ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

গোলটেবিল বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন দাবি

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গোলটেবিল বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন দাবি

যশোর প্রতিনিধি : যশোরের বিশিষ্টজনরা গোলটেবিল বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি বলে দাবি করেছেন।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, ‘ভাষা সংগ্রামের ৬৭ বছর পার হলেও আমরা আজও পারিনি সে সংগ্রামের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। শিক্ষাকে একমুখী, সার্বজনীন করে সকলের দ্বারে পৌঁছে দিতে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে।’

বক্তারা বলেন, ‘মহাজোট সরকার জাতিকে শিক্ষানীতি উপহার দিয়ে জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। নানামুখী আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রফেসর কবীর চৌধুরীর নেতৃত্ব মহাজোট সরকার কর্তৃক গঠিত শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়। কুদরত-এ-খুদার প্রথম শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের সূত্র ধরেই বর্তমান শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার প্রস্তাবনা আছে। কিন্তু  দুই কমিশনের প্রস্তাবনার মধ্যে অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় এখন আর পুরাতন যুক্তিগুলো জাতীয় জীবনে প্রযোজ্য নয়। অতীতে আমাদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক দূরে দূরে অবস্থিত হওয়ার কারণে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ কষ্টদায়ক হওয়ায়, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য এবং বিশ্বব্যাপী ১৪ বছর পর্যন্ত আবশ্যিক শিক্ষার নীতি মানার জন্য প্রস্তাবনা আনা হলেও এখন এসবের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে।’

বক্তারা বলেন, ‘দেশে শিক্ষা সংস্কারে কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও প্রকৃত প্রয়োজনটাতে কেউ নজর দিয়েছে বলে মনে হয় না। দিনকে দিন দেশের মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষার মানের অবনতি ঘটছে। সমস্যার আশু সমাধানের পথে চলতে গিয়ে কোনো কোনো পদক্ষেপ প্রাথমিক শিক্ষার মানকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। মানহীন প্রাথমিক শিক্ষার কারণে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশার কারণে বিত্তবানরা মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানরা এখন ইংরেজি মিডিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। ফলে মূলধারার প্রাথমিক শিক্ষা এখন অসহায় মানুষের অবলম্বন হয়ে পড়েছে এবং ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার রমরমা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।’

তাদের পরামর্শ, দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নত করার সমস্যা নিয়ে শিক্ষা কমিশনের ভাবা প্রয়োজন। কারণ সরকার শিক্ষানীতি পাশ করেছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনটি পাশ করেনি। ফলে ২০১২ সালে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার কাজটা ২০১৯ সালেও করে উঠতে পারেনি। শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতা, শিক্ষক নিয়োগ জটিলতার পাশাপাশি শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা নিয়েও ভাবা প্রয়োজন।

বক্তারা জানান, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকার নির্ধারিত সূচকগুলো অর্জনে সক্ষম হচ্ছে ২০ ভাগ শিক্ষার্থী। এ অর্জনকে অন্তত বাকী ৮০ ভাগের মধ্যে পৌছাতে হবে। সরকার ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরাসহ এলাকার সব মানুষদের নিয়ে ক্রাশ প্রোগ্রামে মানোন্নয়নে ব্রতী হতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে এ কাজ হবে না। এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরী।

বৈঠকের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুহৃদ সমাবেশ এর সাধারণ সম্পাদক সুকান্ত দাস, মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুহৃদ সমাবেশ এর সদস্য নবনীতা তপু, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দৈনিক সমকাল এর যশোর প্রতিনিধি ও যশোর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান।

সমকাল সুহৃদ সমাবেশ যশোর শাখা শুক্রবার স্থানীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করে। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এর উপদেষ্টা এম আর খায়রুল উমামের সঞ্চালনায় আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আমজাদ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশীদ, অধ্যাপক সন্তোষ হালদার, ড. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের অধ্যক্ষ জে.এম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি যশোর জেলা শাখার সভাপতি আবুল হোসেন, নব কিশলয় প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুর রহমান খান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড.তপন কুমার ধর, সনাক যশোরের সহ-সভাপতি সৈয়দা মাসুমা বেগম, সুরবিতান সংগীত একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক বাসুদের বিশ্বাস, আকিজ কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, রূপদিয়া ওয়েল ফেয়ার একাডেমীর প্রধান শিক্ষক বিএম জহুরুল পারভেজ, যশোর জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি উজ্জল বিশ্বাস, শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারজানা ববি, নিউজ ২৪ এর যশোর প্রতিনিধি রিপন হোসেন ও দৈনিক গ্রামের কাগজ সাংবাদিক তহমিনা বিশ্বাস মিনা, সেক্রেড হার্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানভীর ইসলাম, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি তন্ময় বিশ্বাস ও কৌশিকী মিত্র স্নেœহা প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/যশোর/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়