ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

প্রথমে লেখার মতো আমার কাছে কিছুই ছিল না : ভি এস নাইপল

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রথমে লেখার মতো আমার কাছে কিছুই ছিল না : ভি এস নাইপল

দেশের কোনো সাহিত্য উৎসবে নোবেলজয়ী সাহিত্যিকের উপস্থিতি এবারই প্রথম। ফলে তিনি ছিলেন সাহিত্যজনের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, উৎসবের মধ্যমণি। যে কারণে ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘নাইপল সেশনে’ সাহিত্যপ্রেমীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবের এ পর্বে সঞ্চালক ভি এস নাইপলের জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং সাহিত্য  নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে নোবেলজয়ী এই লেখককে উপস্থিত সাহিত্যপ্রেমীদের মুখোমুখি দাঁড় করান। দর্শক সারি থেকেও আসে বেশ কিছু প্রশ্ন। কথা বলতে কষ্ট হলেও হুইল চেয়ারে বসে ৮৪ বছর বয়সী নাইপল ধীরে ধীরে সেগুলোর উত্তর দেন। এ সময় তাঁর স্ত্রী নাদিরা নাইপলও উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ এই সেশনটি তরুণ কবি অহ নওরোজের অনুবাদে প্রকাশ করা হলো।

 

প্রশ্ন : কেমন লাগছে আপনাদের?

নাইপল : ভালো লাগছে। আমি আনন্দিত।

নাদিরা : খুবই ভালো লাগছে। বাংলাদেশের মানুষ আসলেই দারুণ! সবার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।

 

প্রশ্ন : নাদিরার কাছে জানতে চাই, বাংলাদেশে এতো সহজেই আসতে কেন রাজী হলেন? এদেশ সম্পর্কে কি আপনাদের জানাশোনা আগে থেকেই ছিল?

নাদিরা : আমার ভেতর থেকে একটুকরো বাঙালিয়ানা আমাকে এখানে টেনে এনেছে। আমি যখন কিশোরী তখন আমি কিছুদিনের জন্য এখানে থেকেছি। আমি আবদুল হামিদ খান ভাসানিকে চিনি। তার বক্তৃতা শুনেছি। আমি এদেশের বৃষ্টি সম্পর্কে জানি। হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি ছোঁয়া অনেক আনন্দের। একসময় আমি ফ্রক পরে বৃষ্টিতে ভিজেছি। অনেক বন্ধন আছে যা কখনো ভোলা যায় না। আমি বাংলাদেশকে ভুলতে পারিনি। যে কারণে আমি যখন প্রস্তাব পেয়েছি তখন এক বাক্যে রাজী হয়েছি। নাইপলকে আসার জন্য জোর দিয়ে অনুরোধ করেছি। আমি বলেছি তুমি চলো- মানুষ কত চমৎকার হয় না গেলে বুঝবে না।

 

প্রশ্ন : স্যার নাইপল, আপনি ঠিক কোন অনুপ্রেরণা থেকে আপনার প্রথম বই লেখা শুরু করেছিলেন?

নাইপল : আসলে আমি লিখতে যখন গিয়েছি তখন আমার কাছে লেখার মতো তেমন কোনো বিষয় ছিল না যা আমাকে অনুপ্রাণিত করতো। আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম কিন্তু লেখার জন্য কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু তবু আমি লিখেছিলাম। শুধুমাত্র আমার দুঃখ এবং জীবনের খারাপ সময়গুলোতে উদ্বিগ্নতা ভুলে থাকার জন্য। এভাবেই মূলত লেখা হয়েছে।

 

প্রশ্ন : উদ্বিগ্ন হওয়া থেকে বাঁচতে বা ভুলে থাকার জন্য আপনি লিখে থাকলেও অনেক সময় আপনার লেখার মধ্যে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। আপনি এটা বুঝে শুনেই করেছেন সেটা বুঝতে কারো বাকি নেই। আপনার প্রথমদিকের বইগুলো ছিল বেশ হাস্যরস এবং কৌতূহলে ভরপুর। তারপর হুট করে সিরিয়াস কিছু লেখা শুরু করলেন। এছাড়া প্রথমদিকে চারটি ফিকশন লেখার পর হঠাৎ করে ননফিকশন লিখলেন। সেটা কীভাবে সম্ভব হল?

