জাতীয়

অরেঞ্জ বন্ডের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা তরান্বিত হবে 

অরেঞ্জ বন্ড, একটি নতুন আর্থিক উদ্যোগ। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকি।

সিঙ্গাপুরে এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি অরেঞ্জ বন্ড সম্পর্কে এই কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘‘নারী-পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ তার সামগ্রিক উন্নয়ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করবে।’’

‘অরেঞ্জ বন্ড’ হল এক ধরনের বন্ড, যার মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত, লিঙ্গ সমতা ও পরিবেশগত ইস্যুতে বিনিয়োগ করা হয়। এই বন্ড বিক্রি করে ১০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করে পোশাকশিল্প, সবুজ অবকাঠামো ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করতে চায় সরকার। বিশ্বের অনেক দেশে আগে থেকে এমন বন্ড থাকলেও বাংলাদেশে প্রথম।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরের এসজিএক্স অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিশেষ বক্তা হিসেবে অংশ নেন লুৎফে সিদ্দিকি। ‘দি অরেঞ্জ ফোরাম ২০২৪: সেলিব্রেটিং ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাসটেইনবল ফাইন্যান্স’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ছিল সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স)। সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনশ’র ও অধিক ব্যবসায়ী নেতা, চেঞ্জ মেকার, উদ্ভাবক অংশ নেন।

কনফারেন্সে লুৎফে সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘‘অরেঞ্জ বন্ড সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন পথ সৃষ্টি করবে এবং বাংলাদেশের মূলধন বাজারকে আরও শক্তিশালী করবে। এই উদ্যোগ দেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।’’

অনুষ্ঠানে ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)  ও ডুরীন শাহনাজ অরেঞ্জ মুভমেন্টের সারমর্ম তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘‘এর মূল  উদ্দেশ্য-প্রচলিত কঠোর বিধিনিষেধকে চ্যালেঞ্জ করে নারী ক্ষমতায়নে কাজ করা। এই কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায়  ২ লাখ ৫০ হাজার নাগরিক এই বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এতে ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ মানুষকে আমরা প্রভাবিত করতে পেরেছি। এতে প্রমাণিত হয়, এই অরেঞ্জ আন্দোলন আমাদের আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিতে সহজ হচ্ছে এবং টেকসই সমাধানের পথ সুগম হচ্ছে।’’

ডুরীন শাহনাজ এই সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত প্রফেসর লুৎফী সিদ্দিকির সাথে সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক ও সংলাপের বিষয়টি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘সম্প্রতি  বাংলাদেশ সরকার নিজ দেশে ১  বিলিয়ন ডলার মূল্যের অরেঞ্জ বন্ড চালু করেছে। তাতে প্রমাণিত হয়, অরেঞ্জ মুভমেন্টের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’’

সম্মেলনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জের সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর পল ডি উইন। এই সময় তিনি আইআইএক্স-এর নেতৃত্বে ‘অরেঞ্জ মুভমেন্ট’ এর উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এইরকম একটি খাতে অবদান রাখতে পেরে গর্ববোধ করেন।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সিঙ্গাপুরের অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার এইচ ই অ্যালিস্টার কক্স, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিফাট) এর জেন্ডার সমতা বিষয়ক দূত স্টেফেনি কুফাস ক্যাম্পবেল, সিঙ্গাপুরস্থ পিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ম্যাদ্রিদো ম্যাকারিগ এবং শ্রীলংকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, রুয়ান্ডা ও কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতরা।

সম্মেলনে আরো যেসব বিষয় গুরুত্ব পায়, সেগুলো হচ্ছে: অরেঞ্জ বন্ডের অর্থায়ন ও এর কার্যকারিতা, অরেঞ্জ মুভমেন্টের প্রেক্ষাপট, অরেঞ্জ ফোরাম ২০২৪ এর কৌশলগত দিক ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনা ইত্যাদি।