ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হালখাতার চিঠি পেয়ে বিপদে যশোরের কৃষক

বিএম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হালখাতার চিঠি পেয়ে বিপদে যশোরের কৃষক

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরার ধানের হাট

যশোর প্রতিনিধি: হালখাতার চিঠি পেয়ে বিপদে যশোরের কৃষক আব্দুল জলিল। তিনি ধান নিয়ে হাটে এসেছেন। কিন্তু হাটে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম ধানের দাম, তাই তিনি ভীষণ হতাশ।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরার ধানের হাটে বিপদে পড়ে ধান বিক্রি করতে এসেছেন তার মতো আরও অনেক কৃষক।

কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘সার-কীটনাশকের দোকানদাররা হালখাতার চিঠি দিয়েছে, টাকার জন্য বসে সবাই আছে। এখন যে দাম পাচ্ছি, তাতেই ধান বিক্রি করতে হবে।’

সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও রবিবার খুব সকাল থেকেই বসে খাজুরার এই ধানের হাট। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ, তবু বাধ্য হয়েই হাটে ধান বিক্রি করছেন।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘খুব শিগগির তারা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করবেন। কৃষকের কল্যাণের কথা ভেবে সরকার তাদের কাছ থেকে সরাসরি ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন,কৃষকরা এখনও ৮৩০ থেকে ৮৫০ টাকায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা বিষয়টিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, সরকার যদি ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দিষ্ট একটি ক্রয়কেন্দ্র দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতো, তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম পেতো।

খাজুরা হাটে ধান বিক্রি করতে আসা যশোর সদরের লেবুতলা ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘হাটে ২০ মণ মিনিকেট (জিরা) ধান নিয়ে আইছি। আড়ৎদাররা কচ্ছে ৮৩০ টাকা। দেখি আর কেউ দাম বাড়ায় কি না!’

তিনি বলেন,‘বিঘা প্রতি যে খরচ হয়েছে, তাতে আমাদের মণ প্রতি হাজারের কাছাকাছি খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে আটশ’ থেকে সাড়ে আটশ’র মধ্যে। এতে করে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।’

মাগুরার শালিখা উপজেলার রামকান্তপুর এলাকার কৃষক বিপ্লব মজুমদার দুই নসিমনে ভরে ৪১ মণ ধান এনেছেন হাটে। তিনি বলেন,‘ধান কাটার সময় জনপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হলো। ৮ বিঘা জমিতে ধান হয়েছে ১৬০ মণ। খরচ প্রায় দেড় লাখ টাকা অর্থাৎ মণ প্রতি খরচ নয়শ’ টাকার বেশি।

সরকার নির্ধারিত ১ হাজার ৪০ টাকায় বিক্রি করবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার কবে কিনবে তাতো জানি না। ততদিন তো পাওনাদাররা বসে থাকবে না। এখন বাধ্য হয়েই কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

খাজুরায় প্রায় দুইশ’ আড়ৎদার রয়েছে। কথা প্রসঙ্গে খাজুরা বাজারের আড়ৎদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই হাটে মূলত তিন ধরণের ধান উঠছে। এগুলো হচ্ছে মিনিকেট (জিরা), দাম মণপ্রতি ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা, বাসমতি, দাম মণপ্রতি ৮৫০ টাকা আর বিআর-২৮, মণপ্রতি ৮০০ টাকা। ’

তিনি আরও বলেন, ‘কৃষকরা মূলত আড়তেই তাদের ধান বিক্রি করে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা পর্যন্ত কৃষকরা ধান ধরে রাখতে পারেন না।’

বাঘারপাড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল মতিন বলেন, ‘বাঘারপাড়ায় ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭৯ মেট্রিক টন। সরকারি খাদ্যগুদামের চাল সরানোর পরপরই ধান কেনা শুরু হবে।’

যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক লিয়াকত আলী বলেন, ‘কৃষকদের ধান ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি অধিদফতরের মাধ্যমে আমাদের কাছে কৃষকদের তালিকা দেওয়া হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী উপজেলা খাদ্যগুদামে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা হবে।

তিনি বলেন, ‘যশোরে লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন। খাদ্যগুদামগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যাবে। তারপরই ধান ক্রয় শুরু হয়ে যাবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত তরফদার বলেন, ‘চলতি বছর যশোরে ১ লাখ ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে চালের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৪টন।’




রাইজিংবিডি/ যশোর/১৯ মে ২০১৯/বি এম ফারুক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়