ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘মানুষ মানুষের সাথে এরকম করে না’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মানুষ মানুষের সাথে এরকম করে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : মঙ্গলবার সন্ধ্যা। অন্ধকার নামছে। ঢাকার বুকে শুরু হয়েছে আলো-আঁধারের খেলা। সারা দিনের কাজ শেষে অনেকে ফিরছেন ঘরে, পরিবারের কাছে। হয়তো দিলিপ অধিকারীও দিনের কাজ শেষে দুই মেয়ের টানে ঘরে ফিরতেন। কিন্তু সেটা না করে মেয়ের আত্মার শান্তি কামনায় মন্দিরে পূজা-অর্চনায় ব্যস্ত। ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছেন। শত অভিশাপ দিচ্ছেন তাদের, যাদের কারণে মেয়ে অরিত্রী অধিকারীকে (১৫) হারিয়েছেন।

অরিত্রী এখন এই পৃথিবীতে নেই। সংসারের মায়া ত্যাগ করেছে সে। কিন্তু অরিত্রী যাওয়ার সময় রেখে গেছে হাজারো প্রশ্ন আর অভিমান। এজন্য হয়তো বাবা দিলিপ অধিকারীর কষ্টটাও একটু বেশি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিলিপ অধিকারীর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ নেই। বাসায় তালা দিয়ে সবাই গেছেন বাসাবো কালী মন্দিরে। অরিত্রীর জন্য যোগ পূজা করতে সেখানে গিয়েছেন তারা।

দিলিপ অধিকারীকে বাসায় না পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার তো আর কেউ নেই, দাদা। মেয়েটা অভিমান করে চলে গেল। তাকে ছেড়ে থাকাটা কষ্টের। কিন্তু কী করব? যোগ পূজা করতে এসেছি। মন মানে না, তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। পূজাটা এই কয়দিন দিয়ে যাই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে দিলিপ অধিকারী বলেন, কী করলো ও? ও তো অভিমানী হয়ে চলে গেল। ওরা যা করল, দাদা। মানুষ মানুষের সাথে এরকম করে না। আমার মেয়ের জীবনটাই নিয়ে নিলো।

গতকাল ৩ ডিসেম্বর স্কুল থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দেওয়ায় এবং নিজের সামনে বাবা-মাকে অপমান করায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শাখার অরিত্রী অধিকারী (১৫) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। সে প্রভাতী শাখার ইংলিশ ভার্সনের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। শান্তিনগরের ২৩/২৪ নম্বর বাড়ির সপ্তম তলার ফ্ল্যাটে গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।

অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী জানান, বড় মেয়ে অরিত্রি, ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলা ও স্ত্রী বিউটিকে নিয়ে শান্তিনগরের একটি বাসায় থাকেন তিনি। গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তিনি কাস্টমসের সিঅ্যান্ডএফের ব্যবসা করেন। ছোট মেয়ে ঐন্দ্রীলাও একই স্কুলের শিক্ষার্থী।

দিলীপ অধিকারী বলেন, অরিত্রীর বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। স্কুলে মোবাইল নেওয়া নিষেধ থাকা সত্বেও অরিত্রী মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে মোবাইলটি দেখতে পেয়ে শিক্ষকরা তা নিয়ে যায় এবং অরিত্রীকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়।

সোমবার সকালে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্কুলে যায় অরিত্রী। কিন্তু তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে আমাকে ও স্ত্রীকে ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তখন আমি ও আমার স্ত্রী স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের কক্ষে যাই।

ভাইস প্রিন্সিপাল বলেন, মোবাইলে অরিত্রী নকল করছিল। আমরা এজন্য ক্ষমা চাইলে তিনি প্রিন্সিপালের কক্ষে পাঠান। প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়েও আমরা ক্ষমা চাই। কিন্তু প্রিন্সিপাল সদয় হননি। একপর্যায়ে পায়ে ধরে ক্ষমা চাই। কিন্তু প্রিন্সিপাল আমাদের বেরিয়ে যেতে বলেন। তিনি অরিত্রিকে টিসি (ছাড়পত্র) দেওয়ারও নির্দেশ দেন।

‘স্কুল থেকে বের হয়ে আমি স্ত্রী ও মেয়েকে বাসায় নামিয়ে দেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তদবির শুরু করি। হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে- অরিত্রী রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। বাসায় গিয়ে দরজা ভাঙলে অরিত্রীকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বব ২০১৮/আসাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়