ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

ছোটগল্প ॥ ছানি ঘোলা দৃষ্টি

মাহবুব আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১২ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটগল্প ॥ ছানি ঘোলা দৃষ্টি

মাহবুব আলী ॥ শেষ পর্যন্ত তাকে এ-ও করতে হলো! গর্ভধারিণীকে বেচে খাওয়া। জীবন এত কঠিন! বেঁচে থাকা কত কষ্ট!  তারপর দিন শেষে ঘরে ফিরে আসে সে। একচিলতে শুকনো আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছে। দুপুরের রোদ বাঁশঝাড়ের মাঝখানে লুকোচুরি খেলা করে। হঠাৎ থেকে থেকে দমকা হাওয়া। দুপুরের তাপ কমে গেছে। দেড় ঘণ্টা আগে ফুলবাড়ি উপজেলার একটি স্কুলে ছিল। চোখে-মুখে বিমর্ষ ছবি আঁকা। সে ছবি হয়তো পুরোটা কৃত্রিম নয়। আজকাল দিন পড়ে গেছে তার। আগের মতো পশার নেই। কোথাও শুনেছিল, সবকিছু যখন নষ্টদের দখলে চলে যায়, দুয়ারে দুয়ারে কড়া নেড়ে নেড়ে দুধ বিক্রি করতে হয়। এর চেয়ে মোড়ের মাথায় শুড়িখানা খুলে দাও, দেখবে হাজার হাজার লোকের ভিড়। সে এই কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল। আজ সেই কথা মনে পড়ে যায়।

চারদিকে উঁচু প্রাচীর ঘেরা স্কুল। পশ্চিমে একটি বড় গেট। হাট হয়ে খোলা। ওটার মাথায় লেখা ‘নবগ্রাম বহুমুখী হাই স্কুল, ফুলবাড়ি’। সে খুব অনায়াসে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সে-সময় একটি লোক। নীল রঙের চেক শার্ট। ময়লাটে-সাদা প্যান্ট। মাঝারি উচ্চতা। নির্বিকার চেহারা। ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসে। স্কুলের পিওন হবে। বেশ গম্ভীর উৎসুক টোনে জিজ্ঞেস করে, ‘কি বাহে এটি কী? কোনো সাহায্য হবি না।’

‘না বারে কোনো সাহায্য-টাহায্যর জন্য আসো নাই। কিছু ঘি ছিল, বাড়ির তৈরি। নিজের হাতের।’

 

‘কেমন ঘি? নিয়াইসেন, স্যারেরা নিবা পারে।’

সে পিওনের পিছে পিছে এগোয়। একসময় নিজেকে সাজানো এক ঘরে দেখতে পায়। হেডমাস্টারের কক্ষ। লোকটি ভালো। মুখে স্মিত হাসি। গালজুড়ে চাপ দাড়ি। চোখে কালো ফ্রেমের স্বচ্ছ চশমা। পরনে সাদা পাজামা ঘি-রং পাঞ্জাবি। মাথায় বাহারি টুপি বেশ। তার শরীর থেকে নাম না জানা আতরের সুবাস ভেসে আসে। পিওনের সঙ্গে কিছু কথা হয়। শেষে তার দিকে তাকিয়ে বেশ ভারী গলায় জিজ্ঞেস করেন, ‘বাড়ি কোথায়? নাম কী?’

‘নাম বাবু হামার বিনোদ। বিনোদ ঘোষ। বাড়ি যশাইহাট।’

 

‘সে তো অনেক ঘোরা পথের জায়গা। এত দূর আইলেন? ওত্তি কাঁহো ঘি খায় না নাকি?’

‘সেই তো বাবু! ওই যে কথায় কয় না, গাছের তল নিজের ছায়া পায় না। আর নিজ গাঁয়ের ঠাকুর ভিনদেশে কুকুর।’

‘কথা তো ভালোই কছেন। দেখান কেমন ঘি আইনছেন?’

