ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে কারণে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না মিন্নি

রুদ্র রুহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ১৮ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে কারণে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন না মিন্নি

বরগুনা সংবাদদাতা : রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার তার স্ত্রী মিন্নিকে কোনো আইনজীবী আইনি সহায়তা দিচ্ছেন না।

মিন্নির বাবার অভিযোগ, কয়েকজন আইনজীবীর কাছে আইনি সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ তাতে সম্মত হননি।

এই সহায়তা না দেয়ার পেছনে বরগুনা-১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের নির্দেশনা ছিল, মিন্নির পরিবার এমন অভিযোগ তুলেছে। তবে তা অস্বীকার করেছেন সাংসদপুত্র।

এর আগে রিফাত হত্যার পরের দিন ফেসবুকে আসামীদের আইনী সহায়তা না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। আর মিন্নিকে আইনের আওতায় আনতে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ ১৩ জুলাই রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর ১৪ জুলাই সর্বস্তরের জনগণের ব্যনারে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। ওই মানববন্ধনে অ্যডভোকেট সুনাম দেবনাথও বক্তব্য রাখেন।

১৬ জুলাই মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয়া হয়। এ সময় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর কয়েকজন আইনজীবীর কাছে মেয়ের জন্য আইনী সহায়তা চান। কিন্ত কেউ সম্মত হননি।

মোজাম্মেল বলেন, কয়েকজন আইনজীবীর দ্বারস্থ হয়েও আমি সারা পাইনি। তারা আমায় বলেছেন, সমিতি থেকে আমাদের ওপর চাপ আছে, আমরা তোমার মেয়ের পক্ষে দাড়াতে পারব না। অনেক অনুরোধের পর অ্যডভোকেট জিয়াউদ্দীন, গোলাম সরওয়ার নাসির ও মোস্তফা কাদের সম্মত হলেও সেদিন আদালতে তারা অনুপস্থিত ছিলেন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরা আইনজীবীদের প্রভাবিত করায় করায় কেউ আমার মেয়েকে আইনী সহায়তা দেয়নি।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দীন বলেন, মিন্নির বাবা আমার কাছে আইনী সহায়তা চেয়েছিলেন। আমি তাতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে না দেয়ায় সহায়তা করতে পারিনি। কেউ নিষেধ করেছিল কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতি থেকে আমরা এরকম কোনো নির্দেশনা পাইনি।

বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহাবুবুল বারি আসলাম বলেন, আমাদের এখানে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আইনি সহায়তা পাওয়া একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার, কোনো আইজীবী নিয়োগ না করেও লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী আইনী সহায়তা পেতে পারে। তদন্তাধীন মামলায় অনেক ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করা সম্ভব হয় না, সে ক্ষেত্রে কোর্ট তাকে পরীক্ষা করে নেয়।

তিনি আরো বলেন, মিন্নির পক্ষে তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কোনো আইনি সহায়তা চেয়েছিলেন কি না আমার জানা নেই। যদি কেউ তাকে আশ্বাস দিয়ে পরে অনুপস্থিত থাকে এমন অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন রিফাত হত্যাকান্ডের পর ২৭ মার্চ বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যডভোকেট সুনাম দেবনাথ ফেসবুকে রিফাত হত্যায় জড়িতদের আইনী সহায়তা না দিতে অনুরোধ করে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্টে প্রভাবিত হয়ে কোনো আইনজীবী মিন্নিকে আইনী সহায়তা দেননি, সচেতন নাগরিক ও মিন্নির পরিবারের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনাম দেবনাথ বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস পোস্ট করার সময় মিন্নি মামলার এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন। আমি ঘটনায় জড়িতদের আইনী সহায়তা না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তার মানে এই না যে কেউ আসামীদের সহায়তা দিতে পারবেন না বা বাধ্যবাধকতা ছিল। আমি আইনজীবী সমিতির কোনো পোস্ট হোল্ড করিনা যে আমি নির্দেশ দেবো। এটি আমার বিরুদ্ধে এক প্রকার রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুনা।’

**


রাইজিংবিডি/বরগুনা/১৮ জুলাই ২০১৯/রুদ্র রুহান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়