খেলাধুলা

উৎসবে জল ঢেলে দিলো বেরসিক বৃষ্টি

তিন বছর পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ। বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাকে দেখার সুযোগ। আবার কবে হবে এমন নিশ্চয়তা নেই। সকাল থেকে মেঘলা হাওয়া উপেক্ষা করে কানপুর গ্রিন পার্ক এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সবুজের চারণভূমি রঙিন হয় আকাশি নীলের রঙে।  টস হতে হতে গ্যালারি পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু বেরসিক বৃষ্টি বাঁধ সাধলো।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের ইতি ঘটে বিকেল তিনটার আগে। লড়াই শুরুর আগেই যেন দর্শকদের আনন্দে ভাটা নামে। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১০৭ রান। মুমিনুল হক ৪০ ও মুশফিকুর রহিম ৬ রানে ব্যাটিং করছেন।

দুজনে চেন্নাই টেস্টে ছিলেন সুপার ফ্লপ। কানপুরে গুরত্বপূর্ণ সময়ে দলের হাল ধরেন মুমিনুল। মুশফিক যখন শুরু করলেন তখনই হানা দেয় বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি যাকে বলে। ধরন বুঝিয়ে দিচ্ছিল আর মাঠে বল গড়ানো সম্ভব না। প্রায় আধঘণ্টা বৃষ্টির পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিনের খেলার ইতি টানেন ম্যাচ অফিসিয়ালরা।

সারাদিনে মোটে খেলা হয়েছে ৩৫ ওভার। এক ঘণ্টা দেরিতে খেলা শুরু হওয়ার পর মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত বাগড়া দেয়নি বৃষ্টি। বিরতি শেষে আবার যথাসময়ে খেলা শুরু হয়। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ৯ ওভার হতে দ্বিতীয়বারের মতো বৃষ্টি নামে। এমন বৃষ্টি থাকতে পারে আরও দুদিন!

কন্ডিশন বিবেচনায় নিয়ে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা টস জিতে নেন ফিল্ডিং। জাসপ্রীত বুমরাহ-মোহাম্মদ সিরাজদের নতুন বল ভালোভাবে সামলাচ্ছিলেন দুই ওপেনার। এক প্রান্তে সাদমান ইসলাম ছিলেন সাবলীল, অন্যপ্রান্তে রক্ষণাত্বক খেলা খেলছিলেন জাকির হাসান।

আকাশদীপ বোলিংয়ে এসেই তুলে নিলেন জাকিরকে। ২৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ব্যাটার। আউটসাইড অফের বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন। দারুণ ক্যাচ নেন জয়সওয়াল। ভেঙ্গে যায় ২৬ রানের জুটি।

জাকিরের মত এত বল খেলে শুন্য মারার কীর্তি নেই আর কোনো বাংলাদেশি উদ্বোধনী ব্যাটারের।

জাকিরের ফেরার পর দারুণ খেলতে থাকা সাদমানেরও যেন মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটে। তবে এতে বোলার আকাশদীপের বোলিংয়ের সঙ্গে মাথার বুদ্ধিটাই বেশি কাজে লেগেছে। তার ভেতরে ঢোকানো বলে ফ্লিক করতে গিয়ে সাদমান মিস করেন। বল লাগে পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নেয় ভারত। যখন টিভি রিপ্লেতে দেখাচ্ছিল পরিষ্কার আউট তখন রোহিত শর্মা হতবাক হয়ে উচ্ছ্বাস করেন। থিতু হয়েও সাদমান ২৬ রানের বেশি করতে পারেননি।

সাদমান ফেরার পর দুই নতুন ব্যাটার মুমিনুল-নাজমুল হোসেন শান্ত এগোতে থাকেন। দুজনে ব্যাট করছিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে। ফিফটির জুটি গড়ে দিচ্ছিলেন বড় রানের আভাস। তখন ভারতের ত্রাণকর্তা হয়ে আসেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ককে।

জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। শান্ত রিভিউ নেন। কিন্তু কাজ হয়নি। ৩১ রানে ফেরেন এই ব্যাটার। ভেঙ্গে যায় ১০১ বলে ৫১ রানের জুটি। শান্তর আউটের পর মুমিনুল-মুশফিকের পথচলা শুরু হয়। শুরু থেকে মুমিনুলকে দেখা যাচ্ছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেন।

তার ইনিংসের দিকে তাকালে আরও স্পষ্ট হবে। সাদমানের সঙ্গে জুটিতে প্রথম ১৩ বলে ০ রান, শান্তর সঙ্গে ৪৪ বলে ১৯ রান আর মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে করেন ২৪ বলে ২১ রান! এক প্রান্তে মুমিনুল সাবলীল, অন্য প্রান্তে মুশফিক থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছেন।

ভারতের হয়ে একাই ২ উইকেট নেন আকাশদীপ। ১ উইকেট নেন অশ্বিন। উইকেটের দেখা পাননি বুমরাহ-সিরাজরা।

এদিকে এই ম্যাচে চেন্নাই টেস্টের একাদশ থেকে দুটি পরিবর্তন নিয়ে নামে বাংলাদেশ। দুই পেসার নাহিদ রানা ও তাসকিনের জায়গায় দলে ঢুকেছেন তাইজুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ। এ বছর এপ্রিলে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। সেই ম্যাচটি ছিল পেসার খালেদরও সর্বশেষ টেস্ট।