বিনোদ দেরি করে না। কাঁধে ঝোলানো থলে নামায়। তেল না ঘি, কি যে লেগেছে, থলেটি চটচটে ময়লা কালো। সে ওর ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একে একে কয়েকটি প্লাস্টিকের বোতল বের করে আনে। এসব বোতলে অন্য কোনো পণ্য ছিল। ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার। রি-সাইকেল। বোতলের গলা-অবধি ঘি-রং তরল পদার্থে ভর্তি। সে একটির মুখ খুলে উপরে তুলে ধরে। এরমধ্যে হেডমাস্টারের কক্ষে আরও কয়েকজন শিক্ষক এসে পড়েছে। সবাই একটু একটু করে হাতে নিয়ে পরখ করতে থাকে। স্বস্তির নিঃশ্বাস। ঘি’এর সুবাস ঘরময় ছড়িয়ে যায়। একেবারে খাঁটি ঘি। আজকাল এমন জিনিস খুব একটা দেখা যায় না। সবকিছুতে ভেজাল। দুই নাম্বার। মানুষগুলোও দুই নাম্বার...ভেজাল। একজন জিজ্ঞেস করে বসে, ‘তোমার ঘিয়ের দাম কত? বোতলে কতটুকু আছে?’

‘বাবু প্রতিটায় আড়াই শ গ্রাম, বোতল তো দেখা পাছেন। দাম বেশি নহায় বাবু। নিজের হাতে তৈরি করা। বাজারে সাত শ টাকা কেজি। তোমার কাছে পাঁচশ টাকা দরে এক বোতল একশ পঁচিশ।’

‘একশ করি নাও।’

হেডমাস্টার বলে উঠেন। সে কথায় সায় দেয় অন্য কয়েকজন। পিওন লোকটি শুধু নির্বিকার। দেখে বোঝা যায় খুব ঝানু মানুষ। সে বলে ওঠে, ‘আগে টেস্ট করি দেখা লাগবে, ঘি আসল কি না।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক, এখন তো সেন্ট আর গ্রিজ দিয়ে ঘি তৈরি হচ্ছে।’

‘স্যার নামি দামি মিষ্টির দোকান ছানার বদলে টিস্যু পেপার দিয়া মিষ্টি বানাছে।’

‘তা তুমি ঘি পরীক্ষা করো না কেন? বুদ্ধি কী?’

বিনোদ এদিক ওদিক তাকায়। একজনের মুখের কথা শেষ হলে অন্যজন খোলে। সে লাট্টু চক্করের মতো মাথা ঘোরায়। চোখ মেলে তাকায়। ব্যবসা করতে গেলে এসব ঝামেলা হয়। এ অভিজ্ঞতা নতুন নয়। সেও সময়ে অনেক কথা বলে। আজ বলতে পারছে না। বেশ ক্লান্তি লাগছে। সকালে যশাইহাটে দু-খানা পরোটা মিষ্টির রস দিয়ে খেয়েছে। মিষ্টি খাওয়া বারণ। বহুমুত্র। ঘন ঘন প্রস্রাব। মুখ শুকিয়ে আসে। মাথা ঘোরে। ক্লান্তি লাগে। শরীর আউলে যায়। রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে নাকি এমন হয়। সে-সব কথা জানে...কে শোনে? তার নিজের কথা কারও জানার বিষয় নয়। তার কষ্ট নিজের ভেতরে থাক। ব্যবসা করতে হবে। মন না চাইলেও দুটো কথা বলতে হবে। এবার সে বলে, ‘প্রতিটা বোতল খুলি দেখেন। বাসনা দেখেন। হাতে নিয়া দেখেন। ঘি মুই নিজের হাতে তৈরি করো। মুই ঘোষ বাহে। মোর দোকান ছিল। দই ঘোল ঘি আর মাখন বেচাছিনো। সেই দোকান বেচে খানো। আইজ অভাবের স্বভাবে দ্বারে দ্বারে বিক্রি করা লাগছে।’

‘সে কথা ঠিক আছে বাহে, একটা জিনিস কিনিবার আগে দেখা লাগে। এর আগের বার এক মধুঅলা আসি মধু বলি মিষ্টির সিরা আর চিটাগুড় দিয়া গেইছে।’

‘না না বাবু তোমরা কিনিবেন। চোখে দেখি কানে শুনি পরখ করি নেবেন। দিনদুনিয়া খারাপ। দেখেন দেখেন। কয়টা বোতল নেবেন?’

