ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বেহাল দশায় শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৫ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেহাল দশায় শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে শত কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জায়গায় নির্মিত শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি উদ্বোধনের চার বছর পার হলেও আয়োজন হয়নি বড় কোন টুর্নামেন্ট। পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়।

এ অবস্থায় পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হতে চলেছে স্টেডিয়ামটির অবকাঠামো।কোন টুর্নামেন্টের আয়োজন না থাকায় একদিকে যেমন মেধাবী খেলোয়াড় উঠে আসছে না, অন্যদিকে খেলার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে গোপালগঞ্জবাসী। দ্রুত স্টেডিয়ামটির সংস্কারসহ টুর্নামেন্ট চালুর দাবি জানিয়েছেন ক্রীড়ামোদীরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্টেডিয়ামটির  নির্মাণ শুরু হয় । তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতার পালাবদলে থেমে যায় কার্যক্রম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন করে স্টেডিয়ামটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়  । ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ স্টেডিয়ামটি উদ্বোধন করেন।

জানা গেছে, উদ্বোধনের পর চার বছর পেরিয়ে গেলেও কেবলমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্টেডিয়ামটির এখন বেহালদশা । মাঠের মাঝখানে নামেমাত্র একটি ক্রিকেট পিচ থাকলেও এবড়োথেবড়ো মাঠ, যা ক্রিকেট খেলার একেবারেই অনুপযোগী । ফলে স্থানীয় খোলায়াড়দের প্র্যাকটিস করা তো দূরের কথা, স্টেডিয়ামের চৌহদ্দিতেও আনা যায়নি। অথচ একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য যা যা প্রয়োজন সবই রয়েছে এখানে। রয়েছে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ফ্লাডলাইট, ২০০ সাংবাদিকের বসার উপযোগী প্রেসবক্স, ১৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার গ্যালারি।

শুধু মাঠ আর পিচ নয়, দেখভাল আর পরিচর্যার জন্য লোকবল না থাকার কারণে নির্মাণের চার বছরেই স্টেডিয়ামের দুটি সাইটস্ক্রিন ও লিফটের একটি করে নষ্ট। ৮৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বেশির ভাগই অকেজো। ঘাস কাটার আধুনিক মেশিন নেই। আর দর্শকদের বসার চেয়ারগুলোও এখন বর্ণহীন। সেই সাথে ফ্লাড লাইটের বৈদ্যুতিক বিল যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওপর।


স্থানীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় রাজ সাহা ও শুভ কর্মকার জানান, একটি আন্তর্জাতিক মানের মাঠ হলেও আউট ফিল্ড অত্যন্ত খারাপ। খেলার উপযোগী পিচ নেই। সাথে অনেক ধরণের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন লীগ চালু হয়নি। যে কারণে খোলোয়াড়রা হতাশ হয়ে মাঠে আসতে চায় না।

ক্রিকেট কোচ মাহবুব আহম্মেদ কুটি বলেন, ‘মাঠটির বেহাল অবস্থা থাকায় খেলোয়াড়রা ঠিকভাবে অনুশীলন করতেও পারছে না। সেই সাথে কোন লীগ না হওয়ায় নিজের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হচ্ছে খেলোয়াড়রা। যোগ্যতা প্রমাণ করতে না পারায় এক প্রকার হতাশ তারা। যে কারণে প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি না।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটির সদস্য ফকরুল হাসান ভিকু বলেন, ‘জেলা ক্রীড়ার উন্নতির জন্য স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হলেও জেলা ক্রীড়া সংস্থা এর পরিচালনা করতে পারছে না। পরিচালনার যে খরচ তা ক্রীড়া সংস্থা বহন করতে পারছে না। সামান্য কিছু বাৎসরিক অনুদান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে পায়। যা দিয়ে কর্মচারীদেরই বেতন দেওয়া যায় না।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটির আহবায়ক জাহেদ মাহমুদ বাপ্পী জানান, গোপালগঞ্জে অনেক উৎসাহী খেলোয়াড় রয়েছে। মাঠের পরিবেশ সঠিকভাবে তৈরি করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত মাঠ কর্মী নেই। যে সময়ে স্কুল লীগ বা বয়স ভিত্তিক লীগ চালু হয় তখন বাইরে থেকে মাঠ কর্মী ভাড়া করে নিয়ে মাঠের পরিচর্যা করতে হয়।

গোপালগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এম বি সাইফ (বি মোল্যা) জানান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি মাঠটি সব সময় পর্যবেক্ষন না করে তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে কিছু করা দুঃসাধ্য। একটি রোলার মেশিন দিয়েছিল যা নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠটিতে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল রয়েছে, যা ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হতে বসেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/৫ আগস্ট ২০১৭/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়