ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কার্ড

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২১, ১৩ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে কার্ড

আবু বকর ইয়ামিন : আগে বৈশাখে শুভেচ্ছা জানানোর অন্যতম অনুসঙ্গ ছিল বৈশাখী কার্ড। বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের বাহারি কার্ড পাওয়া যেত। অনেকে নিজ হাতে বৈশাখের কার্ড বানাতেন।

সেই কর্ডের প্রচলন কমে গেছে অনেকটাই। এর মূল কারণ ডিজিটালাইজেশন। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক, ভাইবার, ইমো, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম। এসব মাধ্যমে সব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ চালু হয়েছে। এছাড়া, মোবাইল ফোনে কল, এসএমএস, ই-মেইলের ব্যবহার তো আগে থেকেই প্রচলিত।

প্রযুক্তি জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা অনেকেই এতে দক্ষ হচ্ছি। তাই সহজেই, নামমাত্র খরচে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে দিন দিন হারিযে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষের কার্ডের চাহিদা। এমনকি বড় বড় শপিং মল থেকেও উধাও হয়েছে বাংলা নববর্ষে শুভেচ্ছা জানানোর কার্ড।

একসময় চৈত্রের প্রথম থেকেই চলত নববর্ষের কার্ড বেচাকেনা। লোকজন নানা ডিজাইনের পছন্দসই রঙের কার্ড খুঁজে নিতো প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে। সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাচ্ছে এ উপকরণ।

বিশেষ দিনে প্রিয়জনদের শুভেচ্ছা জানানোর রেওয়াজ সেই প্রাচীন কাল থেকেই। রাজধানী পুরান ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে একসময় পসরা সাজিয়ে বসতো ঈদ ও নববর্ষের কার্ডের দোকান। তখন কে কার চেয়ে বেশি সুন্দর এবং দামি কার্ড উপহার দিতে পারবে এ নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা। কালের বিবর্তনে ইন্টারনেটের দাপটে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সেই সংস্কৃতি এখন কেবল ইতিহাস। দোকানগুলো নেই, মানুষও কার্ড কেনে না।

পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি ফার্মে কাজ করছেন সাকিবুর রহমান। তিনি জানান তার কার্ড বিনিময়ের স্মৃতিকথা। হাসতে হাসতে বলেন, আগে আমের মুকুল আসলেই তখন থেকেই আমরা টাকা জমাতাম। মেলায় যাব, প্রিয় বন্ধুকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাব। হালখাতাসহ নানা আয়োজনের একটা তালিকা করা হতো। সবমিলিয়ে যে অর্থ হতো সেটি বিভিন্ন ধাপে খরচ করতাম।

ব্যবসায়ী মামুন মজুমদার বলেন, আগে আমাদের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা হতো কে কত সুন্দর কার্ড উপহার দেব। এখন সে প্রথাটা নাই। অতীতের এ কথাগুলো ভাবতেই অন্যরকম লাগে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আসলে সময়ের আলোকে কিছু পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। নতুনত্বের ছোঁয়ায় সেটি আমাদের কাছে স্মৃতিময় হয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, কার্ড প্রথা বা এ জাতীয় ঐতিহ্যগুলো আমাদের ধরে রাখা উচিত। শুভেচ্ছা বিনিময়ে কার্ড পাঠানোর গুরুত্বটা আলাদাভাবেই প্রকাশিত হয়।  

নাঈমা ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা এমন একটা উৎসব, যাকে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সবাই সর্বজনীনভাবে প্রাণের আনন্দে বরণ করে নেয়। একসময় এ আনন্দ ভাগাভাগির অন্যতম উৎস ছিল কার্ড বিনিময়। কালে কালে সেই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছা, প্রিয় ব্যক্তিকে কার্ড দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাব।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ এপ্রিল ২০১৯/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়