ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভরা বর্ষায় ধু ধু চলনবিল

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২৮ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভরা বর্ষায় ধু ধু চলনবিল

বর্ষাকালেও চলনবিলে দেখা নেই পানির (ছবি : রাইজিংবিডি)

শাহীন রহমান : এখন বর্ষাকাল। আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে ঋতু বর্ষা। বর্ষা মানেই অঝর বৃষ্টি, খালবিল পানিতে টইটুম্বুর অবস্থা যেন চিরচেনা দৃশ্য।

অথচ আষাঢ় মাসের ১৪ দিন চলে যাচ্ছে। এই মাঝ বর্ষাতেও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি। এ সময় যেখানে খাল-বিল, নদীনালায় দেখা মেলে উপচেপড়া পানি। দেখা যায় বন্যার পদধ্বনি। সেখানে এখন তার কিছুই যেন নেই। দেশের সবচেয়ে বড় বিল, চলনবিলে এখন পানি নেই। ভরা বর্ষাতেও ধু ধু চলনবিল।

শুক্রবার চলনবিলের পাবনার চাটমোহর অংশে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের এক পাশ দিয়ে প্রবাহিত গুমানী নদীতে বৃষ্টির পানিতে থই থই করলেও, পানি নেই উপরের অংশে চলনবিলের বুকে। যেদিকে দুচোখ যায়, যেন খা খা করছে চলনবিল। বিলের মাঝ দিয়ে চলতে দেখা গেলো গরু-মহিষের গাড়ি। কেউবা গরু নিয়ে বিলের মধ্যে ঘাস খাওয়াচ্ছেন।

সেখানে গরুর জন্য ঘাস কাটছিলেন চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের হানেফ আলী (৬০)। কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ব্যাটা আগে বর্ষার সুমায় চলনবিলে মেলা পানি দেকত্যাম। নৌকা চালানে লাগতো। এহন আর সেই দিন নাই। আগের মতোন পানি দেখা যায় না।’

গুমানী নদীর ধারে রাস্তার ওপর খড়ের পালা দিচ্ছিলেন আলাউদ্দিন হোসেন (৭০)। তিনি বিলেন, ‘বিলের ধারে বাড়ি হওয়ার সুবাদে বর্ষায় চলনবিলে পানি আসতো দেখত্যাম। চলনবিলের পানিতে মেলা রহমের মাছ মারত্যাম। এহন ওরহম পানিই দেহা যায় না, মাছ তো দূরে থাইক। যে কারণে জেলেগারে এহন খুব দুর্দিন।’

চলনবিলে পানি নেই, জমি থেকে মহিষের গাড়িতে ধান নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক (ছবি : রাইজিংবিডি)

 

চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, দখল-দূষণ, নদ-নদীর উৎসমুখে অপরিকল্পিতভাবে গেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে চলনবিল অনেক আগেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমনটি হবারই কথা ছিল যে, এক সময় চলনবিলে পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। সেই অবস্থা আসতে শুরু করেছে। ভরা বর্ষা মৌসুমে এখনও পানির দেখা মিলছে না। এর বিরুপ প্রভাবে চলনবিলের মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মিজানুর রহমান বলেন ‘এখনও সময় আছে, সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে চলনবিলকে বাঁচাতে পারে।’

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিলের মাঝ দিয়ে রাস্তা হচ্ছে। মোবাইল টাওয়ার হচ্ছে। পানি আসা-যাওয়ার রুটগুলো বন্ধ করে কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। তারই বিরুপ প্রভাব, প্রকৃতি এখন প্রতিশোধ নিচ্ছে আমাদের ওপর। যার কারণে আকাশে মেঘ থাকলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছে না।’

ইউএনও আরো বলেন, আমরা চলনবিলের উৎসমুখ ও সংশ্লিষ্ট নদীগুলো খনন করার দিকে নজর দিচ্ছি। ইতিমধ্যে বড়াল নদীর সাড়ে ৪ কিলোমিটার খননের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। নদীগুলো খনন করে চালু করা গেলে চলনবিল অনেকটা বেঁচে থাকবে।


রাইজিংবিডি/পাবনা/২৮ জুন ২০১৯/শাহীন রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়