ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ১৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’

হাসান মাহামুদ

হাসান মাহামুদ : দরজায় কড়া নাড়ছে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে ছায়ানটের সম্পর্ক জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। এ বছর সামাজিক সকল অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানসে নতুন বাংলা সনকে বরণ করবে ছায়ানট। অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ- এ আহ্বানে সাজানো হয়েছে রমনার বটমূলের প্রভাতী আয়োজন।

বাঙালি ঐতিহ্য প্রকাশের অনিন্দ্য উৎসবটির প্রচলন হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। বৈরী পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করেছিল ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। সংস্কৃতির শক্তিতে ভর করে বিজাতীয় শাসকদের বিরুদ্ধে ঘটেছিল আপন জাতিসত্তার বর্ণময় প্রকাশ। সেই ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বছরটি ছাড়া প্রতিবছর হয়ে আসছে বর্ষবরণের এই প্রভাতী অনুষ্ঠানমালা। নববর্ষের আনন্দমাখা রংময়তায় নাগরিক মননের চেতনাকে বরাবরই শাণিত করেছে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের এ আয়োজন। এবার সংগঠনটি আয়োজন করতে যাচ্ছে ৫১তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

প্রতিবারের মত এবারও গানে গানে নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের মুহূর্তে প্রভাতী রাগে বর্ষবরণের এই আয়োজন হবে এবার আরো নান্দনিক।

এবারের প্রস্তুতি সম্পর্কে ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সত্য ও সুন্দরের শক্তিতেই পরাজিত হবে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতাসহ সব অশুভ শক্তি। শুরু হবে নতুন আলোয় আরেকটি নতুন বছর- এমনটাই প্রত্যাশা সবার।’
 


তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় এক মাস আমাদের মহড়া চলেছে। এবারও শতাধিক শিল্পী মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। গানে গানে সুরে সুরে প্রতিধ্বনিত হবে মানুষের অধিকারের কথা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা, বিবেক জাগ্রত হওয়ার আহ্বান।’

ছায়ানটের সহ-সভাপতি আরো বলেন, ‘এবারের আয়োজনে ১৫টি একক গান থাকবে এবং ১২টি সম্মেলক গান থাকবে। এছাড়া থাকবে পাঠ, আবৃত্তি। ছায়ানটের সভাপতি ড. সনজীদা খাতুন অনুষ্ঠানের শেষে বক্তব্য রাখবেন।’

বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান দেখা যাবে ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে (http://bit.ly/chhayanaut)।

নববর্ষের প্রভাতী অনুষ্ঠানের বৃত্তান্ত : যথারীতি পয়লা বৈশাখে ভোর সোয়া ৬টায় বছরের প্রথম সূর্যোদয়কে স্বাগত জানানো হবে রাগালাপ দিয়ে। প্রত্যূষে থাকছে প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও সৃষ্টির মাহাত্ম্য নিয়ে ভোরের সুরে বাঁধা গানের গুচ্ছ। পরের ভাগে গান-পাঠ-আবৃত্তিতে অনাচারকে প্রতিহত করা এবং অশুভকে জয় করার জাগরণী সুরবাণী, দেশ-মানুষ-মনুষ্যত্বকে ভালবাসবার প্রত্যয়।

বরাবরের মতো এবারও ছায়ানটের নববর্ষ আবাহন শুরু হবে পয়লা বৈশাখ রোববার ভোর সোয়া ৬টায়। দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির অনুষ্ঠানের সূচনা হবে সেতারের সুর মূর্ছনায়। শুরুতে থাকবে রাগ পরমেশ্বরী। এই পরিবেশনা শেষে গীত হবে সম্মেলক কণ্ঠের গান।

নববর্ষের অনুষ্ঠানমালায় এবার থাকছে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো’ গানটি। বৈশাখ নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুল আলোচিত এই গানটি সর্বশেষ ২০০০ সালে গাওয়া হয়েছিল ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজনে। ২০০১ সালের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে এই গানটি পরিবেশিত হওয়ার কথা ছিল। ওই দিনের গানের তালিকায় সম্মেলক সঙ্গীত হিসেবে শেষ পর্যায়ে রাখা হয়েছিল গানটি। কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝপথে ধর্মান্ধ জঙ্গিদের বোমা হামলায় পণ্ড হয়ে যায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ফলে আর গাওয়া হয়নি নববর্ষ বরণের সেই অনবদ্য গানটি। সেই সূত্রে ১৫ বছর পর ২০১৫ সালে নতুন উদ্যমে গীত হয় এই গানটি। এবারো গানটি থাকছে বর্ষবরণের আয়োজনে।

এবারের আয়োজনে সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হবে ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না’, ‘সংঘ সরণ তীর্থ যাত্রা পথে এসো’, ‘ওরে বিষম দইরার ঢেউ, উথাল পাথাল করে’, ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ, শোন বলি রে পাগল মন’, ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল’, ‘মোরা সত্যের ’পরে মন আজি করিব সমর্পণ’সহ ১২টি সম্মেলক গান। একক কণ্ঠেও গাওয়া হবে ১৫টি গান।

ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে গতকাল শুক্রবার সভাপতি সনজীদা খাতুনের উপস্থিতিতে বর্ষবরণের মহড়া


এবার ছায়ানটের নববর্ষ আবাহনে পরিবেশিত হবে রবীন্দ্র-নজরুল ছাড়াও সলিল চৌধুরীর গণসঙ্গীত, লালন ফকিরের গান ও রশিদউদ্দীন রচিত সঙ্গীত। একক কণ্ঠে গান শোনাবেন ১৫ জন খ্যাতিমান ও পরিচিত নবীন-প্রবীণ শিল্পী। এর মধ্যে রয়েছেন খায়রুল আনাম শাকিল, লাইসা আহমদ লিসা, চন্দনা মজুমদার, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী।

সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানে গাওয়া হবে ২৮টি গান। প্রভাতী বর্ষবরণের আয়োজন শেষ হবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।

অনুষ্ঠানের শেষে এবারের প্রতিপাদ্য নিয়ে বক্তব্য রাখবেন ছায়ানট সভাপতি ড. সনজীদা খাতুন। তিনি বলবেন বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে মানবতা ও মানুষের অধিকার এবং শান্তির কথা।

ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড। বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোও বিটিভির লিংক নিয়ে এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ এপ্রিল ২০১৯/হাসান/রফিক/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়