ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গাইতে পারি কিনা এ নিয়ে অনেকের দ্বিধা ছিল : কুমার বিশ্বজিৎ

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাইতে পারি কিনা এ নিয়ে অনেকের দ্বিধা ছিল : কুমার বিশ্বজিৎ

‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটি আমি গাওয়ার আগে গেয়েছিলেন ফাহমিদা নবী। গানটি তখন এতটা জনপ্রিয় হয়নি। লাকী আখন্দ ভাইও গানটি গেয়েছিলেন। এই গানটি আমার দীর্ঘদিনের পছন্দের একটি গান। লাকী ভাইয়ের একটি অনুষ্ঠান (সম্ভবত মালঞ্চ) ছিল। এটির প্রযোজক ছিলেন মুসা আহমেদ ভাই। এটা শিডিউল প্রোগ্রাম ছিল।

মুসা ভাই একদিন ‘সব কথা বলো তুমি’ ও ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ এই গান দুটি টেলিভিশনে রেকর্ডিংয়ের জন্য বলেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি। তখন মুসা ভাই বললেন, তুমি যদি এখানে রেকর্ডিং না করে বাইরে করো তাহলে নিজ খরচে করতে হবে। আমি মান ধরে রাখার জন্য শর্ত মেনে বাইরে স্টুডিও বুকিং নিলাম। কিন্তু লাকী ভাইকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এরপর লাকী ভাইয়ের বাসায় গেলাম। গিয়ে বললাম, ভাই, আপনার একটা গান করব, আপনি যদি গানের গাইড লাইনটা দিতেন। লাকী ভাই মুখে মিউজিকগুলো করে দিলেন। তিনি গানের পার্টগুলো টেপ রেকর্ডারে রেকর্ড করে দিয়েছিলেন। এটাই আমি মূল গানে ব্যবহার করেছিলাম।

তারপর বিটিভির ওই অনুষ্ঠানে গানটি গাইলাম কিন্তু খুব বেশি সাড়া পেলাম না। পরে অবশ্য বিটিভির আরেকটা অনুষ্ঠানেও গেয়েছিলাম। তখন অল্প সাড়া পেলাম। এরপর যখন অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা করলাম তখন এই গানটি অ্যালবামে রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম। কিন্তু অ্যালবামের জন্য যখন গানটির মাস্টার করা হলো আমার পছন্দ হলো না।   

ওই সময় প্রোডাকশন হাউসগুলোর এত পয়সা ছিল না। প্রোডাকশন হাউসের মালিক বললেন, আমি সব ঠিক করে ফেলেছি। এটি ঈদের অ্যালবাম। এখন যদি নতুন করে করতে যাই তাহলে অ্যালবামের ১০ হাজার কপি বাদ দিতে হবে। তখন আমি বললাম, তোমার কত টাকা লাগবে? আমার পেমেন্ট তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। এরপর আমার পেমেন্ট প্রডিউসারকে দিয়ে নতুন করে গানটির মাস্টার করালাম। রেকর্ডিংয়ের ব্যাপার, কম্পোজিশনে নতুনত্ব আনা- গানটি নিয়ে এ সবই আমার কাছে স্মৃতিবহুল। আমি আশাবাদী ছিলাম বলেই নানা বাধা বিপত্তি আসা সত্বেও প্রতিটা স্টেজ আমি সফলভাবে পার হতে পেরছিলাম।

এ ঘটনাগুলো আনুমানিক ১৯৯০ সালের দিকে। তখন আমি বেশি দিন হয়নি ঢাকায় এসেছি। এমন সময় রেকর্ডিংয়ের খরচ দিয়ে গান গাওয়া কঠিন ব্যাপার ছিল। ওই সময় যে ধরনের গানের আবহাওয়া ছিল- ওই মুহূর্তে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটির নামানুসারে অ্যালবামের নাম রাখা হয়, এমনকি এই গানটি অ্যালবামের প্রথম গান ছিল। আমি আশাবাদী ছিলাম বলেই এত বড় ঝুঁকি নিয়েছিলাম। মনে হয় আমি সাকসেস হতে পেরেছিলাম। এটা আমার দূরদর্শিতাও বলতে পারেন।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই গানটি পছন্দ করে আসছে। এই গানটি আমার পরম পাওয়া। আমাকে নিয়ে অনেকের দ্বিধা ছিল, আমি আসলে গাইতে পারি কিনা? এই গানটি প্রকাশ হওয়ার পর তাদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। এই গানটি আমার জীবনে একটি মাইলফলক। আমার গানের জীবনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের ব্যাপারে এই গানের ভূমিকা অনেক। কারণ সেই ’৯০, ২০০০, ২০১০ এখন ২০১৭ চলছে। আমার মনে হয়, এই গানের আবেদন এখনো কমেনি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, টিনেজ থেকে শুরু করে প্রবীণদেরও গানটি ভালো লাগে। এজন্য আমি লাকী ভাই ও কাওসার ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়