নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বেসরকারি টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন’। সেখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন একই দিনে করা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ সব নির্বাচন সরাসরি ভোটে করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ ওঠে আসে।
এদিকে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নেবেন রোববার (২৪ নভেম্বর)। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে। তাই দেশকে রক্ষা ও ভবিষ্যৎকে নিয়ে ভাবতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। জামায়াত দাবি করেছে, ডিসেম্বরের পর নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়া, ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনাসহ বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সম্পাদকদের বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি করার কথা আলোচনা হয়েছে। সব নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়ার কথা বলেছেন কেউ কেউ। স্থানীয় সরকার সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার কথা হয়েছে, সংসদীয় পদ্ধতিতে যেন না হয়।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের কথা এসেছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা এসেছে। সংস্কার কমিশনও এ নিয়ে ভাবছে, বিশেষ করে প্রবাসীদের ভোটের ব্যাপারে। কত শতাংশ ভোট পেলে নির্বাচিত হবেন, সে বিষয়েও বলেছেন তারা। ‘না’ ভোট ফিরিয়ে আনার জন্য বলেছেন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ নির্বাচিত না হন, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’’
নির্দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা, স্থানীয় সরকারের সব কটি নির্বাচন একই দিনে করার পরামর্শ ওঠে এসেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তারা অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমেও সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সংস্কার কমিশন কোনো প্রস্তাব বা সুপারিশ তৈরি করেনি।
মতবিনিময় সভা শেষে বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নয়, সব নির্বাচনই প্রত্যক্ষ ভোটে করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করা, রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা, নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার, হলফনামার তথ্য যাচাই–বাছাইয়ের ব্যবস্থা করা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ নির্বাচিত না হন, সে ব্যবস্থা করা।’’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘‘সংস্কার কমিশন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তারা পর্যালোচনা করছে। সবার মতামত নেওয়ার পর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
এর আগে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মতবিনিময়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব এসেছে। এতে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে, তাদের একটি পরীক্ষা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় পাঁচটি স্তরে-ইউনিয়ন এই নির্বাচনগুলো আগে হয়ে গেলে সংস্কার ঝুলে যেতে পারে। এখন স্থানীয় সরকারগুলো আলাদা আলাদা আইনে পরিচালিত হয়। কোনো সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো সব একই দিনে হওয়া উচিত এবং এজন্য একটি সমন্বিত আইন হওয়া উচিত।’’
শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন
নির্বাচন নিয়ে তারেক রহমান যা বললেন নির্বাচন যত দেরি হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়বে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘সাবেক স্বৈরাচার দেশি-বিদেশি প্রভুদের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেই চলেছেন। তাই দেশকে রক্ষা ও ভবিষ্যৎকে নিয়ে ভাবতে হলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’’
শনিবার (২৩ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির কাউন্সিল সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। কিন্তু হটিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার তো থেমে নেই। দেশি ও বিদেশি দোসরদের নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি আর দরকার নির্বাচন।’’
তিনি বলেন, ‘‘দেশের উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রস্তাব ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একজন শুরু করবে, আরেকজন টেনে নিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ও সত্যিকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে, জনগণ তবেই জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’’
অনেকের মনে প্রশ্ন আমরা কেন বার বার নির্বাচনের কথা বলছি জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। এর ফলে সংসদের যারা জনপ্রতিনিধি বাছাই হয়ে আসবে, তারা সংসদে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কীভাবে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের সমস্যা সমাধান করা যায়।’’
শুধুমাত্র নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংস্কারের বাস্তবায়ন সম্ভব বলে এ সময় মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে সেই সংস্কার বিএনপিও চায়। বেশি সংস্কার করতে গিয়ে নির্বাচন করতে দেরি হলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ নিতে পারে।’’
শনিবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন
ডিসেম্বরের পর নির্বাচনি রোডম্যাপ চায় জামায়াত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘‘সংবিধান, পুলিশ, নির্বাচন কমিশনারসহ বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত শেষ করে ডিসেম্বরের পর জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে মানিকগঞ্জ বিজয় মেলার মাঠে শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে এক কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার আমলারা এখনও মাঠ প্রশাসনে আছেন। দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে ফ্যাসিবাদীরা দেশ পুনরায় নস্যাৎ করতে পারে। ইউএনও, ডিসি, এসপি, এসআই, জজদের সাথে কথা বললেও বোঝা যায় তাদের গায়ে ফ্যাসিবাদীর গন্ধ। সাংবাদিকরা প্রায় বলেন, জামায়াতে ইসলামী যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চায়, যৌক্তিক সময়ের ব্যাখ্যা কী? সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে একটু সময় লাগবে।’’
