ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছোটগল্প || ন বৃত্তীয়

রুমা মোদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ২৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটগল্প || ন বৃত্তীয়

অলঙ্করণ : শতাব্দী জাহিদ

এক ঝিঁ ঝিঁ ডাকা মোহময়ী সন্ধ্যায় চাঁদ একটু উঁকিঝুকি দিচ্ছে গোপণ প্রেমিকার মতো, হাতের মুঠো গলে তার এক টুকরো ভবিষ্যতের স্বপ্ন সূর্যাস্তের হলুদ খামে করে উড়ে উড়ে আসে আমার দিকে। অসীম সবুজে ছাওয়া মাঠে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে মহাকাল, আমি এক তুচ্ছাতিতুচ্ছ বুদবুদ আছি শুয়ে। শুয়ে আছি বুদবুদসম জীবনকে এক বিশাল রিলে রেসের মাঠ জেনে দৌড়ে জিতে যাওয়ার বাসনায়।

ঠিক তখন কাছে কোথাও পুলিশের তীব্র বাঁশি, হৈ চৈ বুটের থপথপ দৌড়ানোর আওয়াজ...। কেউ কী চিৎকার করে বলে, সুবোধ তুই পালা..., স্বপ্ন নয় দুঃস্বপ্ন আসছে ধেয়ে সুনামি উঁচু ঢেউয়ের মতো। আসছে তছনছ করে দিতে স্বপ্নসকল, আসছে এই চাঁদের নরম জোছনামাখা রাতের অপেক্ষা মোড়া সূর্যোদয়ের সকল আয়োজন গিলে খেতে, সুবোধ পালা, সুবোধ পালা, সময় এখন তোর অনুকূলে নয়...।

হঠাৎ গগন বিদীর্ণ করে বন্দুকের ঠা ঠা, করুণ গোঙানির সুরে জীবনের নিষ্পন্দ হবার শেষ শিঙ্গা। তীব্রতর পুলিশের হুইসেল, সম্মিলিত ফিসফাসে ভয়াবহতার আতঙ্কিত বিদীর্ণতা... তখন আমি পিছু ফিরে তাকাই কী তাকাই না, কী ঘটে, কী ঘটবে বুঝি কী বুঝি না, আমি দৌড়াই... দৌড়াই... কেবল কীট পতঙ্গসম বেঁচে থাকার বাসনায় দৌড়াই। যেনো এই গুলির ঠা ঠা ন্যায় কী অন্যায় ফিরে দেখা জীবনের উদ্দিষ্ট নয়, মনুষ্য জীবনের সার্থকতা নয় প্রতিবাদ প্রতিরোধে, কেবল স্বার্থপর জৈবিক জীবনে বেঁচে থাকাই বাসনা তার। আমি দৌড়াই, দৌড়াই...।

হাঁফাতে হাঁফাতে থামি এক বিস্তীর্ণ প্রান্তরে, যখন অসীম দূরত্বে মানবিক বোধের হাতছানি, চোখ রাঙানো নেই শিক্ষা রুচি দায়বোধে গড়া কোনো বিমূর্ত বিবেকের। এক বিস্তীর্ণ প্রান্তর, দৃষ্টি মেলে দেখতে চাই আদিগন্ত প্রান্তরের। দৃষ্টি থেমে যায় এক ঘন বসতির লোকালয়ে, থেমে যায় এক নিরবিচ্ছিন্ন ধুলা ওড়া পথে, দৃষ্টি থেমে যায় বাজ পড়ে জ্বলে যাওয়া কিছু তাল গাছের সারিতে... কোথায় যাবো আমি কোথায়... বসতি ঘিরে দারিদ্র্য, অভাব, ক্লান্ত হাটুরে মানুষের সারিতে হুমড়ি খায় দৃষ্টি আমার... হুমড়ি খায় অতর্কিতে ঝলসে যাওয়া বাবুইয়ের নীড়ে। পথ পাই না খুঁজে কোন দিকে যাবো আমি? কোন দিকে?

আমি থামি, হাঁফাই... প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস ছুটে প্রশ্ন হয়ে হয়ে কতো দিন থেকে পালাচ্ছি আমি? কতো দিন? হঠাৎ কেউ ডাকে, কড়া নাড়ে স্মৃতির কয়েদখানায়... বাপ আমারে লইয়া যা বাপ...।

