ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ ছাত্রীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা : লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের (৪২) বিরুদ্ধে ৫ ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (২১ আগস্ট) ওই ছাত্রীদের অভিভাবকগণ অধ্যক্ষের নিকট এ  অভিযোগ করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অধ্যক্ষ অভিযোগটি প্রমাণিত হয়েছে বললেও অভিযুক্ত শিক্ষক তা অস্বীকার করছেন। তিনি বলছেন, এ অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) লিটন চন্দ্র সরকার ১৩ বছর ধরে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সামনেই একটি ভাড়া বাড়িতে দীর্ঘদিন নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান।

তার কাছে পড়তে আসা নবম শ্রেণির পাঁচ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়ার লোভ দেখান। এছাড়া পরীক্ষায় ফেল করানোরও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে যৌন নিপীড়ন করে আসছিলেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীরা বিষয়টি নিজ নিজ পরিবারকে জানায়।

পরে ঘটনার বিচার চেয়ে গত বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে টিটিসির অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহবুবুর রশিদ তালুকদারের কাছে লিটনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন ওই পাঁচ ছাত্রীর অভিভাবকেরা।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরের দিন প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ মো. মির্জা ফিরোজ হাসানকে প্রধান করে প্রতিষ্ঠানের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ইলেকট্রনিক্স মো. আরিফুর রহমান এবং শিক্ষক লাভলী ত্রিপুরাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রিপোর্টটি অধ্যক্ষের কাছে জমা দেন।

নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তিন শিক্ষার্থী। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

জানা গেছে, এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক শামীম হোসেন ও আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। সেসময় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তখন যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না বলে মনে করেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

এদিকে, অভিযোগ ওঠার পর থেকে ছুটিতে আছেন শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকার। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন তিনি। মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এটি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘দশম শ্রেণির ছাত্র সৌরভের সাথে নবম শ্রেণির ছাত্রী মিথির প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি জানার পর সৈকতকে তা থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। পাশাপাশি তাদেরকে প্রাইভেটে না আসার জন্যও বলেছিলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্র কয়েকজন ছাত্রীর অভিভাবককে দিয়ে অধ্যক্ষের কাছে যৌন নিপীড়নের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। যথাযথ তদন্ত না করে মিথ্যা রিপোর্ট দিলে পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করব।’

তদন্ত কমিটির প্রধান ও প্রতিষ্ঠানের উপাধ্যক্ষ মো. মির্জা ফিরোজ হাসান জানান, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রমাণ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক লিটন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন ওই পাঁচ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের সাথে একাধিকবার কথা বলে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মাহাবুবুর রশিদ তালুকদার বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। তবে অভিযোগের অন্য দুয়েকটি বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে মিল নেই। সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে চুড়ান্ত রিপোর্টটি সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হবে।’


রাইজিংবিডি/লক্ষ্মীপুর/২ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ফরহাদ হোসেন/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়