ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৯ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

বাগেরহাট সংবাদদাতা : নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের নিকট থেকে ঘুষ নিয়ে বদলি করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বদলীকৃত শিক্ষকদের পুনরায় স্ব-কর্মস্থানে ফিরিয়ে আনতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আদেশ দিলেও গত দু’মাসে তা বাস্তবায়ন করেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি। অভিযোগ উঠেছে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ওইসব শিক্ষকদের বদলি করেছেন তিনি। এবিষয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষক ও অভিবাবকদের মধ্যে।

সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি নির্দেশিকা ২০১৯ অনুযায়ী যেসকল বিদ্যালয়ে ৪ জন বা তার কম সংখ্যক শিক্ষক আছেন সেসব বিদ্যালয় থেকে প্রতিস্থাপন না করে সাধারণভাবে শিক্ষক বদলি করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, উপজেলার ১৩৩ নম্বর ধানসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক ছিল। সেখান থেকে মাহাফুজা আক্তারকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করেন। ২১৫ নম্বর সন্নাসী বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে চম্পারানী হালদারকে অন্যত্র বদলি করেন।

শুধু এ দুটি বিদ্যালয়ের নয় উপজেলার ১০টির অধিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিনি এভাবেই বদলি করেছেন বলে জানাগেছে। সংশ্লিষ্ট দু-একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর শিক্ষকদের বদলি না করার আবেদনও করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ৭ মে  জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন বদলিকৃত শিক্ষকদের বদলি আদেশ বাতিল করে মূল বিদ্যালয়ে সংযুক্তিকরণের আদেশ দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দিকে। দুই মাস অতিবাহিত হলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি বিষয়টি কর্ণপাত না করে তার নিজের নিয়ম বহির্ভূত আদেশ বহাল রেখেছেন। যার ফলে ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

২১৫ নম্বর সন্নাসী বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তফা বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মাত্র ৪ জন শিক্ষক ছিল। সেখান থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি একজন শিক্ষককে তার পছন্দের জায়গায় বদলি করেন। নিয়ম বহির্ভূত বদলির বিষয়টি আমি জেলা শিক্ষকা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানালেও কোন ফল পাইনি। এছাড়া বদলি হওয়া সহকারী শিক্ষক চম্পারানী হাওলাদার বদলীকৃত কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে ছাড়পত্রও নেয়নি।

১৩৩ নম্বর ধানসাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ এনামুল হক বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়মবহির্ভূতভাবে আমার বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষককে বদলি করেছেন। বদলি করার সময়ে আমাকে বলেছেন আমার বিদ্যালয়ে আরেকজন শিক্ষককে দিবেন কিন্তু তিনি দেননি।

১৭১ নং পূর্ব আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা আক্তার বলেন, আমার বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক ছিল। সেখান থেকে মিতা হালদার নামে একজন সহকারী শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র দুই জন শিক্ষকে বিদ্যালয় চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের নিয়মের মধ্যেই বদলি করা হয়েছে। তারপরও জেলা কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তবে অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে গিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কবির উদ্দিন বলেন, বদলির বিষয়ে কোন কোন প্রকার অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। মোরেলগঞ্জে সহকারী শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যার প্রেক্ষিতে ওইসব শিক্ষকদের পূর্বের বিদ্যালয়ে ফিরে আসার জন্য বদলি আদেশ বাতিল করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার নন্দীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।


রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১৯ জুলাই, ২০১৯/আলী আকবর টুটুল/লাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়