মা... মা...।

সোহানা ডাকে, স্যার... স্যার...। 

রোদে পোড়া কৃষক আমার বাপ। স্থানীয় ভাষ্যে যাকে বলে গিরস্থ। গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গরুর খাঁটি গিরস্থ বাপ আমার। নিজের হাতে মাটি কুপিয়ে প্রাণ জাগাতেন অক্লান্ত। ধুপধাপ। ধুপধাপ। যে সদয় হাতের মায়ায় মোহাবিষ্ট সুফলা মাটি অধিক ফলবতী ফেঁপে ওঠে অধিক ঊর্বর গর্ভের মতো উথলে দিতো গোলা উপচানো শস্য, সে হাত বড়োই নির্দয় ছিলো আমার মায়ের পরির মতো পবিত্র সুন্দরে। আহা মা, বর্ষার ঘনায়মান মেঘের মতো দীঘল চুল ছড়ানো মা আমার, ঘোর বর্ষণে বিজলী চমকের মতো গিরস্থের ঘরে ঝলসে ওঠা রূপের বন্যার মা আমার। এই রূপের দোহাই, জানে সে, জানে আমার বাপ আর সাক্ষী চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা। উন্মাদ যুবক পিতা আমার, যখন সে পিতা হয় নাই আমার, নাওয়া-খাওয়া ভোলা এক মজনু। দিন কাটে তার আমার মাতার অপেক্ষায়, যখন সেও মাতা হয় নাই আমার, তার বসতবাড়ি আড়াল করা বাঁশঝাড়ের ঝোঁপে। নিজেদের নির্ভয় আবাসে উৎপাতে সন্ত্রস্ত লাল পিঁপড়ের দল ঝাঁপিয়ে পড়ে গায়ে, বিষাক্ত দংশনে লাল ফুলে ফুলে ওঠে অনুরক্ত অপেক্ষা তার, কখন সে দেখে একটুখানি ছায়া এক স্বর্গের পথ ভোলা এক রূপবতী পরির। যে রূপের ছটায় পুড়ে যায় যুবকের স্বাভাবিক দিন, তেতে ওঠে দুর্বহ রাত।

এই রূপের দোহাই, জানে সে, জানে আমার পিতা আর সাক্ষী চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা উন্মাদ যুবককে ফেরায় ঘরে আমার মাতার রূপ। যে রূপে উন্মাদ আত্মভোলা মজনু সে ছিলো একদা, সেই মজনু কেমন ঘরে ফেরে, লাঙল-জোয়াল নেয় কাঁধে, তার পরিশ্রমে ফিরে কিছু বৈভব। দিনের প্রবল সফল গিরস্থ রাতে এক রূপবতীর কাছে নতজানু।

আহা মাতা বলতেন, কী সুখের দিন ছিলো তার যেনো রূপকথার মতো... অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো। আহা, আহা যদি রূপকথার শেষের মতো হতো শুরু থেকে শেষ, শেষ থেকে শুরু! হতেই পারতো। লক্ষণ ছিলো সুস্থিত। রাত গভীর হলে পরির মতো এক রূপবতীর কাছে বড়োই আদর কাতুরে শিশু যেনো, বউ ফসলের ভারে যে উপচে উঠেছে গোলা আমার, তোর কী চাই ক তো!

মাতা আমার অষ্টম মাসের পোয়াতী তখন, পেটের ভেতরে হাত পা ছুড়ি আমি। মা ব্যথায় নুইয়ে যান, মাতৃত্বের গৌরবে চকচক করে তার মোম মসৃণ পেট- পিতার হাতখান তার উপর রাখেন মাতা, পোলা হোক কিংবা মাইয়া কন একখান সোনার নেকলেস গড়াইয়া দেবেন! এ আর কী আকাশ কুসুম আবদার তোর পরি, ভাবছিলাম তরে চমক দিমু, আগেই চাইয়া ফালাইলি!

হায় স্বপ্ন, নারীর স্বপ্ন। রূপবতীর গৌরব অঙ্গে গাথা কিংবা বৈভবের অহংকারে ডুবে থাকা অথবা দারিদ্র্যের দৈন্যের সাথে লড়াই করা শুধুই নারী, স্বপ্নদৌড় তার পৌঁছায় না একখানা নেকলেসের উর্ধ্বে তার কপালেও নামে ভূত চতুর্দশীর মতো ভুতুড়ে অন্ধকার। চারদিকে থৈ থৈ নববর্ষার ক্রমাগত ফেঁপে ওঠা সুখের মাঝে হঠাৎ কোন ভূত দেখে পিতা আমার। মায়ের মায়াবী আঁচলে সে প্রবল বিষাদে আবিষ্কার করে সন্দেহের হুতাশন। নিঃশব্দে হারিয়ে যেতে থাকে আকর্ষণ কিংবা প্রেমময় চিহ্ন সকল। 

অথবা প্রচণ্ড প্রবল হয় সেই আকর্ষণ আর প্রেম, যার ভার বইতে জানে না মাটি কোপানো বাপ আমার। ঘরে সুন্দরী বউকে ঘিরে তীব্র তুমুল অনিরাপত্তার তপ্ত হুতাশনে জ্বলে সে, যে তাপের জন্ম তার অন্তরে অথচ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্পিত হয়নি তার শিক্ষা রুচি কিংবা বিবেচনায়।