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রত্যাশা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন নবগঠিত নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘যত দ্রুত সম্ভব জনগণের অধিকায় আদায়ের সুযোগ করে দেওয়া এবং জনগণের ভোটাধিকারের মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করাই এই কমিশনের দায়িত্ব।’’
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন ও নিশিরাতের নির্বাচন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমেই আমরা বুঝতে পারবো তারা কতটুকু শক্তিশালী। নির্বাচন কমিশন কি করবে আগামী দিনই তা বলে দেবে। তাদের কার্যাক্রমে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে। আমরা আশাবাদী অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশন জনগণের পাশে থাকবে।’’
নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না গত ১৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।’’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে, সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’’
এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১% মানুষ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। যদিও আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত। আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার। সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার তত্ত্বাবধানে করা এক জরিপে ওঠে এসেছে এসব তথ্য।
জরিপে অংশ নেওয়া শহরের জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রামে বাস করেন তাদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। জরিপে অংশগ্রণকারী পুরুষদের ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ নির্বাচন চান এক বছরের মধ্যে।
তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি) ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন চান আর ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন চান ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী চান আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া পুরুষদের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক ২ ও ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।
১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ১০ দশমিক ৩, গ্রামের ৮, পুরুষদের ১২ নারীদের ৫ দশমিক ২, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি) ৮ দশমিক ৬ এবং ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সিদের মধ্যে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।
চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন, শহরের ৬ দশমিক ২, গ্রামের ৫ দশমিক ৭, পুরুষদের ৬ দশমিক ৯, নারীদের ৪ দশমিক ৮, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সি) ৭ দশমিক ৬,৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সিদের ৪ শতাংশ মানুষ।
সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ: বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত আর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তাহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ
সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনারের শপথ রোববার নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও চার নির্বাচন কমিশনার রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ গ্রহণ করবেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘২৪ নভেম্বর রোববার দুপুর দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’’
নবগঠিত নির্বাচন কমিশন গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারের সমন্বয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা হলেন-সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন করা হয়। সে আইনে প্রথমবার ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
ওই কমিশনের অধীনেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর প্রায় আট মাসের মাথায় গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করে আউয়াল কমিশন।
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিচয় নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দীন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকার সম্প্রতি তাকে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিল। এবার তাকে দেওয়া হলো নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব।
নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। পরে বিসিএস (কর) ১৯৭৯ ব্যাচে চাকরিতে যোগ দেন। পরে তিনি উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারে যুক্ত হন।
চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনারদের মধ্যে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বিসিএস (প্রশাসন) ১১ ব্যাচে (১৯৯৩) চাকরিতে যোগ দেন। অবসরে যান ২০২২ সালে। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আবদুর রহমানেল মাসুদ বিসিএস (বিচার) ১৯৮২ ব্যাচে মুনসেফ হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি অবসরে যান ২০১৭ সালে। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তহমিদা আহমদ বিসিএস (প্রশাসন) ১১ ব্যাচে (১৯৯৩) চাকরিতে যোগ দেন। অবসর নেন ২০১৯ সালে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ১৯৮৮ সালে ১৮তম লং কোর্সে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ২০২৩ সালে অবসরে যান।