রাজনীতি

মানুষকে অন্যায়ভাবে মামলার আসামি বানাবেন না: শফিকুর রহমান

যেকোনো জুলুমের বিরুদ্ধে জামায়া‌তের অবস্থান জা‌নি‌য়ে দল‌টির আমির ডা. শফিকুর রহমান ব‌লে‌ছেন, মামলা যারা করবেন, তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, বুঝেশুনে করবেন। একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে মামলার আসামি বানাবেন না। একশটা পাপীর সঙ্গে একজন নিষ্পাপ মানুষকে যদি জুড়ে দেন, আপনি চরম জুলুম করলেন। এ কাজ করা হোক আমরা চাই না। মামলা নিয়ে অন্যকিছু করা হোক, এটা আমাদের একেবারেই অপছন্দ।যদিও আমরা চরম মজলুম; কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের চরম সতর্কতার পরিচয় দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে আইনজীবী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তি‌নি এ কথা ব‌লেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেন, সব সময় আমরা শুনতাম, বিচার বিভাগ স্বাধীন। শুনতাম, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইন সবার জন্য সমান। অথচ যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে; আর অন্যায়কারীদের প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, এখন একটু সমান হবে ইনশাআল্লাহ। আইনটা কেমন সমান, তখন তো বোঝেননি। এখন যার যার প্রাপ্য ন্যায় অনুযায়ী আপনাদের বোঝা উচিত। তবে হ্যাঁ, আমরা যেকোনো জুলুমের বিরুদ্ধে।

‘এক আল্লাহকে ভয় করে কোনো মানুষের হক যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল করে কেউ যদি মামলা করেন—আমরা তাদের সর্বাত্মক আইনি সহযোগিতা দেব। তাদের পাশে থাকব; কিন্তু কেউ যদি মতলব হাসিলের জন্য অন্যকিছু করেন, আমরা তার সঙ্গে নেই,’ ব‌লেও সাফ জা‌নি‌য়ে দি‌লেন দল‌টির আমির।

বিগত সরকারের মামলা-হয়রানির কথা উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারে এখানে আমি কোনো দাবি জানাতে চাই না। দাবি জানাতে হবে কেন? যেসব হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়েছে, এখন কালবিলম্ব না করে তাদের খালাস করে দেওয়া উচিত। আর অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, তাদের (বিগত সরকার) বিরুদ্ধে মামলা করা।

কেবলমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই গণতন্ত্রের চর্চা আছে দা‌বি ক‌রে দল‌টির আমির ব‌লেন, জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্র বোঝে এবং গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। সেজন্যই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব অন্য দলগুলোর মতো ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে জামায়াতের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে, তবে দেশ থেকে পাচার হওয়া সব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুটি রোডম্যাপ দা‌বি ক‌রে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বলছি, একটি রোডম্যাপ দিলে হবে না। দুটি রোডম্যাপ দিতে হবে। প্রথম রোডম্যাপটি হবে সংস্কারের। কী কী বিষয়ে সংস্কারের কাজ ওনারা করবেন। আর দ্বিতীয়টি হবে সংস্কারের সময়সীমা নিয়ে।’

‘এটা (রোডম্যাপ) যদি সফল হয়, তাহলে দ্বিতীয় রোডম্যাপটাও সফল হবে। প্রথমটা যদি সফল না হয়, দ্বিতীয়টার প্রয়োজনই নেই। ওটা দিয়ে কিছুই হবে না। আর প্রথমটা ঠিক করার জন্য অবশ্যই এ ব্যাপারে অংশীজন যারা আছেন, রাজনৈতিক অংশীজন যারা আছেন, সিভিল সোসাইটি, অন্যান্য যারা আছেন, তাদের সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে হবে যে এই বিষয়ে সংস্কার হবে এবং এই টাইমলাইনে সংস্কার হবে।

‘এ কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকার যদি করে, তাহলে তাদের নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে; কিন্তু এখান থেকে যদি চুল পরিমাণ বিচ্যুতি তাদের ঘটে, তাহলে জাতির সর্বনাশ তাদের হাত দিয়েই হবে। আমরা এ আশঙ্কা থেকে বাঁচতে চাই এবং আশাবাদী হয়ে থাকতে চাই। আমরা আহ্বান জানাব, অনতিবিলম্বে তারা সংস্কারের বিষয়টি ডায়ালগ ওপেন (আলোচনা শুরু করা) করে এর একটি উপসংহারে উপনীত হবেন এবং তারা সেভাবে এগোবেন’, যোগ ক‌রেন জামায়া‌তের আমির।

তি‌নি আরও বলেন, ‘যদি এই রোডম্যাপ ধরে সংস্কার এগোয়, আমরা বিশ্বাস করি মাসের পর মাস খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটি সম্ভব। এটা যখন একটি পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দিতে হবে। আর দেরি করা যাবে না। কারণ, নির্বাচনের দিকে যাওয়া মানে গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসা। দেশে তো গণতন্ত্রকে জবাই করা হয়েছে। একটি টার্ম চালু করা হয়েছিল-উন্নয়নের গণতন্ত্র। দুনিয়ার কোথাও এটা শুনিনি। গণতন্ত্র গণতন্ত্রই, উন্নয়ন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটা কোনো দয়া নয়।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা—এ কথা জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু সব প্রত্যাশা যদি একটি অনির্বাচিত...অন্তর্বর্তী সরকারই পূরণ করে দেয়, তাহলে নির্বাচিত সরকারের দরকারটা কি; এবং তারা কি পারবে? এটা তাদের জবও না। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে দাবি উঠেছে যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।’

ছাত্র-জনতার অর্জিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ইন্তেকাল করেছে মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে শুধু দেশকে নয়, তার দলকেও (আওয়ামী লীগ) ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দল পরিচালনার মতো কিংবা দলের হাল ধরার মতো একজন লোকও আওয়ামী লীগে নেই। কারণ, আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তারা ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে রাজনীতি সীমাবদ্ধ রেখেছে।

মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব‌্য রা‌খেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, মুয়াযযম হোসেন, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার বিশেষ অতিথি ছিলেন।

এছাড়া আইনজীবী হেলাল উদ্দিন, এস এম কামাল উদ্দিন, ইউসুফ আলী, আবদুর রাজ্জাক, সাইফুর রহমান প্রমুখ।