ছয় বছর বয়স তখন আমার, মক্তবে আমপারা পড়ি আর ঘরে জায়গীর স্যারের কাছে বর্ণমালা। স্পষ্ট মনে পড়ে, স্পষ্ট মনে পড়ে আমার। গর্ভের নিরাপদ কুঠুরীতে কান পেতে আমি শুনেছি যে সোহাগের আবেগী পঙ্‌ক্তিমালা আর পেয়েছি যে স্পর্শের উষ্ণতা, পৃথিবীর আলো হাওয়ায় আমি অপক্ক দৃষ্টিতে দেখি পিতামাতার অকারণ নিশ্চল যুদ্ধ।

ঘরে ঢুকে মায়ের রঙিন শাড়িতে সে দেখে ভ্রম, যেনো বাহারী পুষ্প আহ্বান করে প্রজাপতি। মায়ের লক্ষ্মী চরণযুগলে সে খোঁজে কূলভাঙা কলঙ্কিনীর পদছাপ। বিনা কারণে হাতের নাগালে সহজলভ্য চেলিকাঠ ভাঙে সে মায়ের স্নেহময় মোলায়েম পিঠে। আহা! অ তে অজগর ঐ আসছে তেড়ে, আ তে আমটি আমি খাবো পেরে... জায়গীর স্যারের কাছে জপতে জপতে, মাতৃকণ্ঠে মৃত্যুর মতো আর্তনাদ শুনতে শুনতে আমি মুখ লুকাই জায়গীর স্যারের কোলে। জায়গীর স্যার বলেন, আহা! ছেলেটা বড়োই সুবোধ।

পিতামাতার জাহান্নামের দাম্পত্যে শৈশবের অবোধ সারল্য ভুলে আমার নিতান্ত সুবোধ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না আর। সুবোধ আমার।

তারপর কী হয় কে জানে, একদিন কাকডাকা ভোরে প্রলম্বিত হয় পিতার হুংকার। ঘুমের প্রাণহীন ভুবনে তলিয়ে থাকা আমি শুনি চিৎকার, সব পুড়াইয়া দিমু আমি, সব জ্বালাইয়া দিমু, সব ছারখার কইরা দিমু আমি। পিতার শরীরে যেনো অপ্রতিরোধ্য বন্য হাতির উন্মত্ত বল। ধানের গোলা উল্টায়ে ফেলে সে। চুরমার ভাঙে মায়ের যত্নে গড়া গার্হস্থ্য সিন্দুক। দিনমান গান বাজা রেডিও... কিচ্ছু রাখবে না সে, কিচ্ছু না। আপাত আতঙ্কের রেশ অতিক্রম করে আমি দেখি, মা নাই। মা নাই আমার কোথাও নাই...। 

আমার মা যদি ঘরের কড়িকাঠের সাথে ঝুলতো প্রাণহীন দেহ হয়ে, আমার মা যদি নীল নিষ্প্রাণ শুয়ে থাকতো বিষের নীল ধারণ করে মোমমসৃণ অঙ্গে, আমি জানি মরণের দুঃখে মহতী পুরাণ হয়ে উঠতো জীবন তার। কিন্তু আমার মা যে পালিয়েছে জীবনের মোহে জায়গীর মাস্টারের সাথে, বেঁচে থাকার আকণ্ঠ তৃষ্ণায়। হায় পৃথিবী নির্দয় পৃথিবী জন্মের জয়গান গাও তুমি আর মৃত্যুতে খোঁজো মহত্ব মানবের। বেঁচে থাকা জীবনের কতো চুলচেরা হিসাব নিকাশ মনুষ্য সমাজের, রীতির প্রথার আচারের আইনের বিচারের। সব হিসাব কড়ায় গণ্ডায়, কেবল মূল্যহীন এই বেঁচে থাকার তৃষ্ণার হিসাব।

 যখন টর্নেডোর মহাপ্রলয় থেমে গেলে ধ্বংসস্তূপের ওপরে পিতা স্তব্ধ বসে পরেন জায়নামাজে, কাঁধের লাঙল আর পূর্ণ ধানের গোলার বৈষয়িক মোহ ত্যাগ করে আশ্রয় নেন মসজিদে-মসজিদে। যখন তখন চলে যান তাবলিগের কাফেলায়...। পিতা কী দগ্ধ হন অনুতাপের আগুনে? শান্তি খোঁজেন কল্পনারও অতীত শক্তিমান শক্তির কাছে? কে জানে? কে জানতো! অজানার বয়স আর অবোধ্যতায় বড়োই নিরাশ্রয় হয়ে পড়ি আমি।

