লকডাউনে সময়টুকু কাজে লাগিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন মো. শাহীন আলম। বারোমাসি রঙিন তরমুজ আবাদ করে সুদিন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে অধ্যয়নরত ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের এ শিক্ষার্থী।
শুরুটা চলতি বছরের জুন মাসে। লকডাউনে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুল হকের পরামর্শে শাহীনের এ কাজে আসা। অল্প সময়ে লাভজনক ফসল তরমুজ। আর সেজন্য এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন শাহীন।
ইউটিউবে মাচান পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন সময়ে তরমুজ চাষ দেখে বাড়ির পাশের অনাবাদি জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেন তিনি। ২৫ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে গোল্ডেন ক্রাউন আর ব্ল্যাকবেবি জাতের ৯০০টি গাছ লাগিয়েছিলেন এবং অসময়ে তরমুজ চাষ করতে সক্ষম হন শাহীন।
শাহীন বলেন, প্রথমে কাজটা অনেক কঠিন ছিল। জীবনে কখনো কৃষি কাজ করি নাই, তাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল। শুরুর দিকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রথম দিকে গ্রামের মানুষ হাসাহাসি করেছে যে এই সময়ে আবার তরমুজ কেমনে হয়। তবে এখন মোটামুটি সবাই সাপোর্ট দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় এই প্রথম মাচান পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে তার জমিতে, রঙ বেরঙের তরমুজ গাছে গাছে দুলছে। বাহারি রঙের এসব তরমুজ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আকারে বেশ বড় হলেও মাচা পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে ঝুঁকি কম। পানি জমে থাকে না। নালা দিয়ে পানি সরে যায় বলে ফসল নষ্টের সম্ভাবনা অনেকটাই। এ কাজে তার মূলধন ছিল ৩৫ হাজার টাকা। গোল্ডেন ক্রাউন (উপরে হলুদ, ভেতরে লাল) ও ব্ল্যাক বেবি (উপরে কালো ভেতরে লাল) এই দুই জাতের তরমুজ চাষ করেন তিনি।
জানা যায়, তরমুজগুলো ৬০-৭০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। আর কিছু দিন গেলেই সেগুলো বিক্রি উপযোগী হবে। ৫০ দিন বয়সী তরমুজ এখন সাড়ে ৪ কেজির মতো ওজন। সুতার জালে মোড়ানো প্রতিটি তরমুজ বিক্রির উপযোগী বলে মনে করছেন তিনি। বিঘা প্রতি জমিতে তরমুজ চাষ করতে তার প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি খরচ বাদে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
কৃষি উদ্যোক্তা শাহীন বলেন, আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা এ কাজে আমাকে সহায়তা করেছে। আমার সহযোগী ছিল চাচাতো ভাই মানিক। ভাই ও তার পরিবারের সবাইও পাশে ছিল।
কৃষক না হয়েও প্রথমবারের মতো মাচান পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন সময়ে বারোমাসি তরমুজ চাষ সফলভাবে করতে পেরে অনেক খুশি শিক্ষার্থী শাহীন।
অনুভূতি প্রকাশ করে শাহীন বলেন, আমার স্বপ্ন ভালো মানুষ হওয়া। মানুষের জন্য কিছু করতে পারা। মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা। পরিবেশ বান্ধব কৌশল অবলম্বনে বিষমুক্ত বারোমাসি তরমুজ আবাদ করে সুদিন ফিরে আসুক চাষিদের মাঝে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।