হুমায়ূন ও হিউমার
কে এম রাকিব || রাইজিংবিডি.কম
ছবি: মাসুদ আকন্দ
কিছুদিন আগে মুরুব্বি গোছের একজনের কাছে জানতে চাইলাম, এই সময়ের লেখকদের মধ্যে কার কার লেখা ভালো লাগে?
তিনি রসিক মানুষ। বললেন, হুমায়ূনদের।
হুমায়ূনের প্রভাব কোন মাত্রায় আমাদের সাহিত্যে এই ‘হুমায়ূনদের’ জবাবে বোঝা যায়। এমনিতে বাংলার পাঠক তো আচ্ছন্নই বহুদিন ধরে। এখন দেখা যাচ্ছে লেখকদের মধ্যেও হুমায়ূনের প্রভাব সর্বপ্লাবী। অজস্র হুমায়ূন এখন আমাদের চারপাশে। ফেসবুকে, ব্লগে, পত্রিকায়, লেখকদের মধ্যে আশ্চর্য হুমায়ূনের ছায়া। এক হুমায়ূন লোকান্তরে লক্ষ হুমায়ূন যেন ঘরে ঘরে। সে অন্য প্রসঙ্গ, অন্যত্র বলা যাবে লেখকদের উপরে তার প্রভাব নিয়ে।
যাহোক, আবার হুমায়ূন আহমেদের জন্মবার্ষিকী চলে এসেছে। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একজন লেখকের টেক্সট পাঠ করা সম্ভব। হুমায়ূনকেও বহুবিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ করা হবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু হয়েছেও হয়তো। আমি আপাতত হাস্যরসের জায়গা থেকে হুমায়ূনকে দেখতে চাই।
সবাই জানে হুমায়ূনের সাহিত্য মজার। হাস্যরসে ভরপুর। মহার্ঘ তার রসবোধ। হুমায়ূনের কোনো ঘোর নিন্দুকও কখনও দাবি করেন নাই যে, হুমায়ূনের লেখা একঘেয়ে বা বিরক্তিকর। তবু হুমায়ূনকে হিউমারিস্ট বলে কেউ দাবি করেছেন এমনটা আমার চোখে পড়ে নাই। এই লেখায় আমি হুমায়ূনকে একজন উঁচু দরের হিউমারিস্ট হিসেবে দাবি করবো। শুধু তাই না, আমি বলবো হুমায়ূন মূলত একজন হিউমারিস্ট।
রম্যলেখক শব্দটা যেন প্রকারান্তরে ঊনলেখক- এমন একটা বিবেচনা অস্পষ্টভাবে হলেও হয়তো বাংলাসাহিত্য পাঠকদের একটা বড় অংশের ভেতরে ক্রিয়াশীল। আমাদের দেশে হিউমারিস্ট বা রম্যরচয়িতা শব্দটা অনেকখানি ছ্যাবলামিময় অমর্যাদা নিয়ে হাজির হয়। আমি হিউমারিস্ট শব্দটা সদর্থেই ব্যবহার করছি। পৃথিবীর অনেক মহৎ সাহিত্যিকই হিউমারিস্ট।
আমরা যদি মনে রাখি, কমলাকান্ত/ মুচিরাম গুড়ের রচয়িতা বঙ্কিম, এ মোডেস্ট প্রোপোজাল-এর সুইফট, কাঁদিদ-এর ভলতেয়ার, ক্যাচ-২২’র যোসেফ হেলার কিংবা সেরভান্তেস, মার্ক টোয়াইন, কার্ট ভনেগার্ট, কিংসলি এ্যামিস থেকে শুরু করে হালের জর্জ সন্ডারস, ডেভিড সেডারিস বা স্যাম লিপস্টিসহ অনেক সাহিত্যিক আদতে রম্যরচয়িতাই, তাহলে শব্দটা আর নেতিবাচক লাগার কথা না। বাংলার মহান লেখকদের মধ্যে শিবরাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, সুকুমার রায়রা মূলত হিউমারিস্টই। এই সময়ের বাংলাসাহিত্যে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে মনে হয় হিউমারিস্ট।