দিনকয় পরে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে আসি জায়গীর স্যারের ঘরে, মায়ের গন্ধের নেশায়, আশ্রয়ের নেশায়। অতল মাটি থেকে শিকড় ছেঁড়া এক চারাগাছ আমি রোপিত হই তলাবদ্ধ পাত্রে। হই বটে, খেয়ে পরে বর্ধিত হই, স্কুলে যাই, ক্লাস ডিঙাই কিন্তু প্রতিদিন প্রতিপদে টের পাই নিয়ম ভাঙা এই অনিয়মের সংসারে বড় অনাহুত আমি, বড়োই অনাকাঙ্ক্ষিত। গর্ভধারিণী মা বড়ো অচেনা এই নিয়মহীনতায়। স্কুলের ক্লাস ডিঙিয়ে কলেজের গেটে ঢুকতে না ঢুকতেই দেখি জায়গীর স্যারের হাভাতে জীবন, একের পর এক ব্যবসায় অসফল জায়গীর স্যার তখন দুই সহোদরের পিতা। ঋণে জর্জরিত সংসারে ঠিকমতো হাড়ি চাপে না চুলায়। দেখি তখন ঠিক আমার পিতার এক ছোটখাটো সংস্করণ হয়ে হাতে চেলি নিয়ে তার যাবতীয় ব্যর্থতার প্রতিশোধ নেয় মায়ের উপর। মায়ের তীব্র চিৎকার বাঁচাও... বাঁচাও... কোনো কোনোদিন উত্তপ্ত সীসা হয়ে কর্ণকুহর বেয়ে অন্তর ছুঁয়ে পৌঁছে যায় শিরায় শিরায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে। মেরুদণ্ডহীন কেঁচো আমি, মাকে বাঁচাতে যাবার তীব্র বাসনা আর আত্মবিশ্বাসের ভঙুর দুর্বলতায় ক্ষয়ে যাই। পারি না, সহ্য করতে পারি না। আমার মা চিৎকার করে বাঁচাও বাঁচাও... আর সেই চিৎকার সহ্যের অতীত হলে আমি পালাই। আমি পালাতে শুরু করি।   

হায় জীবন, পলায়নপর জীবন আমার। নোঙর ফেলি শহরের জলহীন ছায়াহীন আবর্জনার জঙ্গলে। জীবন বড়োই নির্মম এই ইট পাথরের প্রাণহীনতায়। তবু দু’পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কেবল অস্তিত্বে টিকে থাকার লড়াইয়ে, এক পা দু’পা বাড়াই, হাঁটি। হোঁচট খাই, রক্তাক্ত হই আবার হাঁটি। আবাস হয় গলিঘুপচিময় এক কিনু গোয়ালার গলিতে। সেখানে আমি ছাড়া থাকে আরো কয়েক মনুষ্যপ্রাণী, আমার মতোই নানা সংকটে যারা আষ্টেপৃষ্ঠে জর্জর। সেই মাছের পঁচা কানকো, পঁচা কাঁঠালের উচ্ছিষ্ট, মরা বিড়াল, ডাস্টবিন উপচে পরা আবর্জনা দরজায় রেখে দিনে কলেজ যাই, আর রাতে টিউশনি, সন্ধ্যা থেকে প্রায় মধ্যরাতে ফিরি মাতাল নেশাখোরদের হুল্লোড় ডিঙিয়ে। 

হেঁটে হেঁটে পাড়ি দেই উপার্জনের বন্ধুর পথ। রাস্তায় তাড়াহীন গাড়ির সারির মুখগুলো দেখে ভাবি কতোটা সুখে এমন চকচক করে ত্বক! এমন উজ্জ্বল হাসে নিশ্চিত জীবন!

হাঁটি, টিকে থাকি আর সুবোধ আমি নিজেকে প্রবোধ দেই, এখানে মায়ের আর্তি আমাকে ছিন্নভিন্ন করে না দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে। দু’তিনটে সার্টিফিকেট এক করে দৌড়াই দরজায় দরজায়, চাকরির নাম সোনার হরিণ। এ শহরে কোনো ডাল নেই আমার, একটু আঁকড়ে ধরি। কোনো পাতা নেই, ক্ষুদ্র পিঁপড়ের মতো বেয়ে বেয়ে সন্ধান করি নিরাপদ আশ্রয়ের। দপ্তর থেকে দপ্তরে, তবু কারো দয়া হয়। ডাক পাঠায় সাক্ষাৎকারের। মুখোমুখি কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা অযোগ্যতার বিনিময়ে।

ইন্টারভিউ-১

এই সার্টিফিকেট দিয়ে কী চাকরি আশা করেন আপনি?

স্যার খেয়ে পরে বেঁচে থাকার মতো সামান্য চাকরি একটা।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী কর্মকর্তারা তাকায় পরস্পর।

আপনার পরিবারে সদস্যসংখ্যা কতোজন?

