ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সিলেটে ইংরেজি ভীতি কাটছে

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ১৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিলেটে ইংরেজি ভীতি কাটছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেট শিক্ষা বোর্ডের এবারের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে পাসকৃতদের সংখ্যা সার্বিক ফলের চিত্র পাল্টে দিয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ৪ শতাংশ বেশি শিক্ষার্থী ইংরেজিতে পাস করেছে। এর প্রভাবে সার্বিক ফলাফলেরও উন্নতি হয়েছে।

এবারের সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা গত বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। গত বছর পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ। এ ছাড়া জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৯৪ জন শিক্ষার্থী, যা গত বছরের চেয়ে ২২১ বেশি। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮৭৩ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ৬৪৪ জন ছেলে এবং ৪৫০ জন মেয়ে।

শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইংরেজি ভীতি দূর হওয়াতে এ বিষয়ে পাসের হার কিছুটা বেড়েছে; যার প্রভাব সার্বিক ফলাফলে পড়েছে। তারা আরও জানান, পাসের হার এবং জিপিএ-৫ বাড়ার পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলে শিক্ষার গুণগত মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বুধবার দুপুরে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ। এ সময় তিনি সার্বিক ফলে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গত বছর ইংরেজিতে ৭০ দশমিক ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল, এ বছর এ বিষয়ে ৭৪ দশমিক ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এর ফলে সার্বিক ফলাফলেও বেশ প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বোর্ডের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ফলাফলে সবসময় এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকেন, কেননা মানবিকের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে দুর্বল থাকেন। যার প্রভাব পড়ে সার্বিক ফলে। তবে বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে ইংরেজি ও গণিত ভীতি কমে আসছে। যে কারণে ফলেও প্রভাব রাখছে।

গত পাঁচ বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা ছিল ১৩৫৬। ২০১৬ সালে পাসের হার কিছুটা কমে ৬৯ দশমিক ৫৯ শতাংশে নেমে আসে; এ বছর জিপিএ-৫ পায় ১৩৩০ জন।

তবে ২০১৭ সালে পাসের হার বেড়ে যায়। এ বছর পাসের হার ছিল ৭২ শতাংশ। কিন্তু জিপিএ-৫ কমে ৭০০ জনে দাঁড়ায়। পরের বছরে ফের পাসের হার কমে গেলেও জিপিএ-৫ কিছুটা বেড়েছিল। এ বছর পাসের হার ছিল ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পায় ৮৭৩ জন। আর সবশেষ বুধবার প্রকাশিত এ বছরের ফলে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ উভয়ই বেড়ে যায়।

পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে উঠানামার বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কবির আহমদ বলেন, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে গিয়ে প্রশ্নপত্র কঠিন করা হচ্ছে। তাছাড়া খাতা মূল্যায়নেও স্ট্যান্ডার্ট বজায় রাখা হয়। এর প্রভাব পড়ছে ফলে। এতে শিক্ষার মানও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ বছর সামান্য পয়েন্টের কারণে অনেকেই জিপিএ-৫ পাননি, না হলে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা আরও বাড়ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে : বিভাগভিত্তিক ফলাফলে সব দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ। এরপর বাণিজ্য বিভাগ। আর সবশেষ স্থানে রয়েছে মানবিক বিভাগ। তবে মানবিক বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১২ হাজার ৫৯৫ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ১১ হাজার ১৮৫ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৭৯৯ জন, মেয়ে ৫ হাজার ৩৮৬ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪৪ জন।

ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ১২ হাজার ২৪ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৮ হাজার ৭৮০ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ৪ হাজার ৮৫৬ জন, মেয়ে ৩ হাজার ৯২৪ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ০২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯ জন।

মানবিক বিভাগ থেকে ৫১ হাজার ৬৩২ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩১ হাজার ১৫৯ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ১১ হাজার ৮৩৫ জন, মেয়ে ১৯ হাজার ৩২৪৮ জন। পাসের হার ৬০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯১ জন।

এগিয়ে সিলেট, পিছিয়ে মৌলভীবাজার: এইচএসসি সার্বিক ফলাফলে সিলেট বোর্ডে এগিয়ে রয়েছে সিলেট। এ জেলায় পাসের হার ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৭২ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছেলে ৪৭৯ এবং মেয়ে ২৯৩।

দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হবিগঞ্জ: এ জেলায় পাসের ৬৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৭ জন। এদের মধ্যে ছেলে ৪৫ এবং মেয়ে ৪২। তৃতীয় স্থানে থাকা হাওর জনপদ সুনামগঞ্জের পাসের হার ৬৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ জন। এদের মধ্যে ছেলে ১০ এবং মেয়ে ১৮ জন।

এ ছাড়া সবশেষ অবস্থানে থাকা চায়ের দেশ মৌলভীবাজারের পাসের হার ৬০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ জেলা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০৭ জন। এদের মধ্যে ছেলে ১১০ জন এবং মেয়ে ৯৭ জন।

সিলেট বোর্ডের অধিনে ২৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৭৬ হাজার ২৫১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫১ হাজার ১২৪ জন। এদের মধ্যে ছেলে ২২ হাজার ৪৯০ জন ও মেয়ে শিক্ষার্থী ২৮ হাজার ৬৩৪ জন। শতভাগ পাসকৃত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭। তবে শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান নেই।


রাইজিংবিডি/সিলেট/১৭ জুলাই ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়