তো, হুমায়ূন আহমেদের লেখায় হিউমার নিয়া কিছু কথা ‘বলিতে ব্যাকুল’। ইংরেজি ‘হিউমার’ শব্দটা সারল্য সত্ত্বেও যতখানি স্পষ্টতা ও সূক্ষ্মতা ধারণ করে ‘হাস্যরস’ বা অন্যান্য চালু বাংলা প্রতিশব্দগুলোতে তা নাই। অতএব, এই লেখায় ‘হিউমার’ শব্দখানি ব্যবহৃত হইবেক। এখন সমস্যা হলো, এই যে একজন লেখককে হিউমারিস্ট বলে দাবি করছি- এটা বিশদে প্রমাণ করা। হিউমার জিনিসটাকে ডিফাইন করা, তারপর হুমায়ূন সাহিত্য থেকে অজস্র নজির এনে নিজের দাবি সমর্থন করা। কীভাবে হিউমার উৎপাদিত হয়, কোন বয়ান ‘মজার’ লাগে, অভিব্যক্তি হাসি আনে তা নিয়ে হাজার বছর ধরে অসংখ্য ভাবনাচিন্তা, তত্ত্বায়নও লেখা হয়েছে। কিন্তু স্বল্প পরিসরের এই লেখায় হিউমার বিষয়ক তত্ত্ব ও তথ্যবর্ষণে পাঠককে বিরক্ত করার সুযোগ নাই। অবশ্য বিরল বা ব্যতিক্রম কিছু লেখা বাদ দিলে ঐতিহাসিকভাবে বাংলা প্রবন্ধ-নিবন্ধ তো আদতে তথ্য ও উদ্ধৃতি-ভারাক্রান্ত আইডিয়াশূণ্য ঘুমপাড়ানি গানই। হুমায়ূন সাহিত্যে হিউমারের ধরণ নিয়ে বিশদ আলোচনা করার সুযোগ এখানে নাই। করা গেলে হয়তো একখানা বিশালবপু প্রবন্ধ নামিয়ে ফেলা যেত। আপাতত আমার দাবির পক্ষে কয়েকটা ইশারা রেখে দুধের স্বাদ ওয়াসার পানি দিয়ে মেটাবো।
হিউমারিস্টরা জগত দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটাই কমিক। অথবা সচেতনভাবে তারা হাস্যরসাত্মক অদ্ভুত একটা দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করে নেন লেখার সময়। আর প্রায়শ জোক করার, মজা বা রসিকতা করার লোভটা তারা সামলাতে পারেন না। তা মাঝেমধ্যে বইয়ের জন্য ক্ষতিকরই। সার্কাসের ভাড়ের মতো কাজ করে অনেক চরিত্র অনেক সময়। কাহিনির ভেতরে যে পাঠকের মগ্ন থাকার কথা সেই মগ্নতায় প্রায়শ তুমুল মাত্রাতিরিক্ত হাস্যরস ব্যাঘাত ঘটায়। গল্পের চরিত্রদের প্রতি এম্প্যাথেটিক হওয়া বাধাগ্রস্ত করে, যদিও চরিত্রদের ব্যাপারে লেখক হুমায়ূন বেশির ভাগ সময় খুব এম্প্যাথেটিকই। হিউমার পরিমিতিবোধসহ হাজির হলে দারুণ সব কাজ করতে পারে। একমাত্র শেষ দিকের লেখা ছাড়া হুমায়ূন সেটা অনেকাংশে করতে পেরেছেনও। কিন্তু যখনই হাস্যরস মাত্রারিতিক্ত হয়েছে, কমিক রিলিফ ছাড়িয়ে উপর্যুপরি ফাজলামি হয়ে উঠেছে তখন আর সহনীয় পর্যায়ে থাকে নি। এর প্রমাণ সবচেয়ে স্পষ্ট হুমায়ূনের শেষ দিকের নাটকগুলিতে। যেখানে মনে হতে পারে হাস্যরসের জন্য অদ্ভুত কসরত করে যে চরিত্রেরা। আর অত্যধিক বাচালও মনে হয় চরিত্রদের। এই বাচালতা ও পরিমিতিবোধের অভাব শেষ দিককার নাটকগুলিতে বিরক্তি উৎপাদন করেছে। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের দীর্ঘদিনের অনেক ভক্তকেও এমনকি শেষ জীবনের হুমায়ূনের নাটকগুলিতে বিরক্ত হতে দেখেছি।