আমি একা স্যার।

তারা আবার তাকায় পরস্পর।

এই শহরে একজন মানুষের খেয়ে পরে টিকে থাকতে কতো টাকা লাগে?

কতো টাকা লাগে? কতো টাকা লাগে? হিসাব তো করিনি কোনোদিন! কেমন ভাবে থাকা এই থাকা? এই শহরের জ্যামে ফসিল হয়ে থাকা সার বাঁধা গাড়ি কি হিসাবে ধরবো? নাকি রেলগাড়ি দিয়ে আসতে আসতে নাক চেপে ধরা দুর্গন্ধময় বস্তির দিন, নাকি সোহানা যে বায়না ধরে, চলেন বসুন্ধরার ফুড কোর্টে যাই, সেই জীবনের হিসাব করবো? খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে কতো টাকা লাগে? টিকে থাকতে কতো টাকা লাগে?

লাখ টাকার এক প্রশ্ন নিয়ে ব্যর্থ আমি বের হয়ে আসি। আবার হাঁটি... হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই সোহানার ঠিকানায়।

পুরুষ হবার বৃত্তান্ত

সে তখন নবম শ্রেণি, সে তখন ষোল। আমার পলাতক ছায়া ছুঁয়ে তার স্বপ্ন শুরু হলো। ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি দুই সমকোণের সমান বুঝতে বুঝতে কন্যা কখন যে মোবাইলের নাম্বার মুখস্থ করে নিলো আমি সুবোধ পারি নাই বুঝতে!

আমি তারে সম্পাদ্য বুঝাই, সে বলে, স্যার ধানমন্ডি সাতাশে দারুণ একটা কফি শপ হয়েছে চলেন একদিন খেতে যাই।

আমি তারে ভয়েস চেঞ্জ বুঝাই, ইম্পারেটিভ সেনটেন্সে ভয়েস চেঞ্জ করার সময় লেট দিয়ে শুরু করতে হয়, যেমন...। সে বলে, স্যার কারিনা কাপুরের ছেলে তৈমুরের চোখ দুটো একেবারে কারিশমা কাপুরের মতো। দেখছেন ইউটিউবে?

হায় খোদা! কে তৈমুর কে কারিশমা! আমি কী তার খবর জানি? না জানার প্রয়োজন রাখি? কেমনে বুঝাই এই মেয়েরে! মেয়ে জ্যামিতিটা বুঝো, ভয়েস চেঞ্জ বুঝো। নইলে টিউশনিটা যাবে আমার!

সপ্তাহে পাঁচদিন পড়াতে আসি বিনিময়ে সোহানার চাকরিজীবী বাবা হাজার দু’য়েক টাকা দেন। সেই টাকায় আপাতত খাওয়া-পরার বেশ খানিকটা যোগান হয় আমার। এই মেয়ে এসব বোঝে না।

দিন নাই রাত নাই, মোবাইল আমার যন্ত্রণায় কঁকিয়ে ওঠে। ক্যাক ক্যাক... স্যার এবার জন্মদিনে আপনাকে একটা স্মার্ট ফোন কিনে দেবো। ফেইসবুক, হোয়াটস আ্যপ, ভাইবারে একাউন্ট খুলে দেবো। তারপর ভিডিও কল দিয়ে কথা বলবো!

হায় সুবোধ আমি, মাটি কোপাতে কোপাতে যে পিতা জন্ম দিয়েছে আমাকে, সে মাটিতে ঠাঁই হয় নাই আমার। শেকড় ছিঁড়ে ঠাঁই হয় যেখানে, সে মাটি ঠাঁই দেয় না আমারে। কিংবা আমিই গাঁথি না শেকড় তার গভীরে। পালিয়ে যাওয়ার নিয়তি যার তারে তুমি ডাকো কোন সর্বনাশের অতলে? সোহানা! সোহানা!

স্যার, আমি এসেছি।

উন্মিলীত দৃষ্টি বিস্ফোরিত হয় আমার, সত্যি সামনে দাঁড়িয়ে সোহানা আমার।

স্যার, আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনার সাথে গাছতলায় ভাত রেঁধে খাবো তবু আপনার সাথেই থাকবো স্যার।

