নিরক্ষীয় গিনির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নিয়ে যখন নাটকীয়তা চলছে তখন এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে গোপনে ধারণকৃত এক জন জ্যেষ্ঠ সরকারি কমকর্তার যৌনকর্মের ভিডিও। দেশটিতে গত ১৫ দিনে ওই কর্মকর্তার ১৫০ থেকে ৪০০টি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এসব ভিডিওতে তাকে সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে যৌনকর্ম করতে দেখা গেছে।
এসব ভিডিও শুধু গিনিতেই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মানুষকে হতবাক করেছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। এসব ভিডিওতে যেসব নারীকে দেখা গেছে, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের স্ত্রী কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজন।
ভিডিওতে যেসব নারীকে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বালতাসার এবাং এনগোঙ্গার সাথে যৌন সম্পর্কের চিত্রগ্রহণ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। সুন্দর চেহারার কারণে বালতাসার ‘বেলো’ নামেও পরিচিত।
এনগোঙ্গা হলেন গিনির প্রেসিডেন্ট তেওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমার ভাতিজা। তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আশাবাদীদের মধ্যে একজন হচ্ছেন এনগোঙ্গা।
১৯৭৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রেসিডেন্ট ওবিয়াং। ৮২ বছর বয়সী ওবিয়াং দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনের কারিগর ছিলেন। কিন্তু হ্রাসপ্রাপ্ত তেলের রিজার্ভের কারণে গিনির অর্থনীতি এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের এক কোটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে অনেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।
মার্কিন সরকারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতনসহ মানবাধিকার রেকর্ডের জন্য ওবিয়াং-এর প্রশাসন ব্যাপকভাবে সমালোচিত। ওবিয়াংয়ের ছেলের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে। নিয়মিত নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও, নিরক্ষীয় গিনিতে কোনো প্রকৃত বিরোধী দল নেই। কারণ বিরোধী দলের কর্মীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে কিংবা নির্বাসিত করা হয়েছে।
এনগোঙ্গা দেশের জাতীয় আর্থিক তদন্ত সংস্থার প্রধান ছিলেন এবং অর্থ পাচারের মতো অপরাধ মোকাবেলায় কাজ করেছিলেন। কিন্তু দেখা গেল তিনি নিজেই তদন্তের আওতায় আছেন।
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের গোপন অ্যাকাউন্টে এসব অর্থ জমা করার অভিযোগে ২৫ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এনগোঙ্গাকে রাজধানী মালাবোর কুখ্যাত ব্ল্যাক বিচ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তারা তার ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করর কয়েকদিন পর অন্তরঙ্গ ভিডিওগুলো একে একে অনলাইনে আসতে শুরু করে।
ভিডিওতে এনগোঙ্গার সঙ্গে থাকা কিছু নারীর পরিচয় দ্রুত শনাক্ত করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্টের আত্মীয় এবং মন্ত্রী ও সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের স্ত্রী।
বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, ভিডিওর প্লাবন ঠেকাতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হয়। ৩০ অক্টোবর ভাইস প্রেসিডেন্ট তেওডোরো ওবিয়াং ম্যাঙ্গু টেলিকম কোম্পানিগুলিকে ক্লিপগুলোর বিস্তার বন্ধে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলেন। যারা এই ভিডিও ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
যেহেতু কম্পিউটার সরঞ্জামগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছিল, সন্দেহ হচ্ছে সেখান থেকেই কেউ একজন এই কাজ করেছেন।
অন্তরঙ্গ ছবি গোপনে ধারণ করার জন্য এনগোঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করতে নারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। একজন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি এনগোঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা করছেন।