হিউমারের সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব- ইনঙ্কগ্রুয়িটি (অসামঞ্জস্য) থিয়োরি- পাশাপাশি খাপ খায় না এমন দুটি আইডিয়া বা বস্তুকে পাশাপাশি অনুযায়ী রাখলে হাস্যরসের সৃষ্টি হয় যতক্ষণ না তা বিপজ্জনক কিছু হয়। ‘কোথাও কেউ নেই’ বইয়ে অফিসের বড় সাহেবের কথা বলতে গিয়ে লেখেন: ‘বড় সাহেব লোকটা সাইজে ছোটখাটো’।
হয়তো কাজের লোক বলছে, ‘আফা আমি বিবাহ করবো’ । অথবা ‘খরিদ করেছি’। বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলের কোনো শ্রেণির মানুষ কথ্যভাষায় ‘বিবাহ’ শব্দটা উচ্চারণ করে বলে জানা নাই। হুমায়ূন আহমেদের নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে সম্ভবত বলে ‘বিয়্যা’। তো, হিউমারটা উৎপাদিত হচ্ছে কীভাবে?
‘আজ রবিবার’র মতি মিয়ার ভাষা দেখি: ‘অধিক কথা বলার সার্থকতা নাই। মতি মিয়া অধিক কথা পছন্দ করে না’।
এইখানে মতি মিয়ার কথা মজা লাগে কেন? মতি মিয়ার (কাজের লোক) সাথে তার মুখের ভাষার বিরোধ থেকে যা পরস্পরের সাথে যায় না? কেননা ‘অধিক’ ‘সার্থকতা’ এই শব্দ কথ্যভাষায় খুব একটা দেখা যায় না। এই যে ‘আফা’ আর ‘বিবাহ’ দুটি শব্দ বা ‘খরিদ’ করার মতো সাধু ভাষার শব্দ ব্যবহার অসামঞ্জস্য, তাই হাস্যরস তৈরিতে সাহায্য করে। এই কৌশল প্রায়ই হুমায়ূন ব্যবহার করেন, একটা স্ল্যাং, আঞ্চলিক ভাষার শব্দের পাশাপাশি একটা মার্জিত বা সাধুভাষার বা গুরুগম্ভীর শব্দ বসিয়ে হাস্যরস সৃষ্টি করেন।
কমিকের একটা আবশ্যিক দিক হলো বেশি ফেনানো যাবে না। কাহিনি বয়ানের ক্ষেত্রে হুমায়ূনও যথাসম্ভব অল্প শব্দ ব্যয় করেন। চরিত্র নির্মাণেও কাইয়ূমের রেখাচিত্রের মতো অল্প কয়েকটা আঁচড় মাত্র দেন হুমায়ূন। এ কারণে চরিত্র নির্মাণে সংলাপের উপরেই মূলত নির্ভর করতে হয় তাকে। কাহিনির এই সংলাপ-নির্ভরতার কারণে অনেক সময় চরিত্রগুলো বাচালতায় দুষ্ট। হিউমারের যতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য তা হুমায়ূনের সাহিত্যে পাওয়া যাবে। অদ্ভুত। উদ্ভট। কৌতূহলোদ্দীপক সব চরিত্র। বিস্মিত ও মুগ্ধ হওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা হুমায়ূনসৃষ্ট চরিত্রদের। তারা আচরণ করে, প্রতিক্রিয়া দেখায়, খুবই চড়া। এই যে ‘খুবই চড়া’, (ইংরেজি ‘লাউড’ শব্দটা মনে হয় আরেকটু স্পষ্ট করে) এটা কমিক এ্যামিউজমেন্ট তৈরিতে খুবই দরকারী। কারণ চরিত্রের স্টেরিওটাইপ হাস্যরস সৃষ্টিতে সহায়ক। কীভাবে? দেখবো সেখানে অতিরঞ্জিত, ক্যারিকেচার বা কার্টুন চরিত্রের দেখা মেলে। তার চরিত্রেরা আবেগ প্রকাশ করে সুপারলেটিভ ফর্মে। তম তর শ্রেষ্ঠ সেরা ইত্যাদি যুক্ত করে। হুমায়ূনের অনেক চরিত্রই যে নির্দিষ্ট টাইপ হয়ে যাওয়া চরিত্র তার রহস্য এখানেই।