বলে কী বলে কী মেয়ে, বয়সের রঙিন চশমা চোখে। দেখে না, দেখতে শেখেনি রূঢ় বন্ধুর ক্ষমাহীন বাস্তবতা জীবনের, চশমায় কেবল তার ছাদবাগানে ফোটা রঙিন গ্লাডিওলাস আর বাহারী পাখা মেলা প্রজাপতি! ভালোবাসা... ভালোবাসা... আমার মতো শেকড় ছেঁড়া উত্তুঙ্গ পাতার কাছে এ বড় বিলাসী বর্ণগুচ্ছ তবু প্রলোভিত করে আকর্ষণের প্রাকৃতিক অপ্রতিরোধ্য আহ্বান। আমি এক দ্বিধাযুক্ত কদম সাড়া দেই আহ্বানে তার, সে দ্বিগুণ আকর্ষণে কাছে টানে আমাকে। আমি প্রথমবারের মতো পুরুষ হই, ছুঁয়ে দেখি নারীর প্রেম, স্বর্গ হতে আসে প্রেম স্বর্গে যায় চলে... এই পিঠ উপচানো কেশগুচ্ছ যেনো দূর পাহাড়ের দেশ থেকে ভেসে আসা মেঘপুঞ্জ আমাকে ডাক দিয়ে উড়ে যায় আবার অজানা রাজ্যে। চলে যায় আমার আকাশ খালি করে। আমি দেখি আঁখি পল্লবে তার সমূলে পুরুষ হবার সর্বনাশের আহ্বান, আহ্বান ছুঁয়ে ছুঁয়ে... আমি পৌঁছাতে চাই স্বর্গের সিঁড়িতে ঠিক তখন মোবাইলের কর্কশ ডাক আবেগহীন খানাখন্দে। ক্রিং ক্রিং...।

সোহানার  চাকরিজীবী পিতা ক্ষেপে ওঠে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিশোধপরায়ণ যোদ্ধা, ক্রুদ্ধ উন্মত্ত।

কুত্তার বাচ্চা... বেঈমানের বাচ্চা... দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি ঘরে... শেষ হয় না বাক্যবাণ, একদল নেশাখোর যুবক এসে ঘিরে ধরে চারদিকে... আমি নত হই, পায়ে ধরি, কাপুরুষজনোচিত, ঘৃণ্য জীবের মতো পায়ে পড়ি তাদের। ভাই ভাই আমি কিচ্ছু করি নাই, আমি কিচ্ছু করি নাই ভাই... মেয়েটা নিজে নিজেই চলে এসেছে, আপনারা নিয়ে যান, আমারে মাফ করে দেন স্যার। আমি বাপ-মাহীন এতিম গরিব ভাই...।

সোহানার দৃষ্টিতে বিস্ময় বিমূঢ়তা। নিজেকে নিজে অবিশ্বাস করার অধিক অবিশ্বাস। একটু আগেই উষ্ণ প্রেমের স্পর্শে যে হাত লিখেছে প্রথম নারী হয়ে ওঠার আখ্যান, সেই আখ্যানে ঢেলে দেয়া প্রতারণার তপ্ত সীসায় পুড়ে তার আবেগে আর্দ্র বিশ্বাস, নবীন বিশ্বাসে তার বুড়ো বয়সী পাতা ঝরে শীতের রুক্ষতায়, অথচ সে এসেছিলো তুমুল বর্ষায় ফলবতী হবার আশায়।

আমার প্রতি যুবকদের দয়া হয়, লোলুপ লালা ঝরা জিভ ঝুলিয়ে ক্ষুধার্ত হায়েনারা তুলে নেয়, সোহানার কাতর অবিশ্বাসের দৃষ্টি থেকে আমি পালাই আবার, পালাই...।

কাল কী পত্রিকার পাতায় দেখবো গণধর্ষণে যুবতীর মৃত্যু! আমি কি সহস্র মুখের মাঝে সনাক্ত করতে পারবো প্রেমিকার মৃত মুখ! পরাজিত মুখ? কাপুরুষদের প্রেমিকা সম্বোধনের যোগ্যতা থাকে?

প্রাণ, এক বোধবুদ্ধিহীন চলমান চেতনা, কেবল টিকে থাকার বাসনায় প্ররোচিত করে বারংবার। আমি আবার দাঁড়াই। আবার হাঁটি। আবার বাঁচতে চাই। 

বাঁচার জন্যই কেবল মায়ের আর্তচিৎকার আর সোহানার আকুল প্রেম অগ্রাহ্য করে সূর্যের মতো কিছু আশা বগলদাবা করে আমি আবার হাঁটি।

ইন্টারভিউ-২

এই সার্টিফিকেট নিয়ে আপনি এসেছেন এখানে চাকরি নিতে?

জ্বি স্যার।

সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীদের হতাশ মুখভঙ্গি থোরাই পরোয়া করি আমি।

আপনি কি কোটা প্রত্যাশী? মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, ট্রাইভাল?