হিসাব করে সাতটি বোতল বিক্রি হয়ে গেল। বিনোদ সার্টের বুকপকেটে সাতশ টাকা ভরে রাস্তায় বের হয়। হাতে টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোত্থেকে যে শক্তি আসে কে জানে। তার বেশ ভালো লাগে। এখন বাসে চড়ে ফুলবাড়ি হয়ে পার্বতীপুরের পথে নিজের ঠিকানায় রওয়ানা হওয়া যায়। একেই বলে দুনিয়া। আজ তাকে সেই কাজ করতে হলো যা সে কোনোদিন করেনি। কখনো ভাবেনি। মনের মধ্যে ভয় ছিল। মানুষে না দেখুক নারায়ণে দেখছেন। তার দুচোখ সবসময় খোলা। সমস্ত দুনিয়া তার খোলা চোখে উদোম হয়ে আছে। যে কেউ শত কৌশলে কোনোকিছু গোপন করার চেষ্টা নিক না কেন তার দৃষ্টি আর মনোযোগে লুকোন যায় না। মানুষের চোখ সামনে যা দেখে তাকে সত্য বোঝে। সেই খোলা চোখের দেখা অনেক সময় নির্ভুল নাও হতে পারে। বিনোদের চোখে ছানি পড়তে শুরু করেছে। দিনের উজ্জ্বলতায় যা কিছু দেখা যায়, অল্প আলোতে অনেককিছু ঝাপসা। ডাক্তার বলেছে পুরোট না হলে কাটা যাবে না। কাটলেও যে আগের মতো দেখতে পাবে এমন কোনো কথা নেই। বিনোদ সে কথা জানে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বেশ বুঝতে পারে। দু-বছর পেরিয়ে যায় অপারেশন হয়েছে। চোখে ছানি কেটে তুলে ফেলা অনেক কষ্টের কাজ। মা কিছু টের পায়নি। এখন তার দুচোখে ভারী লেন্সের চশমা। তবু কাউকে ঠিকমতো চিনতে কষ্ট হয়। ছায়া ছায়া কাঠামো দেখে। গতকাল মা দেখতে পাবে না নিশ্চিত হয়ে বিনোদ কাজে বসেছিল। কিন্তু বুড়ি ঠিক চিনে নিয়েছে। সারাদিন সারারাত বারান্দায় শুয়ে বসে থাকে। সেখানে খড় দিয়ে তৈরি গদি তুলোর মতো নরম করার কত চেষ্টা। মায়ের হাতের কাছে পেতলের ঘটি। তার মধ্যে টিউবওয়েলের জল। মা মাঝে মধ্যে গলায় ঢালে। কখনো আবার সেই জলে দুচোখ ধোয়। দেখতে নাকি ঝাপসা লাগছে। মানুষজনকে চিনে নেয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা। শেষে জিজ্ঞেস করে...কথা বলে। বিনোদ জানে, যা একবার চলে যায় আর ফেরে না। মায়ের বয়স চলে গেছে। চোখের জ্যোতি নেই। একদিন তাকে কাঁদিয়ে চলে যাবে। এখন শুধু ঘাটের অপেক্ষা। যা আছে শুধু মুখ আর নাকের তেজ। তখন বিকেলের ছায়া ছায়া আলো। সে বোতলে ঘি ভরে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে অদ্ভুত সৌরভ। বুড়ি বারান্দায় পেছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসেছে। এদিক-ওদিক হাতড়ানো দৃষ্টি মেলে কিছু খোঁজে। তারপর বলে ওঠে, ‘এটা কি ঘি বানাছি বিনোদ? তেমুন কুনো বাসনা নাই। কেমুন পচা পচা তেল তেল লাগোছে বা।’

‘তুই চুপ করি শুতি থাক মা। ভাত খাইছি?’