হুমায়ূন কমেডি ভাষা-ব্যবহার করেন সচেতনভাবে এমনকি কাহিনির বয়ানের সময়েও। এছাড়া হিউমারের জন্যে ‘রিপিটিশন’ বা পুনরাবৃত্তি খুব পরিচিত কৌশল। ‘কোথাও কেউ নেই’ এই বাকের ভাইদের হিন্দি গানটা শোনা (লাল দোপাট্টা... ), চেইন ঘোরানো, ভুঁড়ি গালায়ে দেওয়া ইত্যাদির পুনরাবৃত্তি হাস্যরস সৃষ্টি করে। প্রায়ই হুমায়ূনের কাহিনিতে দেখা যায় একই ঘটনা একাধিকবার ঘটে।
জাত হিউমারিস্টদের মতো বিভিন্ন রকম ফ্রেজ বা প্রবাদকে টুইস্ট করেন হুমায়ূন। অর্থাৎ ভাষা নিয়ে নানারকম খেলাধুলা করেন। অনুরোধে ছ(saw)মিল গেলা, দৃষ্টিগুরুম (আক্কেল গুরুমের অনুসরণে), গরবত (গরম শরবত), কুকুর বেড়াল টাইপ বৃষ্টি (ক্যাটস অ্যান্ড ডগজ), কোদালকে কোদাল বলা (কল এ স্পেড) ইত্যাদি। হয়তো সবগুলো তার নিজেরই সৃষ্টি করা নয়, তবে কমিকের প্রতি তার পক্ষপাত কিন্তু লক্ষ করার মতো।
হুমায়ূনের ভাষার দিকে নজর দিলে আমরা দেখবো সেই ভাষা হিউমারিস্টের ভাষা। কীভাবে? দেখবো সেখানে অতিরঞ্জিত, ক্যারিকেচার চরিত্রের দেখা মেলে। তার চরিত্রেরা আবেগ প্রকাশ করে সুপারলেটিভ ফর্মে। তম তর শ্রেষ্ঠ সেরা ইত্যাদি যুক্ত করে। আরও ‘রাশি রাশি ভরা ভরা’ উদাহরণ হাজির করা যায় যদিও মনে হয় এই ইশারাই যথেষ্ট।
প্রশ্ন উঠতে পারে। হুমায়ূনকে একজন হিউমারিস্ট বলে প্রমাণ করে ফায়দাটা কী? ফায়দাটা এই যে, আমরা দেখবো, হুমায়ূন-সাহিত্যের প্রতি করা অভিযোগের অনেকগুলো হুমায়ূনকে হিউমারিস্ট হিসেবে দেখতে পারলে আর থাকে না। কারণ একজন হিউমারিস্টের কাছে পাঠকের প্রত্যাশা আলাদা। হিউমারিস্টের প্রথম বাধ্যবাধকতা হাস্যরস। নির্মল আনন্দ সরবরাহ করা। এটা ঠিক হুমায়ূনের এমন অনেক লেখা আছে যা দেখে তাকে হিউমারিস্ট হুমায়ূন দাবি করা যাবে না। ‘যখন ডুবিয়া গেছে পঞ্চমীর চাঁদ’, ‘একা এবং কয়েকটি প্রজাপতি’র মতো সাইকোলজিক্যাল বইয়ে মানবমনের অনেক অন্ধকার অঞ্চলে হুমায়ূন পাঠকদের নিয়ে যান। তবে মূলত তিনি হিউমারিস্টই। হাস্যরসিক হওয়াই হুমায়ূনের মৌল প্রবণতা। অবশ্য এমনও না হুমায়ূনকে ডিফেন্ড করার জন্যে এই লেখা। হুমায়ূন নিয়ে আমার অতি এবং অন্ধ মুগ্ধতা যেমন নাই, তাকে সর্বক্ষেত্রে বিরোধিতাও নাই। তার ভুল-ত্রুটি, সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি নিয়েই তিনি বাংলা ভাষায় উল্লেখযোগ্য একজন লেখক হিসেবে টিকে থাকবেন।