না স্যার।

সার্টিফিকেটগুলো মুখ বরাবর ঢিল ছুঁড়ে তারা জানায়, সাহস তো কম নয় আপনার। এই সার্টিফিকেট নিয়ে চাকরির বাজারে নামেন।

সার্টিফিকেটগুলো কুড়িয়ে নেই, মনে মনে বলি, সাহস নয় দুঃসাহস। এই দুঃসাহস আমার বেঁচে থাকার অন্য নাম। গর্ভধারিণী মাকে যে রক্ষা করতে পারে না, প্রেমিকার সম্মান যে ধুলায় মেশাতে ভাবে না ক্ষণকাল, বেঁচে থাকার সাধ তার দুঃসাহসই বটে! পথে নামি ঠা ঠা রোদে, পথ আমাকে নেয় তার মতোই অসহায় বলে, পাপীতাপী হেঁটে যায় নিশ্চুপ কেবল নামের দাবি মেটানোর স্বার্থে শুয়ে থাকে সে। তেমন আমার অর্থহীন বেঁচে থাকার নাম অসহায় দুঃসাহস বটে! পকেটে মোবাইল বাজে, অনেক অনেক দিন পর মায়ের কণ্ঠস্বর শুনি, বাপ... কেমন আছস বাপ? মা আমার মোবাইল নাম্বার পেয়েছে শেষ পর্যন্ত। আমারে বাঁচা বাপ... আমি আর পারি না বাপ...। 

ফোনটা কেটে দেই। নিজে বাঁচি না। কেমনে তারে বাঁচাই আমি! অস্বীকার করি গর্ভের দায়। আজ আর ফিরতে ইচ্ছে করে না মেসের অস্বাস্থ্যকর দায়ে ঠেকা বসতিতে। শহরের শেষ মাথায় উন্মুক্ত মাঠে শুয়ে থাকি তবু বেঁচে থাকার বাসনার পুনরুজ্জীবনে। মাথার উপর ধীরে ধীরে রং বদলানো আকাশ উপুড় করে দেয় রাতের আঁধার... থেমে যায় নীড়ে ফেরা পাখিদের কলরব, ঝিঁ ঝিঁ পোকারা তবু সামান্য আলো মেলে ধরতে চায় হতাশার আঁধার গ্রাস করে, ঠিক তখন কানের কাছে তীব্র হুইসেল বাজায় আমার মোবাইল। অচেনা নাম্বার।

স্যার, জ্বি স্যার। কালই স্যার। সব নিয়ে আসবো স্যার। জ্বি স্যার ভুল হবে না স্যার।

আনন্দে ঝড়ের ঘুর্ণির মতো চক্কর খাই। আমার চাকরি হয়েছে। চাকরি! সকালে ইন্টারভিউ অফিস থেকে ডেকেছে আমাকে।

সকাল সকাল, নিজেকে সাজাই পরিপাটি। একমাত্র ইস্ত্রি করা শার্ট, ধার করে আনা টাই, সেলাই করা সু, বিন্দুমাত্র অবহেলা করি না নিজেকে। তবু কী হয়, প্রথম দিনেই চেয়ার থেকে উঠে বস ঘুরে ঘুরে দেখে আমাকে। হাত কচলে পরখ করে শার্টের কাপড়ের মসৃণতা, উঁচু করে আমার নীল রঙের টাই... পছন্দ নাকি অপছন্দে ধন্দে পড়ে যাই... একসময় উবু হয়ে বসে দেখেন জুতাজোড়া। বিব্রত আমি মাথা নিচু করে থাকি যেনো পাথরের ভাস্কর্য। গভীর পর্যবেক্ষণ শেষে অতঃপর তিনি চেয়ারে উপবিষ্ট আদেশ করেন, কাল থেকে খুব সিম্পল পোশাকে অফিসে আসবেন।

সিম্পল পোশাক। সিম্পল পোশাক।

দু’চারদিন যেতেই টের পেতে থাকি, এই চকিত চাকরি, সিম্পল পোশাকের কল্পনার অতীত রহস্য। মাল সাপ্লাই দিতে আমাকে দৌড়াতে হয় ব্যস্ত নগরীর এমাথা ওমাথা, আর গন্তব্য সব পুঁতিগন্ধময় অন্ধকার। আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয় বলে দেয় চাকরির নামে বহন করে চলেছি এক ভয়াবহ অন্ধকার... ধোঁয়াচ্ছন্ন, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা বিধ্বংসী নেশা!  চাকরির নামে হাতে নিয়েছি আমি মৃত্যুর পরোয়ানা।

প্রতিদিন রাতে ফেরার পথে নেশায় চুর অমানুষগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে জানতে ইচ্ছে করে সোহানা কই? আমার সোহানা? পারি না। মেরদণ্ড শক্ত করে জিজ্ঞেস করতে পারি না।

আবাসে ফিরে নিজের দর্পণের সামনে দাঁড়াই নিজে। সব সোহানারা কি বেওয়ারিশ মৃতদেহ হয় আমারই মতো সুবোধের কাপুরুষতার কারণে? আমার কাপুরুষ চেহারা সনাক্ত করেই কী প্রকৃতি কর্মফলে আমার হাতে ধরিয়ে দেয় বিধ্বংসী ধ্বংস এই হাওয়ায়, পাতায়, বৃক্ষে, ডালে, আকাশে, পাতালে কোথায় ছাপাকৃত হয়ে আছে আমার যাবতীয় কাপুরুষতা?

