ক্যাম্পাস

একটি স্বপ্ন ঘুমিয়ে গেল শেরপুরের মাটিতে

ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে দ্রুতগামী এক ঘাতক রিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের মাত্র এক মাসের মাথায় অনন্ত জীবনের পথে পাড়ি জমালেন এ মেধাবী শিক্ষার্থী।

আফসানা করিম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পিতার নাম মো. রেজাউল করিম। মাতা কিছমত আরা। তার গ্রামের বাড়ি শেরপুর জেলায়। তিনি ঢাকার গ্রিন রোডের বাসায় থাকতেন।

এর আগে ঢাকার ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ছয় ভাই বোনের পরিবারে রাচি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যলয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) থেকে নতুন কলা ভবনের অভিমুখে ঘাতক রিকশাটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছিল। এ সময় আরও একটি রিকশা ডেইরি গেইটের দিকে দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। রিকশা দুটি হঠাৎ মুখোমুখি হওয়ায় গতি সামলাতে না পেরে রাস্তা হেঁটে পার হওয়া রাচিকে ধাক্কা দেয়।

এতে তিনি গাছের উপর আছড়ে পড়ে গুরুতর আহত হন। সেখানে উপস্থিত থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সাভারের এনাম মেডিক্যালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর মুখের নিচের ম্যান্ডিবল, কয়েকটি দাঁত ভেঙ্গে যায় এবং মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাকিব আল মাহমুদ শুভ বলেন, “আমরা যখন পেয়েছি, তখন তার চোখের মনি ফিক্সড ছিল। তার হার্টবিট পাইনি, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি করি। তার বুকের উপর ভারী আঘাতের কালচে চিহ্ন ছিল।”

নিহত আফসান রাচির সহপাঠী কানিজ ফাতেমা বলেন, “পরিবারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তার লাশের ময়না তদন্ত করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই গ্রিন রোডে অবস্থিত বাসায় তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাসার পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে গোসল করানো হয়।”

তিনি বলেন, “যারা লাশের গোছল করিয়েছেন, তারা বলেছেন, ‘লাশের হাত, চোয়াল, মাথার পেছনের দিকে এবং ঘাড়ের হাড় ভাঙ্গা ছিল।’ এছাড়া তার বুকে কালশিটে দাগ দেখতে পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।”

নিহত আফসানা করিমের ভাই মালয়েশিয়ায় থাকেন। তার ভাই অসুস্থ থাকায় মা কিছমত আরা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে তিনি দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে দেশে পৌঁছান।

রাচির বাবা রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ঢাকার গ্রিনরোডে দুপুর ২টা নাগাদ প্রথম জানাযার নামাজ পড়ানো হয়। নামাজ শেষে দুপুর ৩টার দিকে মরদেহ গ্রামের বাড়ি শেরপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। শেরপুরে সন্ধ্যা ৭টায় পৌঁছিয়ে তার দ্বিতীয় জানাজা রাত ৮টায় পড়ানোর পর পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।”

ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ চাই না। আমার মেয়ে পরপারে ভালো থাকুক, এ কামনা আমাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আর কোনো সন্তান যেন এভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়ুক, এটাই চাওয়া আমার।”