‘হয় বা।’

বিনোদ জানে সে কি তৈরি করেছে। এসব করতে মন চায় না। ছয় মাস পার হলো, দুটি গাভী চুরি হয়ে গেছে। এখন গোয়ালে একটি মহিষ। গাভীর দুধ অমূল্য খাদ্য। সেই দুধের মাখন তুলে যে ঘি তৈরি হয় তার স্বাদ আলাদা। বোতল বা বয়ামে ভরে রেখে দাও মাসের পর মাস। কিছু হবে না। গন্ধ ধরবে না। পচবে না। কুখাদ্য হবে না। পুরোনো ঘিয়েরও দাম আছে। কিন্তু দুধের সর তুলে যা তৈরি, অনেকদিন রাখা যায় না। মহিষের দুধ? সে দুধ ঘন আর ভারী। মোটা মোটা সর পড়ে। সে সরে তৈরি ঘি, না না বিনোদের মন চায় না। এ হাতে কত ভালো ভালো জিনিস তৈরি করেছে। চিনিপাতা দই, টক দইয়ের ঘোল, সন্দেশ, মাখন আর ঘি। যশাইহাটে সপ্তাহে দু-দিন বাজার। রবি আর বৃহস্পতিবার। শেষের দিনে আয়োজন হয় জমজমাট। বিশাল এলাকাজুড়ে গমগম করে মানুষ। সে তার দোকানে বসে এটা-ওটা বেচার ফুরসত পায় না। এত ভিড়! তার নাম যশ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশ। দই-মাখন-ঘি নিলে বিনোদ ঘোষ। তার ঘোল খাও, একেবারে প্রাণ শীতল-ঠান্ডা।

বিনোদ কাজ শিখেছিল মায়ের কাছে। মা রোজ সকালে গাইয়ের দুধ দোহায়। সেই দুধের মাখন...মাখন থেকে ঘি। সেটি হলো খাঁটি ঘি। হাতে লাগলে সুবাস সারাদিন লেপ্টে তাকে। মা তাকে শেখায়, গাভী হলো মা। মায়ের সন্তানকে আগে খেতে দিবি। সেই সন্তান কে? বাছুর। নারায়ণ গাভীর বাটে অফুরান অমৃত দিয়েছেন। আগে বাছুর খাবে। তারপর বাড়তিটুকু নিবি। সেই দুধ দিয়ে যা তৈরি করবি বাপ, ভেজাল দিস না। ভগবানে সইবে না। অন্যদিক দিয়ে দাম তুলে নেবে।

বিনোদ আঙিনায় দাঁড়িয়ে আরও একবার পকেটে হাত দেয়। আছে ঠিকঠাক আছে। টাকা খোয়া যায়নি। আজকাল বাসে ট্রেনে পকেটমার। কে কার পকেট কাটছে বোঝা মুশকিল। কলেজে পড়া ছেলেদের মতো ভদ্র পোশাক। মানুষের চোখে ধুলো দেয়। চতুর কৌশলে চোখের অগোচরে চুরি করে। আজ সেও মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে এসেছে। সে এক চোর। চোর। তার অন্যকোনো উপায় ছিল না। কোনো সংস্থান নেই। সে জিনিস বিক্রি করেছে। গোপনে কারও পকেট কাটেনি। বলেছে, দেখে-শুনে নেন। তাদের চোখ আছে। সেই চোখে কোনো ছানি নেই। ছানি শুধু তার দুচোখে। এখনো পুরোটা হয়নি। দিন এলে অপারেশন করাবে। তার দুচোখে ভারী মোটা লেন্সের চশমা থাকবে। তারপর মানুষ দেখা আর চেনার প্রাণান্ত চেষ্টা। কেমন দিনকাল হবে তখন? সইতে পারবে তো?

সে রাতে দুটো গাভী চুরি হয়ে গেল। পরদিন ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করতে যায়। সেখানে আজিমুদ্দিন মেম্বার শত কাজে ব্যস্ত। সরকার ঘোষিত সারের ভর্তুকির টাকা দেয়া হচ্ছে। লোকজনের অস্থির ভিড়। সে একে-ওকে ঠেলে ব্যস্তত্রস্ত তার কাছে হাজির। করজোড়ে বলে, ‘মেম্বার স্যার মোর দুইটা গরু চুরি হইছে। একটু দেখেন তো পাওয়া যায় কি না।’

‘মুই কি মাইনষের গরু নিয়া বসি আছো...পাহারা দাও? থানাত যা। ওঠে ডায়রি করা লাগবে। গরুর রসিদ আছে?’