কী হয় পরদিন, অফিস গিয়ে বড়কর্তার সামনে দাঁড়াই, এক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় টের পাই পিঠের দিকে এক শক্ত অনমনীয়, গোয়ার্তুমির অবস্থান।

স্যার এই চাকরি আমি আর করবো না।

এই প্রস্তাবের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত বড়কর্তা ঘাবড়ে যাওয়া নিমিষে সামলে নিয়ে হো হো হাসেন।

হো হো হো। এ চাকরিতে প্রবেশ করা যায়। বের হওয়া যায় না। হো হো হো।

কাল থেকে আমি আর আসবো না। অলৌকিক বাণীর মতো কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে আমি নির্ভার হাঁটি সেই বিশাল প্রান্তরমুখী।

কেউ একজন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে থামে আমার নিঃশ্বাসের কাছে। বাঁচান আমারে বাঁচান... ভাই আমারে বাঁচান।

তাকে বাঁচানোর নয়, তাগিদ পাই নিজেকে বাঁচানোর... ঠিক তখন কাছে কোথাও পুলিশের তীব্র বাঁশি, হৈ চৈ বুটের থপথপ দৌড়ানোর আওয়াজ। কেউ কী চিৎকার করে বলে, সুবোধ তুই পালা..., স্বপ্ন নয় দুঃস্বপ্ন আসছে ধেয়ে সুনামি উঁচু ঢেউয়ের মতো। আসছে তছনছ করে দিতে স্বপ্নসকল, আসছে এই চাঁদের নরম জোছনামাখা রাতের অপেক্ষা মোড়া সূর্যোদয়ের সকল আয়োজন গিলে খেতে, সুবোধ পালা, পালা সুবোধ পালা, সময় এখন তোর অনুকূলে নয়...।

মায়ের আকুতি বাপ আমাকে বাঁচা বাপ...।

হঠাৎ গগন বিদীর্ণ করে বন্দুকের ঠা ঠা, করুণ গোঙানির সুরে জীবনের নিষ্পন্দ হবার শেষ শিঙ্গা। তীব্রতর পুলিশের হুইসেল, সম্মিলিত ফিসফাসে ভয়াবহতার আতঙ্কিত বিদীর্ণতা... তখন আমি পিছু ফিরে তাকাই কী তাকাই না, কী ঘটে, কী ঘটবে বুঝি কী বুঝি বুঝি না, আমি দৌড়াই... দৌড়াই... কেবল কীট পতঙ্গসম বেঁচে থাকার বাসনায় দৌড়াই। যেনো এই গুলির ঠা ঠা ন্যায় কী অন্যায় ফিরে দেখা জীবনের উদ্দিষ্ট নয়, মনুষ্য জীবনের সার্থকতা নয় প্রতিবাদ প্রতিরোধে, কেবল স্বার্থপর জৈবিক জীবনে বেঁচে থাকাই বাসনা তার...।

আমি দৌড় থামাই। চেনা এক মনুষ্য চোখের আকুতি ভেতরে জন্ম দেয় এক অন্য আমার, অচেনা আমার... আমি ঘুরে দাঁড়াই, বাঁচবো না বাঁচবো না এই কীট পতঙ্গের জীবন। বেঁচে থাকাই যদি দুঃসাহসের প্রতিনাম হয়, তবে সে বেঁচে থাকা হোক মানুষের মতো। মেরুদণ্ড আর মস্তিষ্ক সোজা করে বাঁচার নাম।

আমি ঘুরে দাঁড়াই, দৌড়াই সেই গোঙানির উৎসমুখে। তীব্র হয় পুলিশের হুইসেল, দৌড়াদৌড়ি। আমি পৌঁছাই কাছাকাছি। একটা রক্তাক্ত মৃতদেহ... উর্দিধারীরা ব্যস্ত ইয়াবা সাজাতে... কেউ একজন একটা জং ধরা রাইফেল ধরিয়ে দেয় নিষ্প্রাণ দেহটির হাতে। আমি সাক্ষী হই, দেখি আমার ভয়াবহ রূপান্তর, আমি বদলে যাচ্ছি... মৃত লোকটির চেহারায় অবিকল আমার চেহারা।

কেঁপে ওঠে অন্তরাত্মা। না মরবো না আমি, বাঁচার জন্য বাঁচবো। কাল প্রকাশ করে দেবো জনারণ্যে, মৃত লোকটির হাতে অস্ত্র ছিলো না। ট্যাবলেটগুলো তার পকেটে ছিলো না...।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়