ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘চা শ্রমিকের কন্যা হয়েছি বলে কী হয়েছে’

মোঃ মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘চা শ্রমিকের কন্যা হয়েছি বলে কী হয়েছে’

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা: ‘আমরা চা শ্রমিকের কন্যা হয়েছি বলে কী হয়েছে। চেষ্টা করছি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের।’ বলছিল লালচান্দ চা বাগানের কদমটিলার পাপিয়া ভৌমিক প্রিয়া।

লালচান্দ চা বাগানটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। প্রিয়া এই বাগানেরই এক চা শ্রমিকের সন্তান। এখন সে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। চা বাগানের মেয়ে হয়ে যা অসাধ্য ব্যাপার। প্রিয়া সে অসাধ্যই সাধন করতে চায়।

বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের মান্নান মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে তাকে। আসা যাওয়ায় ৫ কিলোমিটার হেঁটেও লেখাপড়া করার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছে এই চা শ্রমিকের কন্যা।

আলাপকালে প্রিয়া জানায়, তার বাবা ও মা লেখাপড়া করতে পারেনি বলেই বাগানে অল্প বেতনে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু সে লেখাপড়া করতে চায়। সুশিক্ষা গ্রহণ করে মানুষ হয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত হতে চায়।

শুধু প্রিয়া নয় চা বাগানের দুর্গাপাড়ার বাসিন্দা টিনা বাউরী, বাজারটিলার প্রভাতি বাউরী, শাহজিবাজার টিলার সন্ধ্যা ভৌমিকও পায়ে হেঁটে দূরপথ পাড়ি দিয়ে লেখাপড়া করছে। তাদের মনোভাবও প্রিয়ার মতো।

‘শুধু ক্লাশ পাস করে শিক্ষা গ্রহণ করলেই চলবে না। সুশিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে ভাল মানুষ হওয়া যাবে না’- জানাল তারা।

আসলে চা বাগানেও এখন শিক্ষার হাওয়া লেগেছে। বিভিন্ন বাগানের শত শত চা শ্রমিকের কন্যা দূরপথেই পায়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য সুশিক্ষা গ্রহণ।

দেউন্দি চা বাগানের প্রতীক থিয়েটার সভাপতি সুনীল বিশ্বাস জানান, ১৮৫৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সে সময় বৃহত্তর সিলেটে চা বাগান তৈরির জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। ব্রিটিশ সরকার চা শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এদেশে এনে স্বল্প মজুরির মাধ্যমে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের কাজ করিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানেও অল্প বেতনে চা শ্রমিকরা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শতপ্রতিকূলতার মধ্যে চা শ্রমিক সন্তানরা আজ লেখাপড়া করছে।’

তিনি বাগানে বাগানে হাইস্কুল ও কলেজ নির্মাণ করে দেওয়ার দাবী জানান।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে চা-শ্রমিকরা তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ করে। কিন্তু দেশে এখনও চা শ্রমিকরা ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। চা শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেনি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য চাহিদা এখনও পূরণ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে চা শ্রমিকদের চুক্তি নবায়ন, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা, রেশন হিসাবে সাপ্তাহিক ৫ কেজি চালসহ ৭ দফা দাবি মানতে হবে। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের চাকরি ক্ষেত্রে কোটা দিতে হবে। শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে।’

 

রাইজিংবিডি/ হবিগঞ্জ/৪ জুলাই ২০১৯/মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়