‘সে তো কবা পারেছো না। আগরেটার থাকিবা পারে। এই গাই দুইটা তো মোর বাড়িত হইছে।’

‘তোমহার গরু, সাবধানে থাকিমেন না? চোর তো চুরি করিবে, তোমাক পাহারা দিবা নাগিবে।’

বিনোদ সব বুঝে নেয়। মন বিমর্ষ করে ঘরে ফিরে আসে। এর দু-দিন পর কেউ একজন উড়োকথা বলে, পার্বতীপুর নতুন বাজারে তার একটি গাভী দেখা গেছে। সে শ্যামল মুদির কাছে থেকে একশ টাকা ধার করে ছুটে যায়। কিন্তু না, অনেক দেরি হয়ে গেছে তখন। সে পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করে। খোঁজার চেষ্টায় মুখ-জিহ্বা খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। বিমর্ষ অস্থিরতা দেখে কেউ কেউ বলে ওঠে, সকল গরু তো একই রকম দেখতে, কোনটি কার, কে নিশ্চিত করে বলে? সেই থেকে বিনোদ বসে গেল। শুরু হলো আবার নতুন করে গড়ে তোলার জীবন।

বিনোদ ঘরে গিয়ে টাকা রাখে। আঙিনায় ফিরে টাঙানো দড়িতে শার্ট-গেঞ্জি মেলে দেয়। প্রচন্ড ভ্যাপসা ঘামের গন্ধ। তার নাক মুখ কুঞ্চিত হয়। টিউবওয়েলের পাড়ে মুখের ভেতরে জমে থাকা থুতু ফেলে। সেখান থেকে মুখ ঘুরিয়ে বারান্দায় তাকায়। মনে হয় শত শত মাইল দূরে এক অচেনা বারান্দায় শুয়ে আছে তার মা। আজ সে মায়ের শিক্ষা...মায়ের দীক্ষা বেচে এসেছে। এতদিন যা বুকের সিন্দুকে খুব যত্নে রেখেছিল, পণ করেছিল; এই অমূল্য সম্পদ কোনোদিন কোনোখানে হারাবে না। সে নিজে থেকে সব বিক্রি করে এসেছে। তার দুচোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। কষ্ট হতে থাকে। সে সামনে কিছু দেখতে পায় না। চোখের মণিদুটো সাদা মার্বেলের মতো কঠিন পাথর। সে দুটো পাথর গলে যেতে থাকে। সে জানে কি হারিয়েছে। সেই কষ্ট আর সম্পদের কথা বুড়ি মা জানতে পারল না। জানার কথা নয়।

অনেক কষ্টে তিলতিল ধৈর্যে তৈরি করেছিল সম্পদ। এখন সেই বয়স নেই। ক্ষমতা নেই। সবচেয়ে বড় দরকার চোখের দৃষ্টি। সে ঠিকমতো দেখতে পায় না। তার দুচোখে ছানি। একদিন পুরোটা হবে। তারপর অপারেশন। তখন স্পষ্ট করে দেখতে পাবে কি না কে জানে! আজ যেমন অচেনা মানুষের কাছে ঘি বেচে এসেছে। তাদের চোখে কোনো ছানি নেই। সে একজন লোক যার দুচোখে ছানি, তাদের দৃষ্টিকে ধুলো দিয়ে এসেছে। সে জানে না সদা-জাগ্রত নারায়ণ দুচোখের ছানি সারিয়ে দেবেন কি না...নাকি তার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়ংকর অন্ধকার রাত। যেভাবে দৃষ্টিসক্ষম মানুষের দুচোখে আজ শুধুই অন্ধকার।

তাদের ছানি ঘোলা দৃষ্টি।                   



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ জুন ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়