা হয়। তার ২৭দিন পর মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। চলতি মাসের ৩ তারিখে রায়হান ক্লিনিকে আবারো মেয়েকে ভর্তি করি। কিন্তু, রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। পরে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করি।
চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবার মেয়ের অপারেশন করেন। চিকিৎসকরা বলেন, মেয়ের পেটের মধ্যে গজ ও অনেক ময়লা ছিল। আমার মেয়ের জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছিল, তা কেটে ফেলা হয়। সে আর মা হতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে আর কোনোদিন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবে না। তার জীবন শেষ। আমি আমার মেয়ের এই ক্ষতির ন্যায্য বিচার চাই। সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ করেছি। আমি চাই, আর কোনো মেয়ের যেন সর্বনাশ না হয়।
প্রসূতি মাইমুন্না আক্তার মীম বলেন, গত ৬ মার্চ আমার প্রসব ব্যাথা ওঠে। ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম আমার সিজার করেন। আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে আমার অপারেশন হয়। আমার পেট থেকে গজ আর অনেক ময়লা বের করা হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, আমি আর কোনো দিন মা হতে পারবো না।
রায়হান ক্লিনিকের ম্যানেজার মাহবুব আলম বলেন, গত ৬ মার্চ আমাদের ক্লিনিকে মাইমুন্না আক্তার মীম নামের একজন প্রসূতি ভর্তি হন। ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম তার সিজার করেন। কিছুদিন পর ওই রোগীর রক্তক্ষরণ হয়। রোগীকে আবারো আমাদের এখানে ভর্তি করা হয়। সেদিন ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী ম্যাডাম ছিলেন না, দিনাজপুর ছিলেন। শেষে আমাদের ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্সে ওই রোগীকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম রসূল রাখি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলীর বিরুদ্ধে একজন দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আমি ও দুইজন মেডিক্যাল অফিসারকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই প্রসূতীর পরিবারের লোকজনকে ডাকা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
এবিষয়ে ডা. মোছা. তাহেরা খাতুন লাভলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। রোগীর পেটে কোনো গজ রাখা হয়নি। আমাকে হেয়ো করার চেষ্টা করছে। যদি দিনাজপুর মেডিক্যালের রিপোর্ট আমার বিরুদ্ধে আসে তাহলে আমি আপরাধ মেনে নেবো।