হুমায়ূন আহমেদের লেখা সম্পর্কে অনেকের একটা কমন অভিযোগ- তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলে না। অনেকভাবে এই অভিযোগ খণ্ডন করা যায়। এখানে একটামাত্র উদাহরণ দিয়ে লেখা শেষ করি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশের জনপ্রিয়তম লেখক হিসেবে তার যে স্পষ্ট পজিশন তা অত্যন্ত সাহসী ছিলো। ‘উপরে র্যাব নিচে র্যাব’-এর মতো রসিকতা হুমায়ূনই করতে পারেন। মার খেয়ে তক্তা হয়ে যাওয়া হিমুর ‘খালু সাহেব’ অত্যন্ত র্যাব ভক্ত হয়ে পড়া, র্যাব-সংগীত, র্যাব-দিবস করা, যারা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলে তাদেরকেও ক্রসফায়ারে দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে স্যাটায়ার করা হয়েছে ‘হলুদ হিমু কালো র্যাব’ বইয়ে।
উপন্যাসের শেষ দিকে হিমু র্যাবের অফিসে তার নিজের বিয়ের কার্ড দিতে গিয়েছে! এর আগে একবার সে হাজতবাস করে গেছে। হিমু আর র্যাবের অফিসারদের কথোপকথনের অংশবিশেষ উদ্ধৃতি করি:
‘মধ্যমণি (র্যাবের একজন অফিসারকে এই নামেই পাঠকের কাছে পরিচয় করায় হিমু) আবারও নীরবতা ভঙ্গ করলেন। গলা খাকারি দিয়ে বললেন, তোমার মধ্যে আমাদেরকে নিয়ে রিডিকিউল করার প্রবণতা লক্ষ্য করছি। why?
শুভ্র’র বাবা বললেন, (তিনি আপনি আপনি করে কথা বলছেন), আপনি কেন আমাদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না বলুন তো? আপনার যুক্তিটা শুনি। আপনি কি চান না ভয়ঙ্কর অপরাধীরা শেষ হয়ে যাক? ক্যানসার সেলকে ধ্বংস করতেই হয়। ধ্বংস না করলে এই সেল সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আমি বললাম, স্যার, মানুষ ক্যানসার সেল না। প্রকৃতি মানুষকে অনেক যত্নে তৈরি করে। একটা ভ্রূণ মায়ের পেটে বড় হয়। তার জন্যে প্রকৃতি কি বিপুল আয়োজনই না করে! তাকে রক্ত পাঠায়, অক্সিজেন পাঠায়। অতি যত্নে তার শরীরের একেকটা জিনিস তৈরি হয়। দুই মাস বয়সে হাড়, তিন মাসে চামড়া, পাঁচ মাস বয়সে ফুসফুস। এত যত্নে তৈরি একটা জিনিস বিনা বিচারে মরে যাবে-এটা কি ঠিক?
পিশাচের আবার বিচার কী?
পিশাচেরও বিচার আছে। পিশাচের কথাও আমরা শুনবো। সে কেন পিশাচ হয়েছে এটাও দেখবো।’
তুমুল হাস্যরসের ফাঁক-ফোঁকরেও হুমায়ূন তার অবস্থানটা স্পষ্ট করতে ভোলেন না। লেখককে জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
[হলুদ হিমু কালো র্যাব- এই রাজনৈতিক দিকটা আমার নজরে পড়ে প্রমিত রায়হানের কারণে। তিনিই প্রথমে বইটা পড়তে বলেছিলেন আমাকে। তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ]
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন