ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের কারণে নানামুখী সংকটে কক্সবাজার

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ২৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গাদের কারণে নানামুখী সংকটে কক্সবাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি : রোহিঙ্গাদের অনীহায় প্রত্যাবাসন না হওয়ায় উৎকণ্ঠার পাশাপাশি ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। সচেতন মহলের দাবি, প্রত্যাবাসন না হওয়ার পেছনে দায়ী এনজিও সংস্থাগুলো। তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। 

দুই দফা চেষ্টার পরও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ায় ক্ষোভের পাশাপাশি হতাশা বিরাজ করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের এই জনপদে। বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয়রা জানান, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে গত দুই বছরে ১০ হাজার একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধ-কোটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ২০ হেক্টর কৃষি জমি ছেড়ে দিতে হয়েছে। 

এ ছাড়া লক্ষাধিক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বেহাল অবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থার। নতুন নতুন রোগ ছড়াচ্ছে। এই অবস্থায় দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ায় কক্সবাজার জনপদে সংকট বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উখিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও উখিয়া কলেজের প্রভাষক তহিদুল আলম তহিদ বলেন, এবার তারা আশাবাদী ছিলেন যে রোহিঙ্গারা ফিরে যাবে। কিন্তু না যাওয়ায় তারা হতাশ।

কুতুপালং এলাকার মুদি দোকানদার জসিম উদ্দীন, উখিয়া সদরের চা স্টল মালিক দিল মোহাম্মদ বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বক্তব্যে স্থানীয় লোকজন আশাবাদী হয়। কিন্তু তাদের কথা যদি অর্থহীন হয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব ও উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমি প্রথম থেকে বলে আসছি, এনজিওগুলো নিয়ন্ত্রণ করা না হলে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিনতর হয়ে উঠবে।’’ অপহরণ, গুম, খুন, ধর্ষণসহ গুরুতর অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের ৩৮১টি মামলা হয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘মিয়ানমারে ফেরত না যেতে রোহিঙ্গারা অযৌক্তিক দাবি তুলে ধরছেন। এ সব দাবি রোহিঙ্গাদের জানা ছিল না। কিছু দাতা সংস্থা, এনজিও ও স্থানীয় কুচক্রি মহল তাদের এ সব শিখিয়ে দিচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গা ও এনজিও নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আগামীতে আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়বে।’’

ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, মিয়ানমারের ছাড়পত্র পাওয়া রোহিঙ্গাদের মতামত নেয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রত্যাবাসন না হওয়ার ব্যর্থতা বাংলাদেশে নয়। এর দায় মিয়ানমারকে নিতে হবে। কারণ মিয়ানমার এই সংকট তৈরি করেছে; ফলে এই সংকট নিরসনে তাদের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ শুধু মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে দেশটি থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই দুই উপজেলার ৫ লাখের বেশি স্থানীয় বাসিন্দা।


রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৩ আগস্ট ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়