সঠিক নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকলে মগবাজারের ওই ভবনের মতো আরও অনেক ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান।
সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে মগবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ আশঙ্কার কথা জানান।
আলী আহাম্মেদ খান বলেন, ‘আমাদের সেফটি-সিকিউরিটি সিস্টেম উদ্বেগজনক। এ ঘটনা সবার জন্য অ্যালার্মিং। সঠিক নজরদারি ও ব্যবস্থাপনা না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশেই উন্নয়নকাজ চলছে। নগরায়ন ও শিল্পায়ন দ্রুত হচ্ছে। এসব কাজে অনেক ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড বা নির্মাণকাজে ফায়ার নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। তাই, এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। নানামুখী তদন্ত চলছে। আশা করছি, ঘটনার সঠিক কারণ উঠে আসবে এবং নিশ্চয়ই যথাযথ কর্তৃপক্ষ কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে।’
রোববার (২৭ জুন) রাতে মগবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত সাতজন মারা গেছেন। দগ্ধ হয়ে ১৭ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মোট ৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আরও অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
কেবল মগবাজারে নয়, এর আগেও কয়েকটি স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার বা গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটেছে। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদের ভেতরে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ থেকে স্পার্ক ও অবৈধ পাইপলাইনের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাসের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা সিআইডি। এ বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। দগ্ধ হন আরও ১৫ জন।
প্রায় ৪ মাস তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২৯ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে সিআইডি।
মসজিদে বিস্ফোরণের ৭ মাসের মাথায় এ বছরের ২৩ এপ্রিল সকাল ৬টায় আবারও নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লার জামাইবাজার এলাকায় মফিজুল ইসলামের বাড়ির তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে বাড়ির কয়েকটি দেয়াল উড়ে যায়। এ সময় দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। গ্যাসের চুলায় লিকেজের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
পর পর দুটি ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘ওই দুটি বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অবৈধ সংযোগ, ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা, গ্যাস কোম্পানির লোকদের অসততার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব কঠোরভাবে দমন করতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রধান বাধা। এ অচলায়তন ভাঙার প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় থেকে নিতে হবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধের পাশাপাশি লাইনের নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। নইলে এরকম দুর্ঘটনা এবং জান-মালের ক্ষতি হতেই থাকবে।’
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নগর-পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মো. নুরুল্লাহ বলেন, ‘এ শহরের মহাপরিকল্পনার কোন ক্ষেত্রগুলো সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এবং কোনটি রাজউকের, তা প্রশ্নবিদ্ধ। চরম সমন্বয়হীনতা, খোঁড়াখুঁড়ি করার কারণেও অনেক সময় লাইনে লিকেজ হয়। সঠিকভাবে তদারকি না করায় দুর্ঘটনা ঘটে। সবাইকে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি দিতে হবে।’