নাইপল : আমার ওই সময়গুলো খুবই এলোমেলো অবস্থায় কেটেছে। সে সময়টা ছিল বিশৃঙ্খলায় ভরপুর। তবু কেমন যেন জাদুর মতো সবকিছু হয়ে গিয়েছে। কীভাবে এটা হল এখনো আমার কাছে তা বিস্ময়।

(এ সময় নাদিরা নাইপল কথা বলেন)

নাদিরা : ভিদিয়া খুবই এলোমেলো ছিল। একটা ঘটনা বলি- সে তার ‘অ্যান এরিয়া অফ ডার্কনেস’ উপন্যাসটি সম্পূর্ণ লেখার পর করেছিল কি পুরো পাণ্ডুলিপি রান্নাঘরে এনে কি যেন করছিল। এরপর রান্নাঘরে চুলার পাশে রেখেই মনের ভুলে সে একজনের আমন্ত্রণে বেরিয়ে পড়ে ভেনিস ভ্রমণে। তাহলেই বুঝুন যদি পাণ্ডুলিপিটি পুড়ে যেতো তাহলে কি আর সেটা আমরা পেতাম? উনি এমনই বেখেয়ালি ছিলেন।

নাইপল : এখন ব্যাপারটা খুবই মজার বলে মনে হলেও তখন ব্যাপারটা এমন হালকা ছিল না। জীবনের সবকিছুই সাজানোভাবে ঘটে না। এটা আসলেই এক উল্টাপাল্টা পরিস্থিতি। কখন যে কি হয় বোঝা দায়। পেছন ফিরে তাকালে আমার মনে হয় আমি কত খারাপ লিখতাম। কারণ আমার প্রথম লেখাটি নিয়ে প্রকাশকের কাছে গেলে তিনি আমাকে সেটা ফেলে দিতে বলেছিলেন। এতে আমি বেশ আহত হই। আর এখন সেদিন পেরিয়ে...

 

প্রশ্ন: আপনি কি এবার আপনার আফ্রিকার উপরে লেখা বইগুলো নিয়ে কিছু বলবেন? ‘এ বেন্ড ইন দ্য রিভার; উত্তর উপনিবেশ নিয়ে আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি যে বইটি পাল্টে দিলো। সেটা নিয়ে কি কিছু বলবেন?

নাইপল : আমি নিশ্চিত নই এ বিষয়ে। আমার মনে নেই এটা নিয়ে আমি কীভাবে ভেবেছিলাম।

 

প্রশ্ন : ৪৫ বছর বয়সের মধ্যেই আপনি পনেরোটি বই লিখে ফেললেন। আর সে সময়ে পৃথিবীর সব বড় বড় সাহিত্য পুরস্কার আপনার দখলে। তবুও নিজের সম্পর্কে আপনার উদ্বিগ্নতা কমেনি আপনি যেমনটা বলেছেন, এমন কেন হল?

(নাইপল নিশ্চুপ)

 

প্রশ্ন : আপনাদের বিড়ালটির কথা জানতে চাই।

নাদিরা : আমার একটা কথা খুব মনে হয়, উনি অনেক বার বলেছেন এবং বলতেন, মানুষের জীবন তিনটি হওয়া উচিত- একটি কাজ করার জন্য, একটি অভিজ্ঞতার জন্য, একটি ভালোবাসার জন্য। আমার সবসময় মনে হয় তিনি এই তিনটি কাজ একসাথে করে যেতে পেরেছেন। ভালোবাসার উপহারস্বরূপ এটা আমি তাঁকে দিয়েছিলাম। এই বিড়ালটি একমাত্র থামাতে পারে। কারণ তিনি তাঁকে অনেক ভালোবাসেন।

 

প্রশ্ন : আপনি লেখাকে বলেছেন যন্ত্রণাদায়ক, ভয়ঙ্কর। এখনো আপনাকে কোন ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দেয়?

নাদিরা : (নাইপলকে) সবকিছু সত্ত্বেও তুমি কীভাবে নিজেকে চালিয়ে নিচ্ছ?

নাইপল : এটা ছাড়া তো আমার আর কিছু করার নেই।

প্রশ্ন : এখন আপনি কিসে ভালো থাকেন?

নাইপল : আমাকে ভাবতে হবে। আমি ভাবছি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৬/অহ/তারা  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়